পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

w9ዒኳr द्मी-द्रष्नांबळेी আলাপ আর এগোল না। কুমুর মনের মধ্যে তখন একটা নীরব জাপের ধারা চলছে পিতেব পুত্ৰস্য সখেব সখুঃ প্রিয়ঃ প্রিয়ায়াৰ্হসি দেব সোঢ়ম। তরকারি-কেটা ভাড়ার-দেওয়ার কাজ শেষ হয়ে গেল, মেয়েরা স্নানের জন্যে অন্দরের উঠোনে কলতলায় গিয়ে কলরব তুললে । মোতির মাকে একলা পেয়ে কুমু বললে, “দাদার কাছ থেকে টেলিগ্রাফের জবাব পেয়েছি।” মোতির মা কিছু আশ্চর্য হয়ে বললে, “কখন পেলে ?” কুমু বললে, “কাল রাত্তিরে।” “রাত্তিরে !” * “হা, অনেক রাত । তখন উনি নিজে এসে আমার হাতে দিলেন ।” মোতির মা বললে, “তা হলে চিঠিখানাও নিশ্চয় পেয়েছি।” “কোন চিঠি ?” “তোমার দাদার চিঠি ।” ব্যস্ত হয়ে বলে উঠল, “না, আমি তো পাই নি । দাদার চিঠি এসেছে নকি ?” মোতির মা চুপ করে রইল। কুমু তার হাত চেপে ধরে উৎকণ্ঠিত হয়ে বললে, “কোথায় দাদার চিঠি, আমাকে এনে দাও-না।” মোতির মাচুপি চুপি বললে, “সে চিঠি আনতে পারব না, সে বড়ো ঠাকুরের বাইরের ঘরের দেরাজে আছে ।” । “আমার চিঠি কেন আমাকে এনে দিতে পারবে না ?” “র্তর দেরাজ খুলেছি জানতে পারলে প্ৰলয়-কাণ্ড হবে।” কুমু অস্থির হয়ে বললে, “দাদার চিঠি তা হলে আমি পড়তে পাব না ?” । “বড়োঁঠাকুর যখন আপিসে যাবেন তখন সে চিঠি পড়ে আবার দেরাজে রেখে দিয়ে।” রাগ তো ঠেকিয়ে রাখা যায় না। মনটা গরম হয়ে উঠল। বললে, “নিজের চিঠিও কি চুরি করে পড়তে হবে ?” “কোনটা নিজের কোনটা নিজের নয়, সে বিচার এ বাড়ির কর্তা করে দেন।” কুমু তার পণ ভুলতে যাচ্ছিল, এমন সময় হঠাৎ মনের ভিতরটা তর্জনী তুলে বলে উঠল, “রাগ কোরো না।” ক্ষণকালের জন্যে কুমু চোখ বুজলে । নিঃশব্দ বাক্যে ঠোঁট দুটাে কেঁপে উঠল, “প্ৰিয়ঃ প্রিয়ায়াৰ্হসি। কুমু বললে, “আমার চিঠি কেউ যদি চুরি করেন করুন, আমি তাই বলে চুরি করে চুরির শোধ দিতে be G. " বলেই কুমুর তখনই মনে হল কথাটা কঠিন হয়েছে। বুঝতে পারলে, ভিতরে যে রাগ আছে নিজের অগোচরে সে আপনাকে প্রকাশ করে। তাকে উন্মুলিত করতে হবে। তার সঙ্গে লড়াই করতে চাইলে সব সময় তো তার নাগাল পাওয়া যায় না। গুহার মধ্যে সে দুৰ্গ তৈরি করে থাকে, বাইরে থেকে সেখানে প্রবেশের পথ কই ? তাই এমন একটি প্রেমের বন্যা নামিয়ে আনা চাই যাতে রুদ্ধকে মুক্ত করে, বদ্ধকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। অনেক ভুলিয়ে দেবার ওর একটি উপায় হাতে ছিল, সে হচ্ছে সংগীত । কিন্তু এ বাড়িতে এসরাজ বাজাতে ওর লজা করে। সঙ্গে এসরাজ আনেও নি। কুমুগান গাইতে পারে, কিন্তু কুমুর গলায় তেমন জোর নেই। গানের ধারায় আকাশ ভাসিয়ে দিতে ইচ্ছা করল, অভিমানের গান। যে গানে ও বলতে পারে, “আমি তো তোমারই ডাকে এসেছি, তবে তুমি কেন লুকোলে ? আমি তো নিমেষের জন্যে দ্বিধা করি নি, তবে আজ আমাকে কেন এমন সংশয়ের মধ্যে ফেললে ?” এই সব কথা খাব গলা ছেড়ে গান গেয়ে ওর বলতে ইচ্ছে করে । মনে হয়, তা হলেই সুরে এর উত্তর পাবে