পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V9OVe রবীন্দ্র-রচনাবলী ত্যাগ করেন নাই তাহারা অসামান্য প্রতিভাবলে উদ্দীপ্ত ভাবাবেগে দৃষ্টিগোচরকেও দৃষ্টিপথ্যতীত করিয়া তুলিয়াছেন, বাধা তাহাদের নিকট বাধা নহে, র্যণ্টগেন-আবিষ্কৃত রশ্মির ন্যায় তঁহাদের মন শতপ্রাচীরবেষ্টিত জড় আবরণ অনায়াসে ভেদ করিয়া চলিয়া যাইতে পারে । কিন্তু সাধারণ লোকের কাছে বাধা যে বাধা তাহাতে সন্দেহ নাই। তাহদের মনের স্বাভাবিক জড়ত্ব জড়িকে আশ্রয় করিতে চায়, তাহাকে অতিক্রম করিতে পারে না । ইহা তাহাদিগকে অগ্রসর করে না, বিক্ষিপ্ত করিয়া দেয় । ইহা দ্বারা সে ভক্তিসুখ লাভ করিতে পারে। কিন্তু তাহা মুক্তিসুখ নহে। সকল সম্প্রদায়েরই অধিকাংশ লোক সমাজের অনুসরণে অভ্যস্ত আচার পালন করেন। ব্ৰাহ্মদের মধ্যে অনেকে নিয়মিত কতকগুলি শব্দ উচ্চারণ করেন এবং শব্দ শুনিয়া যান, এবং মূৰ্তি-উপাসকদের অনেকে বাহ্যিক পূজা ও মৌখিক জপ করিয়া কর্তব্য সারিয়া দেন। কিন্তু র্যাহারা কেবল সামাজিক ব্ৰাহ্ম নহেন, আধ্যাত্মিক ব্ৰাহ্ম, তাহাদের উপাসনাকে গ্রন্থকার যেরূপ উদভ্ৰান্ত মনে করেন তাহা সেরূপ নহে । আশ্বিন ১৩০৫ জুবেয়ার রসজ্ঞ ম্যাথ্য আর্নলড় ফরাসি ভাবুক জুবেয়ারের সহিত ইংরাজি-পাঠকদের পরিচয় করাইয়া দেন। যখন যাহা মনে আসিত জুবেয়ার তাহা লিখিতেন। কিন্তু প্ৰকাশ করিতেন না। তাহার রচনা প্ৰবন্ধ রচনা নহে, এক-একটি ভাবকে স্বতন্ত্ররূপে লিপিবদ্ধ করিয়া রাখা । পদ্যে যেমন সনেট, যেমন শ্লোক, গদ্যে এই লেখাগুলি তেমনি । , জুবেয়ারের বাক্সে দেরাজে। এই লেখা কাগজসকল স্তৃপাকার হইয়া ছিল ; তাহার মৃত্যুর চােদ্দ বৎসর পরে এগুলি ছাপা হয় ; তাহাও পাঠকসাধারণের জন্য নহে, কেবল বাছা বাছা অল্প গুটিকয়েক সমাজদারের জন্য । জুবেয়ার নিজের রচনার সম্বন্ধে লিখিয়াছেন‘আমি কেবল বপন করি, নির্মাণ বা পত্তন করি না।” অর্থাৎ তিনি ভাবগুলিকে পরস্পর গাথিয়া কিছু-একটা বানাইয়া তোলেন না, সজীব ভাবের বীজকে এক-একটি করিয়া বপন করেন । কোনো কোনো মনস্বী আপনার মনটিকে ফলের বাগান করিয়া রাখেন, তাহারা বিশেষ বিশেষ চিন্তা ও চর্চার দ্বারা চিত্তকে আবৃত করেন, চতুদিকের নিত্যবীজবর্ষণ র্তাহাদের মনের মধ্যে অনাহুত ও অবারিত ভাবে স্থান পায় না । জুবেয়ারের মন সে শ্রেণীর ছিল না, তাহার চিত্ত ফলের বাগান নহে, ফসলের ক্ষেত্র । সে ফসল নানাবিধ। ধর্ম কর্ম কলারস সাহিত্য কত কী তাহার ঠিক নাই। মুঘল সাহিত্য ও কনকলা সম্বন্ধে এক অঞ্জলি সংগ্ৰহ কৰিয়া পাঠকগণকে উপহার দিতে ইচ্ছা করি - জুবেয়ার নিজের সম্বন্ধে বলেন“যাহা জানিবার ইচ্ছা ছিল তাহা শিক্ষা করিতে বৃদ্ধবয়সের প্রয়োজন হইল, কিন্তু যাহা জানিয়াছি তাহা ভালোরূপে প্রকাশ করিতে যৌবনের প্রয়োজন অনুভব করি।” অর্থাৎ জ্ঞানের জন্য চেষ্টাজাত অভিজ্ঞতা চাই। কিন্তু প্রকাশের জন্য নবীনতা আবশ্যক। লেখার | বিষয়টির মধ্যে চিন্তার পরিচয় যত থাকে ততই তাহার গীেরব বাড়ে কিন্তু রচনার মধ্যে চেষ্টার লক্ষণ যত অল্প থাকিবে তাহার প্রকাশশক্তি ততই অধিক হইবে। জুবেয়ার নিজে যে রচনাকালা অবলম্বন করিয়াছিলেন সে সম্বন্ধে বলিতেছেন,