পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

KSF SSSF V8V এই ঘটনা আজ বছর-দুয়েকের কথা হইবে। সকলেই জানেন, তাহার পরে এই দুই বৎসরের মধ্যে ইংরাজ-কর্তৃক অনেকগুলি ভারতবাসীর অপমৃত্যু ঘটিয়াছে এবং ইংরাজের আদালতে সেই সকল হত্যাকাণ্ডে একজন ইংরাজেরও দোষ সপ্রমাণ হয় নাই। সংবাদপত্রে উপর্যুপরি এই সকল সংবাদ পাঠ করা যায় এবং ভারতবষীয়ের প্রতি সেই মুণ্ডিতগুম্ফশ্বাশ্র খড়গনাসা ইংরাজ অধ্যাপকের তীব্র ঘূণাবাক্য এবং জীবন-হনন সম্বন্ধে তীহাদের নৈতিক আদর্শের শ্রেষ্ঠত্বাভিমান মনে পড়ে । মনে পড়িয়া তিলমাত্র नाङ्ना ब्लाउछ श्श का । ভারতবষীয়ের প্রাণ এবং ইংরাজের প্রাণ ফাসিকাষ্ঠের অটল তুলাদণ্ডে এক ওজনে তুলিত হইয়া থাকে। ইহা বোধ হয় ইংরাজ মনে মনে রাজনৈতিক কুদৃষ্টান্তস্বরূপে গণ্য করে। ইংরাজ এমন কথা মনে করিতে পারে, আমরা গুটিকতক প্রবাসী পঁচিশ কোটি বিদেশীকে শাসন করিতেছি । কিসের জোরে । কেবলমাত্র অস্ত্রের জোরে নহে, নামের জোরেও বটে । সেইজন্য সর্বদাই বিদেশীর মনে ধারণা জন্মাইয়া রাখা আবশ্যক- আমরা তোমাদের অপেক্ষা পঁচিশ কোটি গুণে শ্রেষ্ঠ । আমরা সমান ক্ষেত্রে আছি। এরূপ ধারণার লেশমাত্র জন্মিতে দিলে আমাদের বলক্ষয় হয় । পরস্পরের মধ্যে একটা সুদূর ব্যবধান, অধীন জাতির মনে একটা অনির্দিষ্ট সম্রাম এবং অকারণ ভয় শতসহস্ৰ সৈন্যের কাজ করে । ভারতবর্ষীয় যে কোনোদিন বিচারে নিজের প্রাণের পরিবর্তে ইংরাজকে প্ৰাণত্যাগ করিতে দেখে নাই, ইহাতে তাহার মনে সেই সম্রম দৃঢ় হয় ; মনে ধারণা হয়, আমার প্রাণে ইংরাজের প্ৰাণে অনেক তফাত । অসহ্য অপমান অথবা নিতান্ত আত্মরক্ষার স্থলেও ইংরাজের গায়ে হাত তুলিতে তাহার দ্বিধা হয় । t এই পলিসির কথা স্পষ্টত অথবা অস্পষ্টত ইংরাজের মনে আছে কি না জোর করিয়া বলা কঠিন । কিন্তু এ কথা অনেকটা নিশ্চয় অনুমান করা যাইতে পারে যে, স্বজাতীয় প্রাণের পবিত্রতা তাহারা মনে মনে অত্যন্ত অধিক করিয়া উপলব্ধি করেন । একজন ইংরাজ ভারতবষীয়কে হত্যা করিলে নিঃসন্দেহ · র্তাহারা দুঃখিত হন। সেটাকে একটা ‘গ্রেট মিস্টেক, এমন-কি, একটা ‘গ্রেট শেম মনে করাও তাহাদের পক্ষে সম্ভব । কিন্তু তাই বলিয়া তাহার শাস্তিস্বরূপে য়ুরোপীয়ের প্রাণ হরণ করা তাহারা সমুচিত মনে করিতে পারেন না । তদপেক্ষা লঘু শাস্তি যদি আইনে নির্দিষ্ট থাকিত তবে ভারতৱষীয়হত্যাপরাধে ইংরাজের শাস্তি পাইবার সম্ভাবনা অনেক অধিক হইত। যে জাতিকে.নিজেদের অপেক্ষা অনেক নিকৃষ্টতর বলিয়া বিবেচনা করা যায় সে জাতি সম্বন্ধে আইনের ধারায় অপক্ষপাতের বিধান থাকিলেও বিচারকের অন্তঃকরণে অপক্ষপাত রক্ষিত হওয়া কঠিন হইয়া উঠে । সে স্থলে প্রমাণের সামান্য ত্রুটি, সাক্ষ্যের সামান্য স্থলন এবং আইনের ভাষাগত তিলমাত্র ছিদ্রও স্বভাবতই এত বৃহৎ হইয়া উঠে যে, ইংরাজ অপরাধী অনায়াসে তাহার মধ্যে দিয়া গলিয়া বাহির হইয়া যাইতে পারে । আমাদের দেশের লোকের পর্যবেক্ষণশক্তি এবং ঘটনাস্মৃতি তেমন পরিষ্কার এবং প্রবল নহে ; আমাদের স্বভাবের মধ্যে মানসিক শৈথিল্য এবং কল্পনার উচ্ছঙ্খলতা আছে। এ দোষ স্বীকার করিতেই হয়। একটা ঘটনার মধ্যে উপস্থিত থাকিয়াও তাহার সমস্ত আনুপূর্বিক পরম্পরা আমাদের মনে মুদ্রিত হইয়া যায় না- এইজন্য আমাদেব বর্ণনার মধ্যে অসংগতি ও দ্বিধা থাকে, এবং ভয় অথবা তর্কের মুখে পরিচিত সত্য ঘটনারও সূত্র হারাইয়া ফেলি। এইজন্য আমাদের দেশীয় সাক্ষ্যের সত্যমিথ্যা সূক্ষ্মরূপে নির্ধারণ করা বিদেশীয় বিচারকের পক্ষে সর্বদাই কঠিন। তাহার উপরে অভিযুক্ত যখন স্বদেশী তখন কঠিনতা শতসহস্ৰগুণে বাড়িয়া উঠে । আরো বিশেষত যখন স্বভাবতই ইংরাজের নিকটে স্বল্পাবৃত স্বল্পাহারী স্বল্পমান স্বল্পবল ভারতবাসীর ‘প্রাণের পবিত্রতা’ স্বদেশীয়ের তুলনায় ক্ষুদ্রতমভগ্নাংশপরিমিত, তখন ভারতবর্ষের পক্ষে যথোপযুক্ত প্রমাণ সংগ্ৰহ করা একপ্রকার অসম্ভব হইয়া পড়ে। অতএব, একে আমাদের সাক্ষ্য দুর্বল, তাহাতে প্লীহা প্রভৃতি আমাদের শারীর যন্ত্রগুলিরও বিস্তর ক্রটি আবিষ্কৃত হইয়া থাকে, সুতরাং আমরা সহজে মারাও পড়ি এবং তাহার বিচার পাওয়াও আমাদের দ্বারা দুঃসাধ্য হয়। লজ্জা এবং দুঃখ সহকারে এ-সমস্ত দুর্বলতা আমাদিগকে স্বীকার করিতে হয়, কিন্তু সেইসঙ্গে এ