পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Եr:8 ববীন্দ্র-রচনাবলী তাহারই মতো। ইহাতে কেবল শরীর ও জীবনের কথাই আছে। “তুমি বাচিয়া থাকে, তুমি কাজ করে, তোমার জীবন পূর্ণতা প্রাপ্ত হউক, ও অবশেষে যথাসময়ে অতি ধীরক্রিমে তাহার অবসান হউক”— ইহাই কবির সমস্ত সম্ভাষণের মর্ম। কবি তাহার সম্ভানের মর্ত অংশকে সম্ভাষণ করিতেছেন, সুতরাং উপরি-উক্ত আশীর্বাচন মর্ত জীবনের প্রতি সর্বতোভাবে প্রয়োগ করা যাইতে পারে। যাহা হউক, এইখানেই সমস্ত শেষ হইয়া যায়- জীবন আরম্ভ হইল, জীবন শেষও হইল। তখন জীবনের সমাধিস্তম্ভের উপর কবি দাড়াইয়া দূর দূরান্তরে দৃষ্টি চালনা করিলেন; দেখিলেন জীবন শেষ হইল, তাহার সন্তান শেষ হইল, কিন্তু যে সূত্র বাহিয়া এই সন্তান আসিয়াছে সেই সূত্রের শেষ হইল না। তিনি এখন দেখিলেন অনন্ত পথের একজন পথিক, পথের মধ্যে অবস্থিত তাহার গহে পৃথিবীতলে অতিথি হইয়াছে। এই আতিথ্যজীবনকে সন্তান বলে, মনুষ্য বলে! আতিথ্য জীবন ফুরায়, সন্তানও ফুৱায়, মনুষ্যও ফুৱায়, কিন্তু পথিক ফুরায় না। প্রথমে তিনি সেই অতিথিকে সম্ভাষণ কবিলেন, এখন সেই মহাপাস্তকে সম্ভাষণ করিতেছেন। এখন পৃথিবীর অতিথিকে নহে, মহাকালের অতিথিকে সম্ভাষণ করিলেন। এখন তিনি দেখিতেছেন যে, এই পথিক সৌর জগতেরও জ্যেষ্ঠ ভ্ৰাতা। প্ৰথম সম্ভাষণে তিনি কোটি কোটি যুগ ও আবর্তমান, আলোকের নির্মাণশালার উল্লেখ কবিয়াছেন, অপরিবর্তনী পরিবর্তনের জগতে ক্ৰমোথানশীল জীবনের উল্লেখ করিয়াছেন এবং কহিয়াছেন With this last moon, this crescent- her dark orb Touch'd with earth's light -- thou comest অর্থাৎ মনুষোর জন্মও এইরূপ চন্দ্রকলার ন্যায়, তাহার একাংশ পৃথিবীর জীবন, পৃথিবীব বুদ্ধি পাইয়া আলোকিত হয় ; দ্বিতীয় ভাগে যাহাকে সম্ভাষণ করিতেছেন তাহার কারণ আলোচনা করিতে গিয়া কবি সময়ের সংখ্যা গণনা করেন নাই, নির্মাণের উপাদানের উল্লেখ করেন নাই ! এইবার তিনি কহিতেছেন Out of the deep, my child, out of the deep. From that great deep, before our world begins. Where on the Spirit of God moves as he willOut of the deep, my child, out of the deep. From that true world within the world we See, Whereof our world is but the bounding shoreOut of the deep. Spirit, out of the deep. With this ninth moon, that sends the hidden Sun Down yon dark Sea, thou comest, darling boy. এবার কবি যে সমুদ্রের কথা উল্লেখ করিয়াছেন, তাহা আলোকের সমুদ্র নহে, অতীত বা ভবিষ্যৎ কালের দিকে তাহার উপকূল নাই, তাহা তিন কাল মগ্ন করিয়া বিরাজ করিতেছে। জগতের আত্মাকে তিনি উল্লেখ করিতেছেন ; জগতের অস্তরস্থিত যথার্থ জগতের কথা বলিতেছেন। বাহ্যজগৎ সেই অন্তর্জগৎকে সীমাবদ্ধ করিয়া রাখিয়াছে মাত্ৰ । Out of the deep, Spirit, out of the deep, With this ninth moon, that sends the hidden Sun Down yon dark sea. thou comest, darling boy. সেই সমুদ্র হইতে তুমি আসিতেছ। জ্যোতির্ময় সূর্যকে সমুদ্রতলে বিসর্জন দিয়া ক্ষীণালোকে চন্দ্ৰ উদিত হইল। তাহার সঙ্গে সঙ্গে তুমিও উদিত হইলে, তুমিও মহাজ্যোতিকে বিসর্জন করিয়া আসিলে। পূর্বে যে মনুষ্যকে কবি সম্ভাষণ করিয়াছিলেন, সে অপরিস্ফুটতর অবস্থা হইতে পরিস্ফুটিতা প্রাপ্ত হইয়াছে, এবারে যে আত্মাকে সম্ভাষণ করিতেছেন সে পূৰ্ণ অবস্থা হইতে অপূর্ণতা প্রাপ্ত হইয়াছে।