পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V রবীন্দ্র-রচনাবলী “যাতে আমার দ্বারা তোমার সংশোধন হয়, আর তোমার দ্বারা সংশোধন হয় ওঁর নতুন ব্যবসায়ের নতুন আমদানির ।” “তা আমার উপরে তোমার সংশোধনের কাজটা শুরু করে- দেখি দাদার চেয়ে তোমার হাতিযশ उाछ कि ना ।” নবীন কাতর হয়ে বললে, “দাদার উড়ে চাকরিটা ওঁর দামি ডিনার-সেটের একটা পিরিচ ভেঙেছিল, তার জরিমানার প্রধান অংশ আমাকেই দিতে হয়েছে, জান তো- কেননা জিনিসগুলো আমারই জিন্মে। কিন্তু এবারে যে-জিনিসটা ঘরে এল সেও কি আমারই জিন্মে ? তবু জরিমানাটা তোমাতে-আমাতেই বীটােয়ারা করে দিতে হবে। অতএব যা করতে হয় করো, আমাকে আর দুঃখ দিয়ে না মেজেবিউ ।” “জরিমানা বলতে কী বোঝায় শুনি ।” “রজবপুরে চালান করে দেবেন। মাঝে মাঝে তো সেইরকম ভয় দেখান ।” “ভয় পাও বলেই ভয় দেখান। একবার তো পাঠিয়েছিলেন, আবার রেলভাড়া দিয়ে ফিরিয়ে আনতে হয় নি ? তোমার দাদা রেগেও হিসেবে ভুল করেন না । জানেন আমাকে ঘরকন্না থেকে বরখাস্ত করলে সেটা একটুও সস্তা হবে না। আর যদি কোথাও এক পয়সাও লোকসান হয় সে-ঠকা 32 नश्व ना |” “বুঝলুম, এখন কী করতে হবে বলো-না।” “তোমার দাদাকে বোলো, যতবড়ো রাজাই হােন-না, মাইনে করে লোক রেখে রানীর মান ভাঙাতে পারবেন না- মানের বোঝা নিজেকেই মাথায় করে নামাতে হবে । বাসরঘরের ব্যাপারে মুটে ডাকতে বারণ কোরো ।” “মেজেবিউ, উপদেশ তাকে দেবার জন্যে আমার দরকার হবে না, দুদিন বাদে নিজেরই ছশ হবে। ইতিমধ্যে দূতীগিরির কাজটা করো, ফল হােক বা না হােক। দেখাতে পারব নিমক খেয়ে সেটা চুপচাপ झूछभ कद्रछि (न ।।” মোতির মা কুমুকে গেল খুঁজতে । জানত সকালবেলা তাকে পাওয়া যাবে ছাদের উপরে, । উচু প্রাচীর-দেওয়া ছাদ, তার মাঝে মাঝে ঘুলঘুলি । এলোমেলো গোটকতক টব, তাতে গাছ নেই। এক কোণে লোহার জাল-দেওয়া একটা বড়ো ভাঙা চৌকো খাচা ; তার কাঠের তলাটা প্ৰায় সবটা জীৰ্ণ । কোনো-এক সময় খরগোশ কিংবা পায়রা এতে রাখা হত, এখন আচার-আমসত্ত্ব প্রভৃতিকে কাকের চৌর্যবৃত্তি থেকে বঁচিয়ে রোদদূরে দেবার কাজে লাগে। এই ছাদ থেকে মাথার উপরকার আকাশ দেখতে পাওয়া যায়, দিগন্ত দেখা যায় না । পশ্চিম-আকাশে একটা লোহার কারখানার চিমনি । যে দুদিন কুমু এই ছাদে বসেছে। ঐ চিমনি থেকে উৎসারিত ধূমকুণ্ডলটাই তার একমাত্র দেখবার জিনিস ছিল- সমস্ত আকাশের মধ্যে ঐ কেবল একটি যেন সজীব পদার্থ, কোন একটা আবেগে ফুলে ফুলে পাক দিয়ে দিয়ে উঠছে। - পিলসুজ প্রভৃতি মাজা সেরে অন্ধকার থাকতেই স্নান করে পূব দিকে মুখ করে কুমু ছাদে এসে বসেছে। ভিজে চুল পিঠের উপর এলিয়ে দেওয়া- সাজসজ্জার কোনো আভাসমােত্র নেই। একখানি মোটা সুতোর সাদা শাড়ি, সরু। কালো পাড়, আর শীতনিবারণের জন্য একটা মোটা এণ্ডি-রেশমের Gफूनों । আপন হৃদয়ের ক্ষুধা মেটাতে বসেছিল। তার যত পূজা, যত ব্ৰত, যত পুরাণকাহিনী, সমস্তই এই কল্পমূর্তিকে সজীব করে রেখেছিল। সে ছিল অভিসারিণী তার মানস-বৃন্দাবনে- ভোরে উঠে সে গান হামারে তুমারে সম্প্ৰীতি লগী হৈ শুন মনমােহন পারে