পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের কবিতা 8 bro “তা হলে পরিচয়টা আরো একটু স্পষ্ট করো।” “জানা ঘর। পাত্রটির নাম অমিতকুমার রায় । হাসছেন কেন মাসিমা । ভাবছেন কথাটা ঠাট্টা ?” “সে ভয় মনে আছে বাবা, পাছে শেষ পর্যন্ত ঠাট্টই হয়ে ওঠে ।” “এ সন্দেহটা পাত্রের ‘পরে দোষারোপ ।” “বাবা, সংসারটাকে হেসে হালকা করে রাখা কম ক্ষমতা নয় ।” “মাসি, দেবতাদের সেই ক্ষমতা আছে, তাই দেবতারা বিবাহের অযোগ্য, দময়ন্তী সে কথা বুঝেছিলেন।” “আমার লাবণ্যকে সত্যি কি তোমার পছন্দ হয়েছে ।” “কিরকম পরীক্ষা চান, বলুন ।” “একমাত্র পরীক্ষা হচ্ছে, লাবণ্য যে তোমার হাতেই আছে। এইটি তোমার নিশ্চিত জানা ।” “কথাটাকে আর-একটু ব্যাখ্যা করুন।” “যে রত্নকে সস্তায় পাওয়া গেল তারও আসল মূল্য যে বোঝে সেই জানব জহুরি ।” “মাসিম, কথাটাকে বড়ো বেশি সূক্ষ্ম করে তুলছেন। মনে হচ্ছে, যেন একটা ছোটাে গল্পের সাইকোলজিতে শান লাগিয়েছেন । কিন্তু কথাটা আসলে যথেষ্ট মোটা- জাগতিক নিয়মে এক ভদ্রলোক এক ভদ্ররমণীকে বিয়ে করবার জন্যে খেপেছে | দোষে গুণে ছেলেটি চলনসই, মেয়েটির কথা বলা বাহুল্য। এমন অবস্থায় সাধারণ মাসিমার দল স্বভাবের নিয়মেই খুশি হয়ে তখনই ঢেঁকিতে আনন্দনাড়ু কুটতে শুরু করেন ।” “ভয় নেই বাবা, টেকিতে পা পড়েছে। ধরেই নাও, লাবণ্যকে তুমি পেয়েইছ । তার পরেও, হাতে পেয়েও যদি তোমার পাবার ইচ্ছে প্রবল থেকেই যায়। তবেই বুঝব, লাবণ্যর মতো মেয়েকে বিয়ে করবার তুমি যোগ্য ।” “আমি যে এ-হেন আধুনিক, আমাকে সুদ্ধ তাক লাগিয়ে দিলেন।” । “আধুনিকের লক্ষণটা কী দেখলে ।” “ দেখছি, বিংশ শতাব্দীর মাসিমারা বিয়ে দিতেও ভয় পান ।” “তার কারণ, আগেকার শতাব্দীর মাসিমারা যাদের বিয়ে দিতেন তারা ছিল খেলার পুতুল। এখন যারা বিয়ের উমেদার, মাসিমাদের খেলার শখ মেটাবার দিকে তাদের, মন নেই।” “ভয় নেই। আপনার । পেয়ে পাওয়া ফুরোয় না, বরঞ্চ চাওয়া বেড়েই ওঠে, লাবণ্যকে বিয়ে করে এই তত্ত্ব প্রমাণ করবে বলেই অমিত রায় মর্তে অবতীর্ণ। নইলে আমার মোটরগাড়িটা অচেতন পদার্থ হয়েও অস্থানে অসময়ে এমন অদ্ভুত অঘটন ঘটিয়ে বসবে কেন।” “বাবা, বিবাহযোগ্য বয়সের সুর এখনো তোমার কথাবার্তায় লাগছে না, শেষে সমস্তটা বাল্যবিবাহ হয়ে না দাড়ায় ।” “মাসিম, আমার মনের স্বকীয় একটা স্পেসিফিক গ্র্যাভিটি আছে, তারই গুণে আমার হৃদয়ের ভারী কথাগুলোও মুখে খুব হালকা হয়ে ভেসে ওঠে, তাই বলে তার ওজন কমে না ।” যোগমায়া গেলেন ভোজের ব্যবস্থা করতে । অমিত এ-ঘরে ও-ঘরে ঘুরে বেড়ালে, দর্শনীয় কাউকে দেখতে পেলে না । দেখা হল যতিশংকরের সঙ্গে । মনে পড়ল, আজ তাকে অ্যান্টনি ক্লিয়োপ্যাট্রা পড়াবার কথা । অমিতার মুখের ভাব দেখেই যতি বুঝেছিল, জীবের প্রতি দয়া করেই আজ তার ছুটি নেওয়া আশু কর্তব্য । সে বললে, “অমিতদা, কিছু যদি মনে না কর, আজ আমি ছুটি চাই, আপার শিলঙে বেড়াতে যাব ।” অমিত পুলকিত হয়ে বললে, “পড়ার সময় যারা ছুটি নিতে জানে না তারা পড়ে, পড়া হজম করে না। তুমি ছুটি চাইলে আমি কিছু মনে করব এমন অসম্ভব ভয় করছ, কেন।” “কাল রবিবার ছুটি তো আছেই, পাছে তুমি তাই ভাব-” । “ইস্কুলমাস্টারি বুদ্ধি আমার নয়। ভাই, বরাদ্দ ছুটিকে ছুটি বলিই নে। যে ছুটি নিয়মিত তাকে ভোগ