পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Gł RNR রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী মানেটা বায়ে তাড়া করলে ডাইনে আর ডাইনে তাড়া করলে বায়ে মারবে দৌড়, এমন হলে তো কাজ 50 rif " “ভায়া, মন্দ বল নি । আমার সঙ্গে থেকে তোমার মুখ ফুটেছে। সংসারে কোনোমতে কাজ চালাতেই হবে, তাই কথার নেহাত দরকার । যে-সব সত্যকে কথার মধ্যে কুলোয় না ব্যবহারের হাটে তাদেরই ছাটি, কথাটাকেই জাহির করি। উপায় কী । তাতে বোঝাপড়াটা ঠিক না হােক, চোখ বুজে কাজ চালিয়ে নেওয়া যায় ।” “তবে কি আজকের কথাটাকে একেবারেই খতম করতে হবে ।” “এই আলোচনাটা যদি নিতান্তই জ্ঞানের গরজে হয়, প্রাণের গরজে না হয়, তা হলে খতম করতে দোষ নেই ।” “ধরে নাও-না প্ৰাণের গরজেই ।” “শাবাশ, তবে শোনো ।” এইখানে একটু পাদটীকা লাগালে দোষ নেই। অমিতার ছোটাে বোন লিসির স্বহস্তে ঢালা চা যতি আজকাল মাঝে মাঝে প্রায়ই পান করে আসছে। অনুমান করা যেতে পারে যে, সেই কারণেই ওর মনে কিছুমাত্র ক্ষোভ নেই যে, অমিত ওর সঙ্গে অপরাহুে সাহিত্যালোচনা এবং সায়াহ্নে মোটরে করে বেড়ানো বন্ধ করেছে। অমিতকে ও সর্বান্তিঃকরণে ক্ষমা করেছে। অমিত বলে, “অক্সিজেন এক ভাবে ব্যয় হাওয়ায় অদৃশ্য থেকে, সে না হলে প্ৰাণ বঁাচে না । আবার অক্সিজেন আর-এক ভাবে কয়লার সঙ্গে যোগে জ্বলতে থাকে, সেই আগুন জীবনের নানা কাজে দরকার- দুটাের কোনোটাকেই বাদ দেওয়া চলে না। এখন বুঝতে পেরেছ ?” “সম্পূর্ণ না, তবে কিনা বোঝবার ইচ্ছে আছে।” “যে ভালোবাসা ব্যাপ্তভাবে আকাশে মুক্ত থাকে, অন্তরের মধ্যে সে দেয় সঙ্গ ; যে ভালোবাসা বিশেষভাবে প্রতিদিনের সবা-কিছুতে যুক্ত হয়ে থাকে, সংসারে সে দেয় আসঙ্গ। দুটােই আমি চাই ।” “তোমার কথা ঠিক বুঝছি কি না সেইটেই বুঝতে পারি নে। আর-একটু স্পষ্ট করে বলে। অমিতদা ।” অমিত বললে, “একদিন আমার সমস্ত ডানা মেলে পেয়েছিলুম আমার ওড়ার আকাশ ; আজ আমি পেয়েছি আমার ছোটো বাসা, ডানা গুটিয়ে বসেছি । কিন্তু আমার আকাশও রইল ।” “কিন্তু বিবাহে তোমার ঐ সঙ্গ-আসঙ্গ কি একত্রেই মিলতে পারে না ।” “জীবনে অনেক সুযোগ ঘটতে পারে। কিন্তু ঘটে না । যে মানুষ অর্ধেক রাজত্ব আর রাজকন্যা একসঙ্গেই মিলিয়ে পায় তার ভাগ্য ভালো ; যে তা না পায়, দৈবক্রমে তার যদি ডান দিক থেকে মেলে বালুর ধ্ব দিক থেকে মেলে রাজকনা , (न8 वgी कभ (नीठांश नश ।” “কিন্তু তুমি যাকে মনে কর রোম্যান্স সেইটোতে কমতি পড়ে ! একটুও না। গল্পের বই থেকেই রোম্যান্সের বাধা বরাদ্দ ছাচে ঢালাই করে জোগাতে হবে নাকি । কিছুতেই না। আমার রোম্যান্স আমিই সৃষ্টি করব। আমার স্বর্গেও রয়ে গেল রোম্যান্স, আমার মর্তেও ঘটাব রোম্যান্স। যারা ওর একটাকে বঁাচাতে গিয়ে আর-একটাকে দেউলে করে দেয়। তাদেরই তুমি বল রোম্যান্টিক ! তারা হয় মাছের মতো জলে সীতার দেয়, নয় বেড়ালের মতো ডাঙায় বেড়ায়, নয় বাদুড়ের মতো আকাশে ফেরে। আমি রোম্যান্সের পরমহংস। ভালোবাসার সত্যকে আমি একই শক্তিতে জলে স্থলে উপলব্ধি করব, আবার আকাশেও । নদীর চরে রইল আমার পাকা দখল ; আবার মানসের দিকে যখন যাত্রা করব, সেটা হবে আকাশের ফাঁকা রাস্তায় । জয় হােক আমার লাবণ্যর, জয় হােক আমার কেতকীর, আর সব দিক থেকেই ধন্য হােক অমিত রায় ।” : যতি স্তব্ধ হয়ে বসে রইল, বোধ করি কথাটা তার ঠিক লািগল না । অমিত তার মুখ দেখে ঈষৎ হেসে বললে, “দেখো ভাই, সব কথা সকলের নয় । আমি যা বলছি, হয়তো সেটা আমারই কথা ।