পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের কবিতা 8 dà) In the hour my love cometh And calleth me. চুমিয়া যেয়ো তুমি আমার বনভূমি দখিন-সাগরের সমীরণ, যে শুভখনে মম। আসিবে প্ৰিয়তম, ডাকিবে নাম ধরে অকারণ ।” লাবণ্য কাগজখানা ফিরিয়ে দিলে না । অমিত বললে, “এবারে তোমার চিঠির নমুনা দাও, দেখি, তোমার শিক্ষা কতদূর এগোেল।” লাবণ্য একটা টুকরো কাগজে লিখতে যাচ্ছিল। অমিত বললে, “না, আমার এই নোট-বইয়ে লেখো ।” व्लाद° क्लिश क्रिॉब्ज “মিতা, তুমিসি মম জীবনং, তুমিসি মম ভূষণং, ত্বমসি মম ভবজলধিরত্নম।” অমিত বইটা পকেটে পুরে বললে, “আশ্চর্য এই, আমি লিখেছি মেয়ের মুখের কথা, তুমি লিখেছি পুরুষের। কিছুই অসংগত হয় নি। শিমুলকাঠিই হােক আর বকুলকাঠিই হােক, যখন জ্বলে তখন আগুনের চেহারাটা একই ।” লাবণ্য বললে, “নিমন্ত্রণ তো করা গেল, তার পরে ?” g অমিত বললে, “সন্ধ্যাতারা উঠেছে, জোয়ার এসেছে গঙ্গায়, হাওয়া উঠল বিরঝির করে ঝাউগাছগুলোর সার বেয়ে, বুড়ো বটগাছটার শিকড়ে শিকড়ে উঠল স্রোতের ছলছলানি । তোমার বাড়ির পিছনে পদ্মদিঘি, সেইখানে খিড়কির নির্জন ঘাটে গা ধুয়ে চুল বেঁধেছ। তোমার এক-একদিন এক-এক রঙের কাপড়, ভাবতে ভাবতে যাব আজকে সন্ধেবেলার রঙটা কী । মিলনের জায়গারও ঠিক নেই, কোনোদিন শান-বাধানো চাপাতলায়, কোনোদিন বাড়ির ছাতে, কোনোদিন গঙ্গার ধারের চাতালে। আমি গঙ্গায় স্নান সেরে সাদা মলমলের ধুতি আর চাদর পরব, পায়ে থাকবে হাতির-দাতে-কাজ-করা খড়ম । গিয়ে দেখব, গালচে বিছিয়ে বসেছি, সামনে রুপোর রেকবিতে মোটা গোড়ে মালা, চন্দনের বাটিতে চন্দন, এক কোণে জ্বলছে ধূপ । পুজোর সময় অন্তত দু মাসের জন্যে দুজনে বেড়াতে বেরোব । কিন্তু দুজনে দু জায়গায় । তুমি যদি যাও পর্বতে, আমি যাব সমুদ্রে - এই তো আমার দাম্পত্য দ্বৈরাজ্যের নিয়মাবলী তোমার কাছে দাখিল করা গেল । এখন তোমার কী মত ।” “মেনে নিতে রাজি আছি ।” “মেনে নেওয়া আর মনে নেওয়া, এই দুইয়ে যে তফাত আছে বন্যা ।” “তোমার যাতে প্রয়োজন আমার তাতে প্রয়োজন না-ও যদি থাকে। তবু আপত্তি করব না।” *32Corfer (Fio Qopolo ?" “না, নেই। তুমি আমার যতই কাছে থাক তবু আমার থেকে তুমি অনেক দূরে । কোনো নিয়ম দিয়ে সেই দূরত্বটুকু বজায় রাখা আমার পক্ষে বাহুল্য। কিন্তু আমি জানি, আমার মধ্যে এমন কিছুই নেই যা তোমার কাছের দৃষ্টিকে বিনা লজ্জায় সইতে পারবে ; সেইজন্যে দাম্পত্যে দুই পারে দুই মহল করে দেওয়া আমার পক্ষে নিরাপদ ।” অমিত চৌকি থেকে উঠে দাড়িয়ে বললে, “তোমার কাছে আমি হার মানতে পারব না বন্যা, যাক গে। আমার বাগানটা । কলকাতার বাইরে এক পা নড়ব না । নিরঞ্জনদের আপিসে উপরের তলায় পঁচাত্তর টাকা দিয়ে একটা ঘর ভাড়া নেব । সেইখানে থাকবে তুমি, আর থাকব। আমি । চিদাকাশে কাছে দূরে ভেদ নেই। সাড়ে-তিন হাত চওড়া বিছানায় বা পাশে তোমার মহল মানসী, ডান পাশে আমার মহল দীপক । ঘরের পুব-দেওয়ালে একখানা আয়নাওয়ালা দেরাজ, তাতেই তোমারও মুখ