পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

888 রবীন্দ্র-রচনাবলী দিয়েছিল নানা রঙে, বাদলের পরদিনকার সকালবেলায় শিলঙ পাহাড়ের মতে- সেদিন নিজের অস্তিত্বের একটা মূল্য সে পেয়েছিল, সে কথাটা প্রকাশ না করে সে থাকবে কী করে। অমিত বলে, মানুষের মৃত্যুর পরে তার জীবনী লেখা হয় তার কারণ, এক দিকে সংসারে সে মরে, আর-এক দিকে মানুষের মনে সে নিবিড় করে বেঁচে ওঠে। অমিতার ভাবখানা এই যে, শিলঙে সে যখন ছিল তখন এক দিকে সে মরেছিল, তার অতীতটা গিয়েছিল মরীচিকার মতো মিলিয়ে, তেমনি আর-এক দিকে সে উঠেছিল তীব্র করে বেঁচে ; পিছনের অন্ধকারের উপরে উজ্জ্বল আলোর ছবি প্রকাশ পেয়েছে। এই প্রকাশের খবরটা রেখে যাওয়া চাই। কেননা, পৃথিবীতে খুব অল্প লোকের ভাগ্যে এটা ঘটতে পারে ; তারা জন্ম থেকে মৃত্যুকাল পর্যন্ত একটা প্রদোষচ্ছায়ার মধ্যেই কাটিয়ে যায়, যে বাদুড় গুহার মধ্যে বাসা করেছে তারই মতো । r তখন অল্প অল্প বৃষ্টি পড়ছে, ঝোড়ো হাওয়াটা গেছে থেমে, মেঘ এসেছে পাতলা হয়ে । অমিত চৌকি ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে বললে, “এ কী অন্যায় মাসিমা ।” “কোন বাবা, কী করেছি।” “আমি যে একেবারে অপ্ৰস্তুত । শ্ৰীমতী লাবণ্য কী ভাববেন ।” “শ্ৰীমতী লাবণ্যকে একটু ভাবতে দেওয়াই তো দরকার। যা জািনবার সবটাই যে জানা ভালো । এতে শ্ৰীযুক্ত আমিতের এত আশঙ্কা কেন ।” “শ্ৰীযুক্তের যা ঐশ্বৰ্য সেইটেই শ্ৰীমতীর কাছে জানাবার। আর, শ্ৰীহীনের যা দৈন্য সেইটে জানাবার জন্যেই আছ তুমি, আমার মাসিমা ।” “এমন ভেদবুদ্ধি কেন বাছা ।” “নিজের গরজেই। ঐশ্বৰ্য দিয়েই ঐশ্বৰ্য দাবি করতে হয়, আর অভাব দিয়ে চাই আশীর্বাদ । মানবসভ্যতায় লাবণ্য-দেবীরা জাগিয়েছেন। ঐশ্বৰ্য, আর মাসিমারা এনেছেন আশীর্বাদ ।” “দেবীকে আর মাসিমাকে একাধারেই পাওয়া যেতে পারে অমিত ; অভাব ঢাকবার দরকার হয় N. " “এর জবাব কবির ভাষায় দিতে হয়। গদ্যে যা বলি সেটা স্পষ্ট বােঝাবার জন্যে ছন্দের ভাষ্য দরকার হয়ে পড়ে। ম্যাথু আর্নলড় কাব্যকে বলেছেন, ক্রিটিসিজম অফ লাইফ, আমি কথাটাকে সংশোধন করে বলতে চাই, লাইফস, কমেন্টারি ইনভার্স। অতিথিবিশেষকে আগে থাকতে জানিয়ে রাখি, যেটা পড়তে যাচ্ছি, সে লেখাটা কোনো কবিসম্রাটের নয় পূৰ্ণপ্ৰাণে চাবার যাহা রিক্ত হাতে চাস নে তারে ; ; সিক্ত চোখে যাস নে দ্বারে । ভেবে দেখবেন, ভালোবাসাই হচ্ছে পূর্ণতা, তার যা আকাঙক্ষা সে তো দরিদ্রের কাঙালিপনা নয়। দেবতা যখন তার ভক্তকে ভালোবাসেন তখনই আসেন। ভক্তের দ্বারে ভিক্ষা চাইতে । রত্নমালা আনবি যাবে পাতবি কি তোর দেবীর আসন শূন্য ধুলায় পথের ধারে । সেইজন্যেই তো সম্প্রতি দেবীকে একটু হিসেব করে ঘরে ঢুকতে বলেছিলুম। পাতবার কিছুই নেই তো পািতব কী। এই ভিজে খবরের কাগজগুলো ? আজকাল সম্পাদকী কালির দাগকে সব চেয়ে ভয় করি। কবি বলছেন, ডাকবার মানুষকে ডাকি যখন জীবনের পেয়াল উছলে পড়ে, তাকে তৃষ্ণার