পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

No & রবীন্দ্র-রচনাবলী কুমু তার গালে চুমু খেয়ে বললে, “মানিক এনেছ গোপাল ৷” “আমার পকেটে আছে।” “আচ্ছ। তবে বের করো।” “তুমি বলতে পারলে না।” “আমার বুদ্ধি নেই, যা চোখে দেখি তাও বুঝতে পারি নে, যা না দেখি তা আরো ভুল বুঝি।” তখন হাবলু। খুব আস্তে আস্তে পকেট থেকে ব্ৰাউন কাগজের একটা পুঁটুলি বের করে কুমুর কোলের উপর রেখে দৌড়ে পালাবার উপক্রম করলে । “না, তোমাকে পালাতে দেব না ।” h. পুঁটুলিটা হাত দিয়ে চাপা দিয়ে ব্যস্ত হয়ে হাবলু বললে, “তা হলে এখন দেখো না ।” “না ভয় নেই, তুমি চলে গেলে তখন খুলিব ।” “কী জানি, হয়তো দেখে থাকিব, কিন্তু চিনতে সময় লাগে।” “একতলায় উঠোনের পাশে কয়লার ঘরে সন্ধের সময় চামচিকের পিঠে চড়ে সে আসে।” “চামচিকের পিঠে চড়ে সে আসে !” “ইচ্ছে করলেই সে খুব ছোট্টো হতে পারে, চোখে প্ৰায় দেখাই যায় না ।” “সেই মন্তরটা তার কাছে শিখে নিতে হবে তো ।” “আমি যদি পােলাবার জন্যে কয়লার ঘরে ঢুকি তবুও যে আমাকে দেখতে পাওয়া যায়।” হাবলু। এ কথাটার কোনো মানে বুঝতে পারলে না। বললে, “কয়লার মধ্যে সিঁদুরের কীেটাে লুকিয়ে রেখেছে। সেই সিঁদুর কোথা থেকে এনেছে জান ?”

  • বোধ হয় জানি ।” “আচ্ছা, বলে দেখি ।” “ভোরবেলাকার মেঘের ভিতর থেকে ৷” হাবলু থমকে গেল। তাকে ভাবিয়ে দিলে। বিশেষ-সংবাদদাতা তাকে সাগরপারের দৈত্যপুরীর কথা বলেছিল। কিন্তু জ্যাঠাইমার কথাটা মনে হল বিশ্বাসযোগ্য, তাই কোনাে বিরুদ্ধ তর্ক না তুলে বললে, “যে মেয়ে সেই কীেটাে খুঁজে বের করে সিঁদুরটিপ কপালে পরবে সে হবে রাজরানী।”

“সর্বনাশ ! কোনো হতভাগিনী খবর পেয়েছে নাকি ?” “সেজোপিসিমার মেয়ে খুন্দি জানে। বুড়ি নিয়ে ছয়ু যখন সকালে কয়লা বের করতে যায়, রোজ খুন্দি সেইসঙ্গে যায়- ও একটুও ভয় করে না।” “ও যে ছেলেমানুষ, তাই রাজরানী হতেও ভয় নেই।” বাইরে ঠাণ্ডা। উত্তরে হাওয়া দিচ্ছিল তাই মোতিকে নিয়ে কুমু ঘরে গেল ; সেখানে সোফায় বসে ওকে কোলে তুলে নিলে। পাশের তেপাইয়ে ছােটাে রুপাের থালিতে ছিল শীতকালের ফুল— গীদা, কুন্দ, দােপাটি, জবা। প্রতিদিনের জোগানমত এই ফুলই মালীর তােলা। কুমু ছাদের কোণে বসে সূর্যোদয়ের দিকে মুখ করে দেবতাকে উৎসর্গ করে দেবে বলে এরা অপেক্ষা করে আছে। আজ তার সোিড় ফুল থালাযুদ্ধ নিয়ে সে হাবলুর কাছে ধরল। বললে, “নেৰে ফুল ?” “ই, নেব ।” “পুজো-পুজো খেলিব ।” কুমুর কোমরে একটা সিস্কের রুমাল গীেজা ছিল, সেইটােতে ফুলগুলি বেঁধে দিয়ে ওকে চুমাে খেয়ে বললে, “এই নাও।” মনে মনে ভাবলে, “আমারও পুজো-পুজো খেলা হল।' বললে, “গোপাল, এর । মধ্যে কোন ফুল তোমার সব চেয়ে ভালো লাগে, বিলো তো ?”