পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী - ܓ QQ “আর নিয়ে এসে তোমার পায়ে দিত ।” “সে সাহস তার ছিল না। কোথাও রেখে দিত, যদি আমার দৃষ্টিতে পড়ে, যদি আমি তুলে নিই।” “তাকে দয়া করেছি ?” “করবার অবকাশ হল না । মনে মনে প্রার্থনা করি, ঈশ্বর যেন তাকে দয়া করেন ।” “যে কবিতাটি আজ তুমি পড়লে, বেশ বুঝতে পারছি, এটা সেই হতভাগারই মনের কথা ।” “হা, তারই কথা বৈকি।” - “তবে তোমার কেন আজ ওটা মনে পড়ল।” “কেমন করে বলব। ঐ কবিতাটির সঙ্গে আর-এক টুকরো কবিতা ছিল, সেটাও আজ আমার কেন মনে পড়ছে ঠিক বলতে পারি নে সুন্দর, তুমি চক্ষু ভরিয়া এনেছে অশ্রািজল । এনেছ তোমার বক্ষে ধরিয়া দুঃসহ হােমানল । দুঃখ যে তায় উজ্জ্বল হয়ে উঠে, মুগ্ধ প্ৰাণের আবেশ-বন্ধ টুটে । এ তাপে শ্বসিয়া উঠে বিকশিয়া বিচ্ছেদশতদল ৷” অমিত লাবণ্যর হাত চেপে ধরে বললে, “বন্যা, সে ছেলেটা আজ আমাদের মাঝখানে কেন এসে পড়ল। ঈর্ষা করতে আমি ঘূণা করি, এ আমার ঈর্ষা নয়। কিন্তু কেমন একটা ভয় আসছে মনে । বলো, তার দেওয়া ঐ কবিতাগুলো আজই কেন তোমার এমন করে মনে পড়ে গেল।” “একদিন সে যখন আমাদের বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল তার পরে যেখানে বসে সে লিখিত সেই ডেস্কে এই কবিতাদুটি পেয়েছি। এর সঙ্গে রবি ঠাকুরের আরো অনেক অপ্রকাশিত কবিতা, প্রায় এক খাতা ভরা । আজ তোমার কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি, হয়তো সেইজন্যেই বিদায়ের কবিতা মনে ७ ||° “সে বিদায় আর এ বিদায় কি একই।” “কেমন করে বলব। কিন্তু এ তর্কের তো কোনো দরকার নেই। যে কবিতা আমার ভালো লেগেছে। তাই তোমাকে শুনিয়েছি, হয়তো এ ছাড়া আর কোনো কারণ এর মধ্যে নেই।” “বন্যা, রবি ঠাকুরের লেখা যতক্ষণ না লোকে একেবারে ভুলে যাবে ততক্ষণ ওর ভালো লেখা সত্য করে ফুটে উঠবে না। সেইজন্যে। ওর কবিতা আমি ব্যবহারই করি নে। দলের লোকের ভালো-লাগাটা কুয়াশার মতো, যা আকাশের উপর ভিজে হাত লাগিয়ে তার আলোটাকে ময়লা করে ফেলে।” “দেখো মিতা, মেয়েদের ভালো-লাগা তার আদরের জিনিসকে আপন অন্দরমহলে একলা নিজেরই করে রাখে, ভিড়ের লোকের কোনাে খবরই রাখে না। সে যত দাম দিতে পারে সব দিয়ে ফেলে, অন্য পাচজনের সঙ্গে মিলিয়ে বাজার যাচাই করতে তার মন নেই।” “তা হলে আমারও আশা আছে বন্যা । আমার বাজার-দরের ছোট্ট একটা ছাপ লুকিয়ে ফেলে তোমার আপনি দরের মন্ত একটা মার্কা নিয়ে বুক ফুলিয়ে বেড়ােব।” আমাদের বাড়ি কাছে এসে পড়ল মিতা। এবার তােমার মূৰে তােমার পথশিবের কবিতাটা গুনে " “রাগ কোরো না বন্যা, আমি কিন্তু রবি ঠাকুরের কবিতা আওড়াতে পারব না।” “রাগ করব কেন ।” “আমি একটি লেখককে আবিষ্কার করেছি, তার স্টাইল-”