পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Goo 8 Sv) মনটা শিরশির করে উঠল। সে বললে, “আমার ঠাকুরের নামে আর জোর পাচ্ছি নে। মন্ত্র আবৃত্তি করে যাই, মনটা মুখ ফিরিয়ে থাকে, কিছুতে সাড়া দিতে চায় না। তাতেই সব চেয়ে ভয় হয় ।” বানানো কথায় মিথ্যে ভরসা দিতে মোতির মার ইচ্ছে হল না। কোনো উত্তর না করে সে কুমুকে বুকের কাছে জড়িয়ে ধরলে। এমন সময় বাইরে থেকে আওয়াজ পাওয়া গেল, “মেজেবিউ ।” কুমু খুশি হয়ে উঠে বললে, “এসো, এসো ঠাকুরপো ।” । “সন্ধ্যাবেলাকার ঘরের আলোটিকে ঘরে দেখতে পেলুম না, তাই খুঁজতে বেরিয়েছি।” মোতির মা বললে, “হায় হায়, মণিহারা। ফণী যাকে বলে ।” “কে মণি আর কে ফণী তা চক্ৰ নাড়া দেখলেই বোঝা যায়, কী বল বউরানী ।” “আমাকে সাক্ষী মেনো না ঠাকুরপো ।” “জানি, তা হলে আমি ঠিকব ।” “তা তোমার হারাধনকে তুমি উদ্ধার করে নিয়ে যাও, আমি ধরে রাখব না।” “হারাধনের জন্যে ওঁর কোনো উৎসাহ নেই দিদি, ছুতো করে বউরানীর চরণ দর্শন করতে এসেছেন ।” “ছুতোর কি কোনো দরকার আছে ? চরণ আপনি ধরা দিয়েছে। সব চেয়ে যা অসাধ্য তার সাধনা করবে কে ? সে যখন আসে সহজেই আসে। পৃথিবীতে হাজার হাজার মানুষ আছে আমার চেয়ে যোগ্য, তবু আমন সুন্দর পা দুখানি আমিই পারলুম ছুতে, তারা তো পারলে না । নবীনের জন্ম সার্থক হয়ে গেল বিনামূল্যে ।” “আঃ, কী বল ঠাকুরপো, তার ঠিক নেই। তোমার এনসাইক্লোপীডিয়া থেকে বুঝি—” “আমন কথা বলতে পারবে না বউরানী । চরণ বলতে কী বোঝায় তা ওরা জানবে কী করে ? ছাগলের খুরের মতো সরু সরু ঠেকোওয়ালা জুতোর মধ্যে লক্ষ্মীদের পা কড়া জেনানার মধ্যে ওরা বন্দী করে রেখেছে। সাইক্লোপীডিয়াওয়ালার সাধ্য কী পায়ের মহিমা বোঝে । লক্ষ্মণ চোদটা বৎসর কেবল সীতার পায়ের দিকে তাকিয়েই নির্বাসন কাটিয়ে দিলেন, তার মানে আমাদের দেশের দেওররাই জানে। তা পায়ের উপর শাড়ি টেনে দিচ্ছ তো দাও । ভয় নেই তোমার, পদ্ম সন্ধেবেলায় মুদে থাকে বলে তো বরাবর মুদেই থাকে না- আবার তো পাপড়ি খোলে।” “ভাই মনের কথা, এমনিতরো স্তব করেই বুঝি ঠাকুরপো তোমার মন ভুলিয়েছেন ?” “একটুও না দিদি, মিষ্টি কথার বাজে খরচ করবার লোক নন উনি ।” “স্তুতির বুঝি দরকার হয় না ?” s “বউরানী, স্তুতির ক্ষুধা দেবীদের কিছুতেই মেটে না, দরকার খুব আছে। কিন্তু শিবের মতো আমি তো পঞ্চানন নই, এই একটিমাত্র মুখের স্তুতি পুরোনো হয়ে গেছে, এতে উনি আর রস পাচ্ছেন না।” এমন সময় মুরলী বেয়ারা এসে নবীনকে খবর দিলে, “কর্তা-মহারাজা বাইরের আপিসঘরে ডাক দিয়েছেন ।” শুনে নবীনের মন খারাপ হয়ে গেল। সে ভেবেছিল মধুসূদন আজ আপিস থেকে ফিরেই একেবারে সোজা তার শোবার ঘরে এসে উপস্থিত হবে । নীেকো বুঝি আবার ঠেকে গেল চড়ায় । নবীন চলে গেলে মেতির মা আন্তে আস্তে বললে, “বড়েঠাকুর কিন্তু তোমাকে ভালোবাসেন সে কথা মনে রেখো ।” কুমু বললে, “সেইটেই তো আমার আশ্চর্য ঠেকে।” “বল কী, তোমাকে ভালোবাসা আশ্চর্য কেন ? উনি কি পাথরের ?” 'आीि ६न्न 6श१ का ।” “তুমি যার যোগ্য নও সে পুরুষ কোথায় আছে ?” “ওঁর কতবড়ো শক্তি, কত সম্মান, কত পাকা বুদ্ধি, উনি কত মস্ত মানুষ। আমার মধ্যে উনি কতটুকু পেতে পারেন ? আমি যে কী অসম্ভব। কঁচা, তা এখানে এসে দুদিনে বুঝতে পেরেছি।