পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আধুনিক সাহিত্য (ፈዒ8 “সে ভাবিতেছিল খাদ্য-খাদকের অহি নকুলের যে বিষম বিদ্বেষ ভাব, ইহার জন্য কে দায়ী ? ভগবানের সংসার প্ৰেমময় না হইয়া কেন এমন হিংসাদ্বেষসংকুল হইল ?’ ইত্যাদি ইত্যাদি। এই সকল বক্তৃতা শুনিয়া ‘ব্রজ সহসা কোনো উত্তর দিতে পারিল না, কিন্তু তাহার প্রিয় সুহৃদের হৃদয়ে ব্যথা কোনখানে, বুঝিতে পারিল। বুঝিল, পুরনের দুঃখ ব্যক্তিগত নহে।” 4, টাপিন তেল মালিশ করিলে যে-সকল ব্যথা সারে, অভাব মোচন হইলে যে-সকল দুঃখ দূর হয়, উপস্থিতক্ষেত্রে সেই-সকল ব্যথা এবং সেই- সকল দুঃখই ভালো। প্রচলিত প্রবাদে গরিবের ছেলের ঘোড়ারোগকে যেরূপ অনার্থের হেতু বলিয়াছে, বাংলাদেশীয় পল্লীর ছেলের এ-সকল বড়ো বড়ো ব্যথা এবং উচুদরের দুঃখও সেইরূপ সর্বনাশের কারণ। পুরন্দরের পিতা পুরন্দরকে লইয়া বাড়ি ফিরিবার সময় পথিমধ্যে অসন্তুষ্ট প্ৰজাগণকর্তৃক নিহত হইলেন, তাহার স্ত্রী জগদ্ধাত্রী সহমৃতা হইলেন । পুরন্দর এই আঘাতে পীড়িত হইয়া বাড়ি গেলেন, সেখানে তাহার স্ত্রীর শুশ্রুষায় জীবন লাভ করিলেন, এবং তঁহাদিগকে সংসারে প্রতিষ্ঠিত করিয়া দিয়া বিধবা নিস্তারিণী শ্ৰীক্ষেত্রে চলিয়া গেলেন । এইখানে গ্ৰন্থ শেষ হইল, কিন্তু গ্ৰন্থকার ক্ষান্ত হইলেন না, তিনি আবার শেষকে নিঃশেষ করিতে বসিলেন । অকস্মাৎ একদল যবন এবং যবনী মিলিয়া কালী ও ফুলকে চুরি করিয়া লইয়া গেল- কালী জলে ঝাপাইয়া পড়িয়া মরিল- ফুল সিরাজউদ্দৌলার অন্তঃপুরে প্রবেশ করিল, পুরন্দর তাহাকে উদ্ধার করিতে গেল এবং উভয়ে ঘাতকহস্তে বিনষ্ট হইল।” এ-সমস্ত কেন ? আগাগোড়া গল্পের সহিত ইহার কী যোগ ? প্রথম হইতে এমন কী সকল অনিবাৰ্য কারণ একত্র হইয়াছিল যাহাতে গ্রন্থের এই বিচিত্র পরিণাম অবশ্যম্ভব হইয়া উঠিয়াছিল ? গ্ৰন্থকার যদি বলিতেন ‘গ্রামে হঠাৎ একটা মডক হইল এবং সকলেই মরিয়া গেল। তবে কাবা-হিসাবে তাহার সহিত ইহার প্রভেদ কী ? ১৬৬ পাতায় বইখানি সমাপ্ত । ১২২ পাতায় নিস্তারিণী তীর্থে গেলেন । তাহার পর ৪৪টি পত্রে গ্রন্থকার হঠাৎ একটা সম্পূর্ণ নূতন কাণ্ড ঘটাইয়া পাঠকগণকে চমৎকৃত করিয়া দিলেন। পূর্বে ইহার কোনাে সূত্রপাত ছিল না, ফুলকুমারীর চরিত্রের সঙ্গেও ইহার কোনাে যোগ ছিল না। এতক্ষণ গ্রন্থকার ১২২ পৃষ্ঠায় যে একটি সুন্দর সরল সমগ্ৰ কাব্য গড়িয়া তুলিয়াছিলেন, অদৃষ্টের নিষ্ঠুর পরিহাসবশত শেষের ৪৪ পৃষ্ঠায় অতি সংক্ষেপে একটি আকস্মিক বীজ নির্মাণ করিয়া তঁহার মস্তকে নিক্ষেপ করিলেন । VONKAJ S Sodo যুগান্তর যুগান্তর। সামাজিক উপন্যাস। শ্ৰীশিবনাথ শাস্ত্রী-বিরচিত শিবনাথবাবুর ‘যুগান্তর' উপন্যাসখানি পাঠ করিতে করিতে কর্তব্যক্লান্ত সমালোচকের চিত্ত বহুকাল পরে আনন্দ এবং কৃতজ্ঞতায় উচ্ছসিত হইতেছিল। এমন পর্যবেক্ষণ, এমন চরিত্রসৃজন, এমন সরস হাস্য, এমন সরল সহৃদয়তা বঙ্গসাহিত্যে দুর্লভ। লেখক বিশ্বনাথ তর্কভূষণকে আমাদের নিকট পরমায়ীয়ের ন্যায় পরিচিত করিয়া দিয়াছেন। এমন সত্য চরিত্র বাংলা উপন্যাসে ইতিপূর্বে কোথাও দেখিয়াছি বলিয়া মনে হয় না। লেখক। তঁহাকে সমস্ত তুচ্ছ ঘটনার মধ্যে প্রত্যক্ষবৎ জাজ্বল্যমান দেখিয়াছেন- তাহার চরিত্রটিকে প্রতিদিনের হাস্যে এবং অশ্রুজিলে, দোষে এবং গুণে অতি সহজেই সজীব করিয়া তুলিয়াছেন। বিরলবসতি বঙ্গসাহিত্যরাজ্যে তর্কভূষণ মহাশয় যে একটি জনসংখ্যা বৃদ্ধি ६न बार आम्ना যে একটি স্থায়ী বন্ধু লাভ করিলাম সে বিষয়ে আমাদের কোনাে সন্দেহমাত্র KR ||