পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88v রবীন্দ্র-রচনাবলী কুমু সংক্ষেপে বললে, “না।” মধুসূদন সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললে, “কী ! যাবে না! যেতেই হবে।” কুমু কোনাে জবাব করলে না। মধুসূদন বললে, “জান পুলিস ডেকে তোমাকে নিয়ে যেতে পারি घाझ् क्षद्ध ? 'न' दलालशे श्न !" কুমুচুপ করে রইল। মধুসূদন গর্জন করে বললে, “দাদার স্কুলে নুরনগরি কায়দা শিক্ষা আবার আরম্ভ হয়েছে ?” কুমু দাদার ঘরের দিকে একবার কটাক্ষপাত করে বললে, “চুপ করো, অমন চেচিয়ে কথা কোয়াে “কেন ? তোমার দাদাকে সামলে কথা কইতে হবে নাকি ? জান এই মুহুর্তেই ওকে পথে বার করতে পারি ?” পরীক্ষণেই কুমু দেখে ওর দাদা ঘরের দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘকায়, শীর্ণদেহ, পাণ্ডুবৰ্ণ মুখ, বড়ো বড়ো চােখ দুটাে জ্বালাময়, একটা মোটা সাদা চাদর গা ঢেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে, কুমুকে ডেকে বললে, “আয় কুমু, আয় আমার ঘরে ।” মধুসূদন চেচিয়ে উঠল, বললে, “মনে থাকবে তোমার এই আস্পর্ধা। তোমার নুরনগরের নুর মুড়িয়ে দেব। তবে আমার নাম মধুসূদন ।” ঘরে গিয়ে বিপ্রদাস বিছানায় শুয়ে পড়ল। চোখ বন্ধ করলে, কিন্তু ঘুমে নয়, ক্লান্তিতে ও চিন্তায় । কুমু শিয়রের কাছে বসে পাখা নিয়ে বাতাস করতে লাগল। এমনি করে অনেকক্ষণ কাটলে পর ক্ষেমপিসি এসে বললে, “আজ কি খেতে হবে না। কুমু ? বেলা যে অনেক হল ।” বিপ্রদাস চোখ খুলে বললে, “কুমু, যা খেতে যা । তোর কালুদাকে পাঠিয়ে দে।” কুমু বললে, “দাদা, তোমার পায়ে পড়ি এখন কালুদাকে না, একটু ঘুমোবার চেষ্টা করো ।” বিপ্রদাস কিছু না বলে সুগভীর বেদনার দৃষ্টিতে কুমুর মুখের দিকে চেয়ে রইল। খানিক বাদে নিশ্বাস ফেলে আবার চোখ বুজলে । কুমু ধীরে ধীরে বেরিয়ে গিয়ে দরজা দিল ভেজিয়ে । একটু পরেই কালু খবর পাঠাল যে আসতে চায়। বিপ্রদাস উঠে তাকিয়ায় হেলান দিয়ে বসল। কালু বললে, “জামাই এসে অল্পক্ষণ পরেই তো চলে গেল। কী হল বলে তো । কুমুকে ওদের ওখানে ফিরে নিয়ে যাবার কথা কিছু বললে কি ?” “ই বলেছিল। কুমু তার জবাব দিয়েছে, সে যাবে না।” কালু বিষম। ভীত হয়ে বললে, “বল কী দাদা ! এ যে সর্বনেশে কথা !” “সর্বনাশকে আমরা কোনোকালে ভয় করি নে, ভয় করি। অসম্মানকে ৷” “তা হলে তৈরি হও, আর দেরি নেই। রক্তে আছে, যাবে কোথায় ? জানি তো, তোমার বাবা ম্যাজিষ্ট্রেটকে তুচ্ছ করতে গিয়ে অন্তত দু লাখ টাকা লোকসান করেছিলেন। বুক ফুলিয়ে নিজের বিপদ ঘটানাে ও তােমাদের পৈতৃক শখ। ওটা অন্তত আমার বংশে নেই, তাই তােমাদের সাংঘাতিক পাগলামিগুলো চুপ করে সইতে পারি নে। কিন্তু বীচব কী করে ?” বিপ্রদাস উচু বঁ-হাঁটুর উপর ডান পা তুলে দিয়ে তাকিয়ায় মাথা রেখে চােখ বুজে খানিকক্ষণ ভাবলে। অবশেষে চােখ খুলে বললে, “দলিলের শর্ত অনুসারে মধুসূদন ছ। মাস নােটিস না দিয়ে আমার কাছ থেকে টাকা দাবি করতে পারে না । ইতিমধ্যে সুবোধ আষাঢ় মাসের মধ্যেই এসে পড়বে- তখন একটা উপায় হতে পারবে ।” কালু একটু বিরক্ত হয়েই বললে, “উপায় হবে বৈকি। বাতিগুলো এক দমকায় নিবত, সেইগুলো একে একে ভদ্ররকম করে নিববে।” f “বাতি তলার খোপটার মধ্যে এসে জ্বলছে, এখন যে-ফরাশ এসে তাকে যেরকম ফু দিয়েই নেবাক-না- তাতে বেশি হা-হুতাশ করবার কিছু নেই। ঐ তলানির আলোটার তদবির করতে আর ভালো লাগে না, ওর চেয়ে পুরো অন্ধকারে সোয়ন্তি পাওয়া যায়।”