পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হায় রে বাসরঘর, বিরাট বাহির সে যে বিচ্ছেদের দসু্যু ভয়ংকর। বিশ্বে প্রেম মৃত্যুহীন, তুমিও অমর। রবি ঠাকুর কেবল চলে যাবার কথাই বলে, রয়ে যাবার গান গাইতে জানে না। বন্যা, কবি কি বলে যে, আমরাও দুজন যেদিন ঐ দরজায় ঘা দেব, দরজা খুলবে না।” “মিনতি রাখো মিতা, আজ সকালে কবির লড়াই তুলো না । তুমি কি ভাবিছ প্রথম দিন থেকেই আমি জানতে পারি নি যে তুমিই নিবারণ চক্রবতী । কিন্তু তোমার ঐ কবিতার মধ্যে এখনই আমাদের ভালোবাসার সমাধি তৈরি করতে শুরু কোরো না, অন্তত তার মরার জন্যে অপেক্ষা কোরো ।” অমিত আজ নানা বাজে কথা বলে ভিতরের কোন-একটা উদবেগকে চাপা দিতে চায়, লাবণ্য তা বুঝেছিল। অমিতও বুঝতে পেরেছে, কাব্যের দ্বন্দ্ব কাল সন্ধেবেলায় বেখাপ হয় নি, আজ সকালবেলায় তার সুর কেটে যাচ্ছে। কিন্তু সেইটে যে লাবণ্যর কাছে সুস্পষ্ট সেও ওর ভালো লাগল না । একটু নীরসভাবে বললে, “তা হলে যাই, বিশ্বজগতে আমারও কাজ আছে, আপাতত সে হচ্ছে হােটেল-পরিদর্শন। ও দিকে লক্ষ্মীছাড়া নিবারণ চক্রাবতীর ছুটির মেয়াদ এবার ফুরোল বুঝি।” তখন লাবণ্য অমিতার হাত ধরে বললে, “দেখো মিতা, আমাকে চিরদিন যেন ক্ষমা করতে পার । যদি একদিন চলে যাবার সময় আসে। তবে, তোমার পায়ে পড়ি, যেন রাগ করে চলে যেয়ে না৷ ” এই বলে চোখের জল ঢাকবার জন্যে দ্রুত অন্য ঘরে গেল । 轴 অমিত কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তার পরে আস্তে আস্তে যেন অন্যমনে গোল যুক্যালিপটাস-তলায়। দেখলে, সেখানে আখরোটের গোটাকতক ভাঙা খােলা ছড়ানাে। দেখেই ওর মনটার ভিতর কেমন একটা ব্যথা চেপে ধরলে । জীবনের ধারা চলতে চলতে তার যে-সব চিহ্ন বিছিয়ে যায় সেগুলোর তুচ্ছতাই সব চেয়ে সকরুণ। তার পরে দেখলে, ঘাসের উপর একটা বই, সেটা রবি ঠাকুরের বিলাক” । তার নীচের পাতাটা ভিজে গেছে। একবার ভাবলে, ফিরিয়ে দিয়ে আসি গে, কিন্তু ফিরিয়ে দিলে না, সেটা নিল পকেটে । হােটেলে যাব-যােব করলে, তাও গেল না ; বসে পড়ল গাছতলাটাতে । রাত্রের ভিজে মেঘে আকাশটাকে খুব করে মেজে দিয়েছে। ধুলো-ধোওয়া বাতাসে