পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আলোচনা t 8 বাশির স্বর সৌন্দৰ্য-স্বরূপের হাতে সমস্ত জগৎই একটি বাশি। ইহার রন্ধে রন্ধে তিনি নিশ্বাস পূরিতেছেন ও ইহার রন্ধে রন্ধে নূতন নূতন সুর উঠিতেছে। মানুষের মন আর কি ঘরে থাকে? তাই সে ব্যাকুল হইয়া বাহির হইতে চায়। সৌন্দর্যই তাহার আহবান-গান। সৌন্দর্যই সেই দৈববাণী। কদম্ব ফুল তাহার বাশির স্বর, বসন্ত ঋতু তাহার বাঁশির স্বর, কোকিলের পঞ্চম তান তাহার বাঁশির স্বর। সে বঁাশির স্বর কী বলিতেছে! জ্ঞানদাস হাসিয়া বুঝাইলেন, সে কেবল বলিতেছে “রাধে, তুমি আমার”- আর কিছুই না। আমরা শুনিতেছি, সেই অসীম সৌন্দর্য অব্যক্ত কণ্ঠে আমাদেরই নাম ধরিয়া ডাকিতেছেন। তিনি বলিতেছেন- “তুমি আমার, তুমি আমার কাছে আইস!” এইজনা, আমাদের চারি দিকে যখন সৌন্দর্য বিকশিত হইয়া উঠে তখন আমরা যেন একজন-কাহার বিরহে কাতর হই, যেন একজন-কাহার সহিত মিলনের জন্য উৎসুক হই- সংসারে আর যাহারই প্রতি মন দিই, মনের পিপাসা যেন দূর হয় না। এইজনা সংসারে থাকিয়া আমরা যেন চিরবিরহে কাল কটাই। কানো একটি বাশির শব্দ আসিতেছে, মন উদাস হইয়া যাইতেছে, অথচ এ সংসারের অন্তঃপুর ছাড়িয়া বাহির হইতে পারি না। কে বাশি বাজাইয়া আমাদের মন হরণ করিল, তাহাকে দেখিতে পাই না; সংসারের ঘরে ঘরে তাহাকে খুজিয়া বেড়াই। অন্য যাহারই সহিত মিলন হউক-না কেন, সেই মিলনের মধ্যে একটি চিরস্থায়ী বিরহের ভাব প্ৰচ্ছন্ন থাকে। বিপরীত আবার এক-এক দিন বিপরীত দেখা যায়। জগৎ জগৎপতিকে বাশি বাজাইয়া ডাকে। তাহার বাশি লইয়া তাহাকে ডাকে।-- আজু কে গো মুরলী বাজায়! এ তো কভু নহে শ্যামরায়! ইহার গৌর বরণে করে আলো, চূড়াটি বাধিয়া কেবা দিল! ইহার বামে দেখি চিকণবরণী, नैील ठशलि केौव्ला8ि। বিবাহ জগতের সৌন্দর্য অসীম সৌন্দর্যকে ডাকিতেছে। তিনি পাশে আসিয়া অধিষ্ঠিত হইয়াছেন। জগতের সৌন্দর্যে তিনি যেন জগতের প্রেমে মুগ্ধ হইয়া বাধা পড়িয়াছেন। তাই আজ জগতের বিচিত্র গান, বিচিত্ৰ বৰ্ণ, বিচিত্ৰ গন্ধ, বিচিত্ৰ শোভার মধ্যে তাহাকে প্রতিষ্ঠিত দেখিতেছি। তাই আজ জগতের সৌন্দর্যের অভ্যন্তরে অনন্ত সৌন্দর্যের আকর দেখিতেছি। আমাদের হৃদয়ও যদি সুন্দর না হয়, তবে তিনি কি আমাদের হৃদয়ের মধ্যে আসিবেন ? অসীম ও সসীম ।এই সৌন্দর্যের মালা লইয়া মালা-বদল করিয়াছে। তিনি তাহার নিজের সৌন্দৰ্য ইহার গলায় পরাইয়াছেন, এ আবার সেই সৌন্দর্য লইয়া তাহার গলায় তুলিয়া দিতেছে। সৌন্দর্য স্বৰ্গমর্তের বিবাহবন্ধন। S 8