পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8° রবীন্দ্র-রচনাবলী মধুসূদনকে চাঁটাবার মতো অবস্থা আমাদের নয়, এটা মনে রাখতে হবে।” “কুমু বলছে। ওর স্বামীর সম্মতি পেয়েছে।” “সম্মতির চেহারা কী রকম না জানলে মন নিশ্চিন্ত হচ্ছে না । কত সাবধানে ওর সঙ্গে ব্যবহার করি সে আর তোমাকে কী বলব দাদা । রাগে সর্ব অঙ্গ যখন জ্বলছে তখনো ঠাণ্ডা হয়ে সব সয়েছি, গৌরীশংকরের পাহাড়টার মতো দুপুর-রোদুরেও তার বরফ গলে না। একে মহাজন তাতে ভগ্নীপতি, একে সামলে চলা কি সোজা কথা !” বিপ্রদাস কোনো জবাব না করে চুপ করে ভাবতে লাগল কুমু এল বার্লি নিয়ে । বিপ্রদাসের মুখের কাছে পেয়ালা ধরে বললে, “দাদা, খেয়ে নাও।” বিপ্রদাস তার ভাবনা থেকে হঠাৎ চমকে উঠল। কুমু বুঝতে পারলে, গভীর একটা উদবেগের মধ্যে लाना 6ठक० छुद छिल । কালু যখন ঘর থেকে বেরিয়ে গেল কুমু তার পিছন পিছন গিয়ে বারান্দায় ওকে ধরে বললে, “কালুদা, আমাকে সব কথা বলতে হবে।” “र्दी कशीं दब्लाऊ शुद निफ्रेिं ?” “তোমাদের কী একটা নিয়ে ভাবনা চলছে।” “বিষয় আছে ভাবনা নেই, সংসারে এও কি কখনো সম্ভব হয় খুকি ? ও যে কাঁটাগাছের ফল, খিদের চোটে পেড়ে খেতেও হয়, পাড়তে গিয়ে সর্বাঙ্গ ছাড়েও যায় ।” “সে-সব কথা পরে হবে, আমাকে বলো কী হয়েছে।” “বিষয়াকর্মের কথা মেয়েদের বলতে নিষেধ ।” “আমি নিশ্চয় জানি তোমাদের কী নিয়ে কথা হচ্ছে । বলব ?” “আচ্ছা, বলে ।” “আমার স্বামীর কাছে দাদার ধারা আছে, সেই নিয়ে ।” কোনো জবাব না দিয়ে কালু তার বড়ো বড়ো দুই চোখ সকৌতুক বিস্ময়হাস্যে বিস্ফারিত করে কুমুর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল । “আমাকে বলতেই হবে, ঠিক বলেছি কি না ।” “দাদারই বোন তো, কথা না বলতেই কথা বুঝে নেয়।” বিয়ের পরে প্রথম যেদিন বিপ্রদাসের মহাজন বলে মধুসূদন আস্ফালন করে শাসিয়ে কথা বলেছিল, সেইদিন থেকেই কুমু বুঝেছিল দাদার সঙ্গে স্বামীর সম্বন্ধের আগৌরব। প্রতিদিনই একান্তমনে ইচ্ছে করেছিল এটা যেন ঘুচে যায়। বিপ্রদাসের মনে এর অসম্মান যে বিধে আছে তাতে কুমুর সন্দেহ ছিল না। সেদিন নবীন যেই বিপ্রদাসের চিঠির ব্যাখ্যা করলে, অমনি কুমুর মনে এল সমস্তর মূলে আছে এই দেনাপাওনার সম্বন্ধ । দাদার শরীর কেন যে এত ক্লান্ত, কোন কাজের বিশেষ তাগিদে দাদা কলকাতায় চলে এসেছে, কুমু সমস্তই স্পষ্ট বুঝতে পারলে। “কালুদা, আমার কাছে লুকিয়ে না, দাদা টাকা ধার করতে এসেছে।” “তা, ধার করেই তো ধার শুধতে হবে ; টাকা তো আকাশ থেকে পড়ে না। কুটুম্বদের খাতক হয়ে থাকাটা তো ভালো নয় ।” : “সে তো ঠিক কথা, তা টাকার জোগাড় করতে পেরেছ ?” ঘুরে ঘেরে দেখছি, হয়ে যাবে, ভয় কী ” “না, আমি জানি, সুবিধে করতে পার নি।” “আচ্ছা ছোটোখুকি, সবই যদি জান, আমাকে জিজ্ঞাসা করা কেন ? ছেলেবেলায় একদিন আমার গোফ টেনে ধরে জিজ্ঞাসা করেছিলে, গোফ হল কেমন করে ? , সময় বুঝে গোফের বীজ বুনেছিলুম বলে । তাতেই প্রশ্নটার তখনই নিস্পত্তি হয়ে গেল । এখন হলে জবাব দেবার জন্যে ডাক্তার ডাকতে হত। সব কথাই যে তোমাকে স্পষ্ট করে জানাতে হবে সংসারের এমন নিয়ম নয়।”