পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আধুনিক সাহিত্য । \ტმ) )ა লইয়া যাইতে পারে না, তাহার একটা প্ৰচণ্ড সংঘাত, একটা ভীষণ রক্তাক্ত পরিণাম আছেই । অতএব যুরোপের রাষ্ট্রনৈতিক আদর্শকে চরম আদর্শ বিবেচনাপূর্বক তন্দ্বারা ভারতবর্ষকে মাপিয়া খাটাে করিয়া ক্ষোভ পাইবার হয়তো প্রয়োজন নাই । একটা কথা আছে, জীৰ্ণমন্নং প্রশংসীয়াৎ । যেমন করিয়াই হউক এখন ভারতবর্ষকে আর পরের চোখে দেখিয়া আমাদের সান্তুনা নাই। কারণ, ভারতবর্ষের প্রতি যখন আমাদের প্রীতি জাগ্রত হইয়া উঠে নাই তখন ভারতবর্ষের ইতিহাসকে আমরা বাহির হইতে দেখিতাম ; তখন আমরা পাঠান-রাজত্বের ইতিহাস মোগল-রাজত্বে পাঠ করিতাম । এখন সেই মোগল-রাজত্ব পাঠান-রাজত্বের মধ্যে ভারতেরই ইতিহাস অনুসরণ করিতে চাহি, ঔদাসীন্য অথবা বিরাগের দ্বারা তাহা কখনো সাধ্য নহে । সেই সমগ্র ধারণা কেবল বিচার ও গবেষণার দ্বারাও হইতে পারে না ; কল্পনা এবং সহানুভূতি আবশ্যক । বিচ্ছিন্ন ঘটনাবলীকে এক করিতে ও মৃত্যুতথ্যগুলিতে জীবনসঞ্চার করিতে যখন কল্পনা ও • সহানুভূতি নিতান্তই চাই তখন সে বিষয়ে আমরা পরের উপর নির্ভর করিলে চলিবে না। সংগ্ৰহকার্যে পরের সহায়তা লইতে আপত্তি নাই। কিন্তু সৃজনকার্যে আপনার শক্তি প্রয়োগ করিতে হইবে। ভারতবর্ষীয়ের দ্বারা ভারতবর্ষের ইতিহাস রচিত হইলে পক্ষপাতের আশঙ্কা আছে, কিন্তু পক্ষপাত অপেক্ষা বিদ্বেযে ও সহানুভূতির অভাবে ইতিহাসকে ঢের বেশি বিকৃত করে। তাহা ছাড়া এক দেশের আদর্শ লইয়া আর-এক দেশে খাটাইবার প্রবৃত্তি বিদেশীর লেখনীমুখে আপনি আসিয়া পড়ে, তাহাতেও শুভ হয় না ! হউক বা না-হউক, আমাদের ইতিহাসকে আমরা পরের হাত হইতে উদ্ধার করিব, আমাদের ভারতবর্ষকে আমরা স্বাধীনদৃষ্টিতে দেখিব, সেই আনন্দের দিন আসিয়াছে। আমাদের পাঠকবর্গকে লেথব্রিজ সাহেবের চটির মধ্য হইতে বাহির করিয়া ইতিহাসের উন্মুক্ত ক্ষেত্রের মধ্যে আনিয়া উপস্থিত করিব ; এখানে তাহারা নিজের চেষ্টায় সত্যের সঙ্গে সঙ্গে যদি ভ্রমও সংগ্রহ করেন। সেও আমাদের পক্ষে পার-লিখিত পরীক্ষাপুস্তকের মুখস্থ বিদ্যা অপেক্ষা অনেক গুণে শ্রেয়, কারণ সেই স্বাধীন চেষ্টার উদ্যম আর-একদিন সেই ভ্ৰম সংশোধন করিয়া দিবে। কিন্তু পরদত্ত চােখের ঠুলি চিরদিন বাধারাস্তায় ঘূরিবার যতই উপযোগী হউক, পরীক্ষার ঘানিবৃক্ষের তৈলনিষ্কাশনকল্পে যতই প্রয়োজনীয় হউক, নূতন সত্য অর্জন ও পুরাতন ভ্ৰম বিবর্জনের উদ্দেশে অব্যবহার্য । ধর্ম তাহার সহায় হইয়া তাহাকে রক্ষা ও তাহার উদ্দেশ্য সুসম্পন্ন করিবেন। অথবা ধর্মযুদ্ধে মৃতোবাপি তেন লোকত্ৰয়ং জিতম | NET y So? সাকার ও নিরাকার - সাকার ও নিরাকার -তত্ত্ব । শ্ৰীযৰ্তীন্দ্রমোহন সিংহ বি. এ. -প্ৰণীত ঈশ্বর সাকার কি নিরাকার এরূপ তর্ক মধ্যে মধ্যে আমাদের দেশে শুনা যায় । কিন্তু বর্তমান সমালোচ্য গ্রন্থে তর্কটা ততদূর স্কুল নহে। গ্রন্থের প্রতিপাদ্য বিষয় এই যে, ঈশ্বরকে সাকার ভাবে উপাসনা করিতে হইবে কি নিরাকার ভাবে । কেহ কেহ এ প্রশ্নের উত্তর দিয়া থাকেন যে, যে লোক নিরাকারে মন দিতে পারে না। তাহার পক্ষে সাকার উপাসনা শ্ৰেয় । কিন্তু গ্ৰন্থকার সেরূপ মাঝামাঝি কিছু বলিতে চাহেন না ; তিনি বলেন, নিরাকার উপাসনা হইতেই পারে না। হয় সোহহং ব্ৰহ্ম হইয়া যাও, নয় মূর্তিপূজা করো। তিনি কালাপাহাড়ের ঠিক বিপরীতমুখে সংহারকার্য শুরু করিয়াছেন। মূর্তিপূজাকে কেবল যে তিনি রক্ষা করিতে চান তাহা নহে, অমূর্ত