পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

sef sever V8S অখণ্ড বলের প্রাদুর্ভাব নাই। এখন চোরকে ধর্মের কাহিনী বলিলে যদি-বা সে না মানে তবু তার একটা ধর্মসংগত জবাব দিতে চেষ্টা করে এবং ভালো জবাবটি দিতে না পারিলে তেমন বলের সহিত কাজ করিতে পারে না । অতএব, যে-সকল ইংরাজ ভারতবষীয় সভাসমিতি ও সংবাদপত্রের বাহুল্যবিস্তারে আক্ষেপ প্ৰকাশ করে তাহারা যথার্থপক্ষে স্বদেশীয়দের জাতীয় প্রকৃতিতে ধর্মবুদ্ধির অস্তিত্ব লইয়া দুঃখ করে । তাহারা যে বয়ঃপ্ৰাপ্ত হইয়াছে, তাহারা যে নিজের ত্রুটির জন্য নিজে লজ্জিত হইতে শিখিয়াছে, ইহাই তাহদের নিকট শোচনীয় বলিয়া বোধ হয় । ዞ፡· এক হিসাবে ইহার মধ্যে কতকটা শোচনীয়তা আছে। এ দিকে ক্ষুধার জ্বালাও নিবারণ হয় নাই, ও দিকে পরের অন্নও কাড়িতে পারিব না, এ এক বিষম সংকট । জাতির পক্ষে নিজের জীবনরক্ষা এবং ধৰ্মরক্ষা উভয়ই পরমাবশ্যক । পরের প্রতি অন্যায়াচরণ করিলে যে পরের ক্ষতি হয় তাহা নহে, নিজেদের ধর্মের আদর্শ ক্রমশ ভিত্তিহীন হইয়া পড়ে। দাসদের প্রতি যাহারা অত্যাচার করে তাহারা নিজের চরিত্র ধ্বংস করে । ধর্মকে সর্বপ্রযত্নে বলবান না। রাখিলে আপনাদের মধ্যে জাতীয় বন্ধন ক্রমশ শিথিল হইয়া পড়িতে থাকে। অপর পক্ষে, পেট ভরিয়া খাইতেও হইবে। ক্ৰমে বংশবৃদ্ধি ও স্থানাভাব হইতেছে, এবং সভ্যতার উন্নতি-সহকারে জীবনের আবশ্যক উপকরণ অতিরিক্ত বাড়িয়া চলিয়াছে। অতএব পঁচিশ কোটি ভারতবাসীর অদৃষ্ট যাহাই থােক, মোটা-বেতনের ইংরাজ কর্মচারীকে এক্সচেঞ্জের ক্ষতিপূরণস্বরূপ রাশি রাশি টাকা ধরিয়া দিতে হইবে। সেইজন্য রাজকোষে যদি টাকার অনটন পড়ে তবে পণ্যদ্রব্যে মাশুল বসানো আবশ্যক হইবে । কিন্তু তাহাতে যদি ল্যাঙ্কাশিয়রের কিঞ্চিৎ অসুবিধা হয় তবে তুলার উপর মাশুল বসানো যাইতে পারে। তৎপরিবর্তে বরঞ্চ পাবলিক ওয়ার্কস কিছু খাটাে করিয়া এবং দুৰ্ভিক্ষ-ফল্ড বাজেয়াপ্ত করিয়া কাজ চালাইয়া লইতে হইবে। এক দিকে ইংরাজ কর্মচারীদিগেরও কষ্ট চক্ষে দেখা যায় না, অপর দিকে ল্যাঙ্কাশিয়রের ক্ষতিও প্ৰাণে সহ্য হয় না। এ দিকে আবার পঞ্চবিংশতি কোটি হতভাগ্যের জন্য যে কিছুমাত্র দুঃখ হয় না। তাহাও নহে। ধর্মনীতি এমন সংকটেও ফেলে ! অমনি খবরের কাগজে ঢাক বাজিয়া যায়, আহতনীড় পক্ষিসমাজের ন্যায় সভাস্থলে কর্ণবধির কলকলধ্বনি উখিত হয়, ইংরাজ ভারি চটিয়া উঠে । যখন কাজটা ন্যায়সংগত হইতেছে না বলিয়া মন বলিতেছে, অথচ না করিয়াও এড়াইবার জো নাই, সেই সময়ে ধর্মের দোহাই পাড়িতে থাকিলে বিষম রাগ হয়। তখন রিক্তহন্তে কোনো যুক্তি-অন্ত্র না থাকাতে একেবারে ঘুষি মারিতে ইচ্ছা করে। কেবল মানুষটা নহে, ধর্মশাস্ত্রটার উপরেও দিক ধরিয়া या । ভারত-মন্ত্রিসভার সভাপতি এবং অনেক মাতকাবর সভ্য ভাবগতিকে বলিয়াছেন যে, কেবল ভারতবর্ষের নহে, সমস্ত ইংরাজ-রাজ্যের মুখ চাহিয়া যখন আইন করিতে হইবে তখন কেবল স্থানীয় ন্যায়-অন্যায় বিচার করিলে চলিবে না এবং করিলে তাহা টিকিবেও না | ল্যাঙ্কাশিয়ার স্বপ্ন নহে । ভারতবর্ষের দুঃখ যেমন সত্য, ল্যাঙ্কাশিয়রের লাভও তেমনি সত্য, বরঞ্চ শেষোক্তটার বল কিছু বেশি। আমি যেন ভারত-মন্ত্রিসভায় ল্যাঙ্কাশিয়ারকে ছাড়িয়া দিয়াই একটা আইন পাস করিয়া দিলাম, কিন্তু ল্যাঙ্কাশিয়ার আমাকে ছাড়িবে কেন । কমলি নেহি ছোড়তা- বিশেষত কমলির গায়ে খুব জোর उाgछ । চতুদিকের অবস্থাকে উপেক্ষা করিয়া তাড়াতাড়ি একটা আইন পাস করিয়া শেষকালে আবার দায়ে পড়িয়া তাহা হইতে পশ্চাদবর্তী হইলেও মান থাকে না, এ দিকে আবার কৈফিয়তও তেমন সুবিধামত নাই। নবাবের মতো বলিতে পারি না যে, আমার যে অভাব হইবে আমার যেমন ইচ্ছা তাহা পূরণ করিব। ও দিকে ন্যায়বুদ্ধিতে যাহা বলে তাহা সম্পন্ন করিবার অলঙ্ঘ্য বিয়, অথচ এই সংকটের - অবস্থাটাও সাধারণের কাছে প্রকাশ করিতে লজ্জা বােধ হয়- ইহা বান্তবিকই শোচনীয় বটে। এইরূপ সময়টায় আমরা দেশী সভা এবং দেশী কাগজপত্রে যখন গোলমাল করিতে আরম্ভ করিয়া দিই তখন সাহেবের মাঝে মাঝে আমাদিগকে শাসায় এবং গবর্মেন্টু যদি-বা। আমাদের গায়ে হাত