পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের কবিতা १२० ՏԳ শেষের কবিতা কলকাতার কলেজে পড়ে যতিশংকর । থাকে কলুটােলা প্রেসিডেন্সি কলেজের মেসে অমিত তাকে প্রায় বাড়িতে নিয়ে আসে, খাওয়ায়, তার সঙ্গে নানা বই পড়ে, নানা অদ্ভুত কথায় তার মনটাকে তার পর কিছুকাল যতিশংকর অমিতর কোনো নিশ্চিত খবর পায় না। কখনো শোনে সে নৈনিতালে, কখনো উটকামণ্ডে । একদিন শুনলে, অমিতর এক বন্ধু ঠাট্টা করে বলছে, সে আজকাল কেটি মিত্তিরের বাইরেকার রঙটা ঘোচাতে উঠে-পড়ে লেগেছে । কাজ পেয়েছে মনের মতো, বর্ণান্তর করা। এতদিন অমিত মূর্তি গড়বার শখ মেটাত কথা দিয়ে, আজ পেয়েছে সজীব মানুষ । সে মানুষটিও একে একে আপন উপরকার রঙিন পাপড়িগুলো খসাতে রাজি, চরমে ফল ধরবে। আশা করে । অমিতার বোন লিসি নাকি বলছে যে, কোটিকে একেবারে চেনাই যায় না, অর্থাৎ তাকে নাকি বড়ডো বেশি স্বাভাবিক দেখাচ্ছে। বন্ধুদের সে বলে দিয়েছে তাকে কেতকী বলে ডাকতে ; এটা তার পক্ষে নির্লজ্জতা, যে মেয়ে একদা ফিনফিনে শান্তিপুরে শাড়ি পরত। সেই লজ্জাবতীর পক্ষে জামা শেমিজ পরারই মতো। অমিত তাকে নাকি নিভৃতে ডাকে “কেয়া” বলে। এ কথাও লোকে কানাকনি করছে যে, নৈনিতালের সরোবরে নীেকো ভাসিয়ে কেটি তার হাল ধরেছে আর অমিত তাকে পড়ে শোনাচ্ছে রবি ঠাকুরের “নিরুদ্দেশ যাত্ৰা” । কিন্তু লোকে কী না বলে। যতিশংকর বুঝে নিলে, অমিতার মনটা পাল তুলে চলে গেছে ছুটিতত্ত্বের মাঝদরিয়ায় । অবশেষে অমিত ফিরে এল। শহরে রাষ্ট্র কেতকীর সঙ্গে তার বিয়ে । অথচ অমিতার নিজ মুখে একদিনও যতি এ প্রসঙ্গ শোনে নি। অমিতার ব্যবহারেরও অনেকখানি বদল ঘটেছে। পূর্বের মতোই যতিকে অমিত ইংরেজি বই কিনে উপহার দেয়, কিন্তু তাকে নিয়ে সন্ধেবেলায় সে-সব বইয়ের আলোচনা করে না। যতি বুঝতে পারে, আলোচনার ধারাটা এখন বইছে এক নতুন খাদে । আজকাল মোটরে বেড়াতে সে যতিকে ডাক পাড়ে না। যতির বয়সে এ কথা বোঝা কঠিন নয় যে, অমিতার “নিরুদ্দেশ যাত্ৰা”র পাটিতে তৃতীয় ব্যক্তির জায়গা হওয়া অসম্ভব। যতি আর থাকতে পারলে না। অমিতকে নিজেই গায়ে পড়ে জিজ্ঞাসা করলে, “অমিতদা, শুনলুম অমিত একটুখানি চুপ করে থেকে বললে, “লাবণ্য কি এ খবর জেনেছে।” । “না, আমি তাকে লিখি নি। তোমার মুখে পাকা খবর পাই নি বলে চুপ করে আছি।” “খবরটা সত্যি, কিন্তু লাবণ্য হয়তো-বা ভুল বুঝবে।” যতি হেসে বললে, “এর মধ্যে ভুল বোঝার জায়গা কোথায় । বিয়ে কর যদি তো বিয়েই করবে, সোজা কথা ।” “দেখো যতি, মানুষের কোনো কথাটাই সোজা নয়। আমরা ডিকশনারিতে যে কথার এক মানে বেঁধে দিই, মানবজীবনের মধ্যে মানেটা সাতখানা হয়ে যায়, সমুদ্রের কাছে এসে গঙ্গার মতো ।” যতি বললে, “অর্থাৎ তুমি বলছ বিবাহ মানে বিবাহ নয়।” “আমি বলছি, বিবাহের হাজারখানা মানে— মানুষের সঙ্গে মিশে তার মানে হয় ; মানুষকে বাদ দিয়ে তার মানে বের করতে গেলেই ধাধা লাগে৷ ” “তোমার বিশেষ মানেটাই বলো-না ।” “সংজ্ঞা দিয়ে বলা যায় না, জীবন দিয়ে বলতে হয়। যদি বলি ওর মূল মানেটা ভালোবাসা তা হলেও আর-একটা কথায় গিয়ে পড়ব । ভালোবাসা কথাটা বিবাহ কথার চেয়ে আরো বেশি अ]त्यु ।” “তা হলে অমিতদা, কথা বন্ধ করতে হয় যে । কথা কঁধে নিয়ে মানের পিছন পিছন ছুটব, আর