পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 Oo রবীন্দ্র-রচনাবলী দরকার ? তোমাদের বিপ্রদাসবাবুর মোক্তারি করতে এসেছ বুঝি ?” নবীন বললে, “না দাদা, সে ভয় নেই। ওদের লোকটা এমন তাড়া খেয়ে গেছে যে তুমি নিজেও যদি ডেকে পাঠাও। তবু সে এ-বাড়িমুখো হবে না।” এ কথাটাও মধুসূদনের সহ্য হল না । বলে উঠল, “কড়ে আঙুলটা নাড়লেই পায়ের কাছে এসে পড়তে হবে । লোকটা এসেছিল কী করতে ?” “তোমাকে খবর দিতে যে বিপ্রদাসবাবুর কলকাতা আসা দুদিন পিছিয়ে গেল। শরীর আর-একটু সেরে তবে আসবেন ।” “আচ্ছা আচ্ছা, সেজন্যে আমার তাড়া নেই।” নবীন বললে, “দাদা, কাল সকালে ঘণ্টা দুয়ের জন্যে ছুটি চাই।” “কেন ?” “শুনলে তুমি রাগ করবে।” “না শুনলে আরো রাগ করব ।” “কুম্ভকোনাম থেকে এক জ্যোতিষী এসেছেন তাকে দিয়ে একবার ভাগ্যপরীক্ষা করাতে চাই।” মধুসূদনের বুকটা ধড়াস করে উঠল, ইচ্ছে করল এখনই ছুটে তার কাছে যায়। মুখে তর্জন করে বললে, “তুমি বিশ্বাস করা ?” “সহজ অবস্থায় করি নে, ভয় লাগলেই করি ।” “ভয়টা কিসের শুনি ?” নবীন কোনো জবাব না করে মাথা চুলকোতে লাগল। “ভয়টা কাকে বলোই-না ।” “এ সংসারে তোমাকে ছাড়া আর কাউকে ভয় করি নে। কিছুদিন থেকে তোমার ভাবগতিক দেখে মন সুস্থির হচ্ছে না।” সংসারের লোক মধুসূদনকে বাঘের মতো ভয় করে। এইটােতে তার ভারি তৃপ্তি । নবীনের মুখের দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে গভীরভাবে সে গুড়গুড়ি টানতে টানতে নিজের মাহাত্ম্য অনুভব করতে লাগল । নবীন বললে, “তাই একবার স্পষ্ট করে জানতে চাই গ্ৰহ কী করতে চান আমাকে নিয়ে । আর তিনি ছুটিই বা দেবেন কোন নাগাত।” 螺 “তোমার মতো নাস্তিক, তুমি কিছু বিশ্বাস কর না, শেষকালে-” “দেবতার পরে বিশ্বাস থাকলে গ্রহকে বিশ্বাস করতুম না দাদা। ডাক্তারকে যে মানে না হাতুড়েকে भान(5 ७ांद बी की ।” নিজের গ্রহকে যাচাই করে নেবার জন্যে মধুসূদনের যে পরিমাণ আগ্রহ হল, সেই পরিমাণ বঁাজের সঙ্গে বললে, “লেখাপড়া শিখে বঁাদর, তোমার এই বিদ্যে ? যে যা বলে তাই বিশ্বাস করা ?” “লোকটার কাছে যে ভৃগুসংহিতা রয়েছে— যেখানে যে কেউ যে কোনো কালে জন্মেছে, জন্মাবে, সকলের কুষ্ঠি একেবারে তৈরি, সংস্কৃত ভাষায় লেখা, এর উপর তো আর কথা চলে না। হাতে হাতে পরীক্ষা করে দেখে নাও ।” “বোকা ভুলিয়ে যারা খায়, বিধাতা তাদের পেট ভরাবার জন্যে যথেষ্ট পরিমাণে তোমাদের মতো বোকাও সৃষ্টি করে রাখেন।” “আবার সেই বােকাদের বঁাচাবার জন্যে তোমাদের মতো বুদ্ধিমােনও সৃষ্টি করেন। যে মারে তার উপরে তার যেমন দয়া, যাকে মারে তার উপরেও তেমনি। ভৃগুসংহিতার উপরে তোমার তীক্ষ বুদ্ধি চালিয়ে দেখােই-না।” । “তোমার যেরকম জোর অবিশ্বাস দাদা, ওতে গণনায় গোল হয়ে যেতে পারে। সংসারে দেখা যায়