পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(28 N রবীন্দ্র-রচনাবলী আবদ্ধ হইয়া আছে। একজন জগতের সমস্ত নূতন নূতন দেশ, ঘটনা এবং অবস্থার মধ্যে নব নব রসাস্বাদ করিয়া আপন অমর শক্তিকে বিচিত্র বিপুলভাবে পরিপুষ্ট করিয়া তুলিবার জন্য সর্বদা ব্যাকুল, আর-একজন শতসহস্ৰ অভ্যাসে বন্ধনের প্রথায় প্রচ্ছন্ন এবং পরিবেষ্টিত । একজন বাহিরের দিকে লইয়া যায়, আর-একজন গৃহের দিকে টানে। একজন বনের পাখি, আর-একজন খাচার পাখি । এই বনের পাখিটাই বেশি গান গাহিয়া থাকে । কিন্তু ইহার গানের মধ্যে অসীম স্বাধীনতার জন্য একটি ব্যাকুলতা একটি অভ্ৰভেদী ক্ৰন্দন বিবিধ ভাবে এবং বিচিত্র রাগিণীতে প্রকাশ পাইয়া থাকে। সিন্ধুবাদ নাবিকের অপরূপ ভ্ৰমণ এবং রবিন্সন ক্রুসোর নির্জন দ্বীপপ্রবাস মনের মধ্যে যে এক তৃষাতুর ভাবের উদ্রেক করিয়া দিত, অবোধবন্ধুর প্রথম কবিতাটি সেই ভাবকেই সংক্ষেপে সংগীতে ব্যক্ত করিয়াছিল। যে ভাবের উদয়ে পরিচিত গৃহকে প্রবাস বোধ হয় এবং অপরিচিত বিশ্বের জন্য মন কেমন করিতে থাকে বিহারীলালের ছন্দেই সেই ভাবের প্রথম প্রকাশ দেখিতে পাইয়াছিলাম। “কভু ভাবি সমুদ্রের ধারে । যথা যেন গর্জে একেবারে প্ৰলয়ের মেঘসংঘ, প্ৰকাণ্ড প্ৰকাণ্ড ভঙ্গ আক্ৰমিছে গর্জিয়া বেলারেসম্মুখেতে অসীম অপাের জলরাশি রয়েছে বিস্তার ; উত্তাল তরঙ্গ সব ফেনপুঞ্জে ধবধব, গণ্ডগোলে ছোটে অনিবার (বাতাসের হুহু রবে: কান বেশ ঠাণ্ডারবে) দেখিগে শুনিগে সে সকলে । যে সময়ে পূর্ণসুধাকর ভূষিবেন নির্মল অম্বর, চন্দ্ৰিকা উজলি বেলা বেড়াবেন করে খেলা তরঙ্গের দোলার উপরনিবেদিব তাহদের কাছে মনে মোর যত খেদা আছে । শুনি না কি মিত্রবারে দুখের যে অংশী করে ইপি ছেড়ে প্ৰাণ তার বঁাচে ।”