পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

GRIRT? 8○○ পাঠিয়ে দিত। সবাই জানে, ঠিক মধুসূদনের রুচির মতো পান শ্যামাসুন্দরীই সাজতে পারে ; এইটে জানার মধ্যে আরো কিছু-একটু জানার ইশারা ছিল। সেই জোরে পথের মধ্যে শ্যামা মধুর সামনে বাটা খুলে ধরে বললে, “ঠাকুরপো, তোমার পান সাজা আছে, নিয়ে যাও ” আগে হলে এই উপলক্ষে দুটা-একটা কথা হত, আর সেই কথায় অল্প একটু মধুর রসের আমেজও লাগত। আজ কী হল কে জানে, পাছে দূর থেকেও শ্যামার ছোয়াচ লাগে সেইটে এড়িয়ে পান না নিয়ে মধুসূদন দ্রুত চলে গেল । শ্যামার বড়ো বড়ো চোখদুটাে অভিমানে জ্বলে উঠল, তার পরে ভেসে গেল অশ্রুজালের মোটা মোটা ফোটায়। অন্তর্যামী জানেন শ্যামাসুন্দরী মধুসূদনকে ভালোবাসে। মধুসূদন ঘরে ঢুকতেই নবীন কুমুর পায়ের ধুলো নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললে, “গুরুর কথা মনে রইল, খোজ করে দেখব ।” দাদাকে বললে, “বউরানী গুরুর কাছ থেকে শাস্ত্র-উপদেশ শুনতে চান । আমাদের গুরুঠাকুর আছেন, কিন্তু-” মধুসূদন উত্তেজনার স্বরে বলে উঠল, “শাস্ত্র-উপদেশ ! আচ্ছা সে দেখব। এখন, তোমাকে কিছু कठ शत भी ।” নবীন চলে গেল। মধুসূদন আজ সমস্ত পথ মনে মনে আবৃত্তি করতে করতে এসেছিল, 'বড়োবউ, তুমি এসেছ আমার ঘর আলো হয়েছে।” এরকম ভাবের কথা বলবার অভ্যাস ওর একেবারেই নেই। তাই ঠিক করেছিল, ঘরে ঢুকেই দ্বিধা না করে প্রথম ঝোকেই সে বলবে । কিন্তু নবীনকে দেখেই কথাটা গেল ঠেকে। তার উপরে এল শাস্ত্র-উপদেশের প্রসঙ্গ, ওর মুখ দিলে একেবারে বন্ধ করে। অন্তরে যে আয়োজনটা চলছিল, এই একটুখানি বাধাতেই নিরস্ত হয়ে গেল। তার পরে কুমুর মুখে দেখলে একটা ভয়ের ভাব, দেহমানের একটা সংকোচ । অন্যদিন হলে এটা চোখে পড়ত না । আজ ওর মনে যে একটা আলো জ্বলেছে তাতে দেখবার শক্তি হয়েছে প্রবল, কুমু সম্বন্ধে চিত্তের স্পৰ্শবোধ হয়েছে সূক্ষ্ম । আজকের দিনেও কুমুর মনে এই বিমুখতা, এটা ওর কাছে নিষ্ঠুর অবিচার বলে ঠেকল। তবু মনে মনে পণ করলে বিচলিত হবে না, কিন্তু যা সহজে হতে পারত। সে আর সহজ রইল না । একটু চুপ করে থেকে মধুসূদন বললে, “বড়োবাউ, চলে যেতে ইচ্ছে করছি ? একটুক্ষণ থাকবে नों ?” মধুসূদনের কথা আর তার গলার স্বর শুনে কুমু বিস্মিত । বললে, “না, যােব কেন ?” “তোমার জন্যে একটি জিনিস। এনেছি। খুলে দেখো।” বলে তার হাতে ছোটাে একটি সোনার কীেটো দিলে । কীেটাে খুলে কুমু দেখলে দাদার দেওয়া সেই নীলার আংটি। বুকের মধ্যে ধক করে উঠল, কী করবে ভেবে পেল না । “এই আংটি তোমায় পরিয়ে দিতে দেবে ?” কুমুহাত বাড়িয়ে দিলে। মধুসূদন কুমুর হাত কোলের উপর ধরে খুব আস্তে আস্তে আংটি পরাতে । লাগল। ইচ্ছে করেই সময় নিলে একটু বেশি। তার পরে হাতটি তুলে ধরে চুমো খেলে, বললে, “ভুল করেছিলুম তোমার হাতের আংটি খুলে নিয়ে । তোমার হাতে কোনো জহরতে কোনো দোষ নেই।” কুমুকে মারলে এর চেয়ে কম বিস্মিত হত । ছেলেমানুষের মতো কুমুর এই বিস্ময়ের ভাব দেখে মধুসূদনের লাগল ভালো। দানটা যে সামান্য নয় কুমুর মুখভাবে তা সুস্পষ্ট। কিন্তু মধুসূদন আরো কিছু হাতে রেখেছে, সেইটে প্রকাশ করলে ; বললে, “তোমাদের বাড়ির কালু মুখুজ্যে এসেছে, তাকে CONO be ?” 霍 কুমুর মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। বললে, “কালুদা !” “তাকে ডেকে দিই। তোমরা কথাবার্তা কও, ততক্ষণ আমি খেয়ে আসি গে।” । কৃতজ্ঞতায় কুমুর চোখ ছল ছল করে এল ।