পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ 88S “স্বৰ্গটা সম্বন্ধে সন্দেহ আছে, ছবিটা সম্বন্ধে একটুও সন্দেহ ছিল না। এমন ছবি দৈবাৎ হয়। যে দুর্লভ লগ্নে ওঁর মুখটিতে লক্ষ্মীর প্রসাদ সম্পূর্ণ নেমেছিল ঠিক সেই শুভযোগটি ঐ ছবিতে ধরা পড়ে গেছে। এক-একদিন রাত্তিরে ঘুম থেকে উঠে আলো জ্বালিয়ে ঐ ছবিটি দেখেছি। প্ৰদীপের আলোয় ওর ভিতরকার রূপটি যেন আরো বেশি করে দেখা যায় ।” “দেখো, আমার কাছে অত বাড়াবাড়ি করতে তোমার একটুও ভয় নেই ?” “ভয় যদি থাকত তা হলেই তোমার ভাবনার কথাও থাকত । ওঁকে দেখে আমার আশ্চর্য কিছুতে ভাঙে না । মনে করি আমাদের ভাগ্যে এটা সম্ভব হল কী করে ? আমি যে ওঁকে বউরানী বলতে পারছি এ ভাবলে গায়ে কাটা দেয় । আর উনি যে সামান্য নবীনের মতো মানুষকেও হাসিমুখে কাছে বসিয়ে খাওয়াতে পারেন, বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ডে এও এত সহজ হল কী করে ? আমাদের পরিবারের মধ্যে সব চেয়ে হতভাগ্য আমার দাদা । যাকে সহজে পেলেন তাকে কঠিন করে বাধতে গিয়েই হারালেন ।” “বাস রে, বউরানীর কথায় তোমার মুখ যখন খুলে যায়। তখন থামতে চায় না ।” “মেজেবিউ, জানি তোমার মনে একটুখানি বাজে ।” "ना, कदश्ना ना |” “হা, অল্প একটু । কিন্তু এই উপলক্ষে একটা কথা মনে করিয়ে দেওয়া ভালো । নুরনগরে স্টেশনে প্ৰথম বউরানীর দাদাকে দেখে যে-সব কথা বলেছিলে চলতি ভাষায় তাকেও বাড়াবাড়ি दळीं bळ ' “আচ্ছা, আচ্ছা, ও-সব তর্ক থাক, এখন কী বলতে চাচ্ছিলে বলে ।” “আমার বিশ্বাস আজকালের মধ্যেই দাদা বউরানীকে ডেকে পাঠাবেন । বউরানী যে এত আগ্রহে বাপের বাড়ি চলে এলেন, আর তার পর থেকে এতদিন ফেরবার নাম নেই, এতে দাদার প্রচণ্ড অভিমান হয়েছে তা জানি । দাদা কিছুতেই বুঝতে পারেন না সোনার খাচাতে পাখির কেন লোভ নেই। নির্বোধি পাখি, অকৃতজ্ঞ পাখি !” । “তা ভালোই তো, বড়েঠাকুর ডেকেই পাঠান-না । সেই কথাই তো ছিল ।” “আমার মনে হয়, ডাকবার আগেই বউরানী যদি যান ভালো হয়, দাদার ঐটুকু অভিমানের না-হয় জিত রইল। তা ছাড়া বিপ্রদাসবাবু তো চান বউরানী তীর সংসারে ফিরে যান, আমিই নিষেধ করেছিলুম।” 8 বিপ্ৰদাসের সঙ্গে এই নিয়ে আজ কী কথা হয়েছে বললে, “বিপ্রদাসবাবুর কাছে গিয়ে বলোই-না ।” "তাই যাই, তিনি শুনলে খুশি হবেন ।” এমন সময় কুমু দরজার বাইরে থেকে বললে, “ঘরে ঢুকব কি ?” মোতির মা বললে, “তোমার ঠাকুরপো পথ চেয়ে আছেন ।” “জন্ম জন্ম পথ চেয়ে ছিলুম, এইবার দর্শন পেলুম।” “আঃ ঠাকুরপো ! এত কথা তুমি বানিয়ে বলতে পার কী করে ?” “নিজেই আশ্চর্য হয়ে যাই, বুঝতে পারি। নে ৷” “আচ্ছা, চালো এখন খেতে যাবে।” “খাবার আগে একবার তোমার দাদার সঙ্গে কিছু কথাবার্তা কয়ে আসি গে।” “না, সে হবে না।” “हुकन्ा ?” “আজ দাদা অনেক কথা বলেছেন, আজ আর নয় ।” “ভালো খবর আছে।” “তা হােক, কাল এসো। বরঞ্চ । আজ কোনাে কথা নয়।” “কাল হয়তো ছুটি পাব না, হয়তো বাধা ঘটবে। দোহাই তোমার, আজ একবার কেবল পাচ praN মা তার কোনো আভাস দিলে না ।