পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজা WSG পরানে দখিনবায়ু লাগিছেদ্বারে দ্বারে করা হানি মাগিছে । সৌরভাবিহবলা। রজনী চরণে ধরণীতলে জাগিছে । ওগো সুন্দর, বল্লভ, কান্ত, গভীর আহবান কারে ৷ তব ܬܬܝ 커제 সুদৰ্শনা ও সুরঙ্গমা সুদৰ্শনা । বেঁচেছি, বেঁচেছি সুরঙ্গমা ! হার মেনে তবে বেঁচেছি। ওরে বাস রে !! কী কঠিন অভিমান ! কিছুতেই গলতে চায় না। আমার রাজা কেন আমার কাছে আসতে যাবে, আমিই তার কাছে যাব, এই কথাটা কোনোমতেই মনকে বলতে পারছিলুম না । সমস্ত রাতটা সেই জানালায় পড়ে ধূলোয় লুটিয়ে কেঁদেছি, দক্ষিনে হাওয়া বুকের বেদনার মতো হুহু করে বয়েছে, আর কৃষ্ণচতুর্দশীর অন্ধকারে বউ-কথা-কও চার পহর রাত কেবলই ডেকেছে- সে যেন অন্ধকারের কান্না | সুরঙ্গমা । আহা, কালকের রাতটা মনে হয়েছিল যেন কিছুতেই আর পোহাতে চায় না । সুদৰ্শনা । কিন্তু বললে বিশ্বাস করবি নে, তারই মধ্যে বার বার আমার মনে হচ্ছিল, কোথায় তার বীণা বাজছিল। যে নিষ্ঠর তার কঠিন হাতে কি আমন মিনতির সুর বাজে । বাইরের লোক আমার অসম্মানটাই দেখে গেল, কিন্তু গোপন রাত্রের সেই সুরাটা কেবল আমার হৃদয় ছাড়া আর তো কেউ শুনল না । সে বীণা তুই কি শুনেছিলি সুরঙ্গমা ! না, সে আমার স্বপ্ন ? সুরঙ্গমা । সেই বীণা শুনব বলেই তো তোমার কাছে কাছে আছি। অভিমান-গলানো সুর বাজবে জেনেই কান পেতে পড়ে ছিলুম। সুদৰ্শন । তার পণটাই রইল, পথে বের করলে তবে ছাড়লে । মিলন হলে এই কথাটাই তাকে বলব যে, আমিই এসেছি, তোমার আসার অপেক্ষা করি নি । বলব, চোখের জল ফেলতে ফেলতে এসেছি, কঠিন পথ ভাঙতে ভাঙতে এসেছি। এ গর্ব আমি ছাড়ব না । সুরঙ্গমা। কিন্তু সে গর্বও তোমার টিকবে না। সে যে তোমারও আগে এসেছিল, নইলে তোমাকে বের করে কার সাধ্য । সুদৰ্শন । তা হয়তো এসেছিল। আভাস পেয়েছিলুম, কিন্তু বিশ্বাস করতে পারি নি। যতক্ষণ অভিমান করে বসে ছিলুম ততক্ষণ মনে হয়েছিল, সেও আমাকে ছেড়ে গিয়েছে। অভিমান ভাসিয়ে দিয়ে যখনই রাস্তায় বেরিয়ে পড়লুম। তখনই মনে হল— সেও বেরিয়ে এসেছে, রাস্তা থেকেই তাকে পাওয়া শুরু করেছি। এখন আমার মনে আর কোনাে ভাবনা নেই। তার জন্যে এত যে দুঃখ, এই দুঃখই আমাকে তার সঙ্গ দিচ্ছে। এত কষ্টের রাস্তা আমার পায়ের তলায় যেন সুরে সুরে বেজে উঠছে। এ যেন আমার বীণা, আমার দুঃখের বীণা- এরই বেদনার গানে তিনি এই কঠিন পাথরে এই শুকনো ধুলোয় আপনি বেরিয়ে এসেছেন, আমার হাত ধরেছেন- সেই আমার অন্ধকার ঘরের মধ্যে যেমন করে হাত ধরতেন- হঠাৎ চমকে উঠে। গায়ে কাটা দিয়ে উঠত- এও সেইরকম । কে বললে তিনি নেই! সুরঙ্গমা, তুই কি বুঝতে পারছিস নে তিনি লুকিয়ে এসেছেন ? সুরঙ্গমার গান অন্ধকারের মাঝে আমায় ধরেছ দুই হাতে । কখন তুমি এলে, হে নাথ, মৃদুচরণপাতে । (ISS