পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(28○ রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী অশ্রািজল করিবে মোচনসে-সময়ে আমি উঠে গিয়ে, মৃত্যুকালে মিত্র এলে লোকে যেমি চক্ষু মেলে তেন্নিতর থাকিব চাহিয়ে ।” কবি যে মন “হু হু' করার কথা লিখিয়াছেন তাহা কী প্রকৃতির বলিতে পারি না। কিন্তু এই বর্ণনা পাঠ করিয়া বহির্জগতের জন্য একটি বালক-পাঠকের মন হু হু করিয়া উঠিত। ঝরনার ধারে জলাশীকরসিক্ত স্নিগ্ধ-শ্যামল দীর্ঘকোমল ঘনঘাসের মধ্যে দেহ নিমগ্ন করিয়া নিস্তব্ধভাবে জলকলধ্বনি শুনিতে পাওয়া একটি পরম আকাঙক্ষার বিষয় বলিয়া মনে হইত ; এবং যদিও জ্ঞানে জানি যে, কুরঙ্গিণীগণ কবির দুঃখে অশ্রুপাত করিতে আসে না এবং সাধ্যমতে কবির আলিঙ্গনে ধরা দিতে চাহে না, তথাপি এই নিবন্ধরিপার্থে ঘনশম্পাতটে মানবের বাহুপাশবদ্ধ মুগ্ধ কুরঙ্গিণীর দৃশ্য অপরূপ সৌন্দর্যে হৃদয়ে সম্ভববৎ চিত্রিত হইয়া উঠিত । ‘কভু ভাবি পল্লীগ্রামে যাই, নামধাম সকল লুকাই। চাষীদের মাঝে রয়ে চাষীদের মতো হয়ে চাষীদের সঙ্গেতে বেড়াই । প্ৰাতঃকালে মাঠের উপর, শুদ্ধ বায়ু বহে ঝরঝরা, আমোদে করিব শ্রম ; সুস্থ স্মৃর্তি হবে কলেবর । সাদা সোজা গ্ৰাম্য গান ধরি সরল চাষার সনে প্রমোদ-প্রফুল্ল মনে । কাটাইবি আনন্দে শর্বরী । বরষার যে ঘোরা নিশায় সৌদামিনী মাতিয়ে বেড়ায় ভীষণ বজের নাদ, ভেঙে যেন পড়ে ছাদ, বায়ু সব কাপেন কোঠায়- ] সে নিশায় আমি ক্ষেত্ৰতীরে স্বচ্ছদে রাজার মতো ভূমে আছি নিদ্রাগত, প্ৰাতে উঠে দেখিব মিহিরে ।” কলিকাতার ছেলে পল্লীগ্রামের এই সুখময় চিত্রে যে ব্যাকুল হইয়া উঠিবে ইহাতে বিচিত্র কিছুই নাই। ইহা হইতে বুঝা যায় অসন্তোষ মানবপ্রকৃতির সহজাত । অট্টালিকা অপেক্ষা নড়বোড়ে পাতার কুটিরে যে সুখের অংশ অধিক আছে। অট্টালিকাবাসী বালকের মনে এ মায়া কে জন্মাইয়া দিল ? আদিম