পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sile , ტაა ’ সেটা শেষ হওয়া পর্যন্ত তাকে অপেক্ষা করতে হবে । ঠাকুরদা। যখন তিনি আহবান করেন তখন তিনি আর অপেক্ষা করেন না। কোশল । আমি তার আহবান স্বীকার করছি। এখনই যাব । বিদর্ভ। কাঞ্চীরাজ, অপেক্ষা করার কথাটা ভালো ঠেকছে না। আমি চললুম। কলিঙ্গ। আপনি প্রবীণ, আমরা আপনারই অনুসরণ করব । পাঞ্চাল । ওহে কাঞ্চীরাজ, পিছনে চেয়ে দেখো, তোমার রাজছত্ৰ ধুলায় লুটােচ্ছে ; তোমার ছত্রধর কখন পালিয়েছে জানতেও পার নি । কাঞ্চী । আচ্ছা, আমিও যাচ্ছি। রাজদূত ! কিন্তু সভায় নয়, রণক্ষেত্রে । ঠাকুরদা। রণক্ষেত্রেই আমার প্রভুর সঙ্গে আপনার পরিচয় হবে, সেও অতি উত্তম প্রশস্ত স্থান । বিরাট । ওহে, আমরা সকলে হয়তো কাল্পনিক ভয়ে ভঙ্গ দিচ্ছি- শেষকালে দেখছি। এক কাঞ্চীরাজেরই জিত হবে । পাঞ্চাল । তা হতে পারে । ফলটা প্ৰায় হাতের কাছে এসেছে, এখন ভীরুতা করে সেটা ফেলে যাওয়া ভালো হচ্ছে না । কলিঙ্গ। কান্ধীর সঙ্গে যোগ দেওয়াই শ্রেয়। ও যখন এতটা সাহস করছে তখন ও কি কিছু বিবেচনা না করেই করছে । >W。 সুদৰ্শনা ও সুরঙ্গমা সুদৰ্শন । যুদ্ধ তো শেষ হয়ে গেল। এখন আমার রাজা আসবেন কখন । সুরঙ্গমা । তা তো বলতে পারি নে— পথ চেয়ে বসে আছি। সুদৰ্শনা । সুরঙ্গমা, বুকের ভিতরটাতে আনন্দে এমন কঁপিছে যে, বেদনাবোধ হচ্ছে। লজ্জাতেও মরে যাচ্ছি— মুখ দেখাব কেমন করে !! . w সুরঙ্গমা। এবার একেবারে হার মেনে র্তার কাছে যাও, তা হলে আর লজ্জা থাকবে না । সুদৰ্শনা। স্বীকার তো করতেই হবে চিরদিনের মতো আমার হার হয়ে গেছে, কিন্তু এতদিন গর্ব। করে তঁর কাছে সকলের চেয়ে বেশি আদরের দাবি করে এসেছি কিনা— সেটা একেবারে ছেড়ে দিতে পারছি নে । সবাই যে বলত, আমার অনেক রূপ, অনেক গুণ ! সবাই যে বলত, আমার উপরে রাজার অনুগ্রহের অন্ত নেই! সেইজন্যেই তো সকলের সামনে আমার হৃদয় নত হতে এত লজ্জা বোধ করছে । সুরঙ্গমা । অভিমান না ঘুচালে তো লজ্জাও ঘুচিবে না । সুদৰ্শনা । তার কাছ থেকে আদর পাবার ইচ্ছা যে কিছুতে মন থেকে ঘুচিতে চায় না। সুরঙ্গমা। সব ঘুচাবে রানীমা ! কেবল একটি ইচ্ছা থাকবে, নিজেকে নিবেদন করবার ইচ্ছা । সুদৰ্শনা । সেই আঁধার ঘরের ইচ্ছা- দেখা নয়, শোনা নয়, চাওয়া নয়, কেবল গভীরের মধ্যে আপনাকে ছেড়ে দেওয়া ! সুরঙ্গমা, সেই আশীর্বাদ করা যেন— । সুরঙ্গমা। কী বল তুমি ! আমি আশীৰ্বাদ করব কিসের ! সুদৰ্শনা । সকলের কাছে নত হয়ে আমি আশীৰ্বাদ নেব। সবাই বলত, এত প্ৰসাদ রাজা আর কাউকে দেন নি । তাই শুনে হৃদয় এত শক্ত হয়েছে যে, আমার রাজাকেও আঘাত করতে পেরেছি। এত শক্ত হয়েছে যে, নুইতে লজ্জা করছে। এ লজ্জা কাটাতে হবে- সমস্ত পৃথিবীর কাছে নিচু হবার দিন আমার এসেছে। কিন্তু কই, রাজা এখনো কেন আমাকে নিতে আসছেন না। আরো কিসের জন্যে তিনি অপেক্ষা করছেন। সুরঙ্গমা। আমি তো বলেছি, আমার রাজা নিষ্ঠুর- বড়ো নিষ্ঠুর।