পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আধুনিক সাহিত্য (8S মানবপ্রকৃতি । কবি নহে। কবিকে যিনি ভুলইয়াছেন সেই মহামায়া । কবিতায় অসন্তোষ-গানের বাহুল্য দেখা যায় বলিয়া অনেকে আক্ষেপ করিয়া থাকেন। কিন্তু দোষ কাহাকে দিব ? অসন্তোষ মানুষকে কাজ করাইতেছে, আকাঙক্ষা কবিকে গান গাওয়াইতেছে। সন্তোষ এবং পরিতৃপ্তি যতই প্রার্থনীয় হউক তাহাতে কার্য এবং কাব্য উভয়েরই ব্যাঘাত করিয়া থাকে । অ যেমন বর্ণমালার আরম্ভ এবং সমস্ত ব্যঞ্জনবর্ণের সহিত যুক্ত, অসন্তোষ ও অতৃপ্তি সেইরূপ সৃজনের আরম্ভে বর্তমান এবং সমস্ত মানবপ্রকৃতির সহিত নিয়ত সংযুক্ত। এইজন্যই তাহা কবিতায় প্রাধান্য লাভ করিয়াছে, কবিদিগের মানসিক ক্ষিপ্ততা বা পরিপাকশক্তির বিকারবশত নহে। কৃষক-কবি যখন কবিতা রচনা করে তখন সে মাঠের শোভা কুটিরের সুখ বৰ্ণনা করে না- নগরের বিস্ময়জনক বৈচিত্র্য তাহার চিত্ত আকর্ষণ कद्ध- ऊथन 6न शाशिा 9 “কী কল বানিয়েছে সাহেব কোম্পানি ! কলেতে ধোয়া ওঠে। আপনি, সজনি ! কলের বঁাশি যাহারা শুনিতেছে মাঠের বঁাশের বঁাশরি’ শুনিয়া তাহারা ব্যাকুল হয় এবং যাহারা বাশের বঁাশরি বাজাইয়া থাকে কলের বঁাশি শুনিলে তাহদের হৃদয় বিচলিত হইয়া উঠে । এইজন্য শহরের কবিও সুখের কথা বলে না, মাঠের কবিও আকাঙক্ষার চাঞ্চল্য গানে প্রকাশ করিতে চেষ্টা করে । সুখ চিরকালই দূরবতী, এইজন্য কবি যখন গাহিলেন- ‘সর্বদাই হু হু করে মন তখন বালকের অন্তরেও তাহার প্রতিধ্বনি জাগিয়া উঠিল । কবি যখন বলিলেন- · ‘কভু ভাবি ত্যেজে এই দেশ । 66 76 (श ॐ यशो क्रीद 5ा নহে মানুষের ধাম, পড়ে আছে ভগ্ন-অবশেষ । গর্বভারা অট্টালিকা যায় এবে সব গড়াগড়ি যায় বৃক্ষলতা অগণন ঘোর করে আছে বন, উপরে বিষাদবায়ু বায় । প্ৰবেশিতে যাহার ভিতরে ক্ষীণপ্ৰাণী নরে ত্ৰাসে মরে, যথায় শ্বাপদদল করে ঘোর কোলাহল, ঝিল্লি সব বি বি রব করে । তথা তার মাঝে বাস করি ঘুমাইব দিবা বিভােবরীআর কারে করি ভয়, ব্যাঘে সপোতত নয় মানুষজন্তুকে যত ডরি।” তখন এই চিত্রে ভয়ের উদয় না হইয়া বাসনার উদ্রেক হইল । যে ছেলে ঘরের বাহিরে একটি দিন যাপন করিতে কাতর হয় ঝিল্লির বাকুল বিষ্যদবায়ুবীজিত ঘনঅরণ্যবেষ্টিত ভীষণ ভগ্নাবশেষ কেন যে তাহার নিকট বিশেষরূপে প্রার্থনীয় বোধ হইল বলা কঠিন। আমাদের প্রকৃতির মধ্যে একটি বন্ধন-অসহিষ্ণু স্বেচ্ছবিহারপ্রিয় পুরুষ এবং একটি গৃহবাসিনী অবরুদ্ধ রমণী দৃঢ় অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে