পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ei cei Wećły কণ্ঠরোধ সিডিশন-বিল পাস হইবার পূর্বদিনে টাউনহলে পঠিত অদ্য আমি যে ভাষায় প্রবন্ধ পাঠ করিতে উদ্যত হইয়াছি তাহা যদিও বাঙালির ভাষা, দুর্বলের ভাষা, বিজিত জাতির ভাষা, তথাপি সে ভাষাকে আমাদের কর্তৃপক্ষেরা ভয় করিয়া থাকেন। তাহার একটি কারণ, এ ভাষা তাহারা জানেন না । এবং যেখানেই অজ্ঞানের অন্ধকার সেইখানেই অন্ধ আশঙ্কার 6थऊलूभि । কারণ যাহাই হউক-না কেন, যে ভাষা আমাদের শাসনকর্তারা জানেন না এবং যে ভাষাকে তাহারা মনে মনে ভয় করেন। সে ভাষায় তাহাদিগকে সম্ভাষণ করিতে আমি ততোধিক ভয় করি । কেননা, আমরা কোন ভাব হইতে কী কথা বলিতেছি, আমাদের কথাগুলি সুন্দুঃসহ বেদনা হইতে উচ্ছসিত না দুর্বিষহ স্পর্ধ হইতে উদগীরিত, তাহার বিচারের ভার তঁহাদেরই হস্তে এবং তাহার বিচারের ফল নিতান্ত সামান্য নহে । আমি বিদ্রোহী নহি, বীর নহি, বোধ করি নির্বোধিও নহি । উদ্যত রাজদণ্ডপাতের দ্বারা দলিত হইয়া অকস্মাৎ অপঘাতমৃত্যুর ইচ্ছাও আমার নাই। কিন্তু আমাদের রাজকীয় দণ্ডধারী পুরুষটি ভাষার ঠিক কোন সীমানায় ঘাটি বাধিয়া চুপ করিয়া বসিয়া আছেন তাহা আমি স্পষ্টরূপে জানি না এবং আমি ঠিক কোনখানে পদার্পণ করিলে শাসনকর্তার লগুড় আসিয়া আমাকে ভূমিশায়ী করিবে তাহা কর্তার নিকটও অস্পষ্ট ; কারণ, কর্তার নিকট আমার ভাষা অস্পষ্ট, আমিও নিরতিশয় অস্পষ্ট, সুতরাং স্বভাবতই তাহার শাসনদণ্ড আনুমানিক আশঙ্কা-বেগে অন্ধভাবে পরিচালিত হইয়া দণ্ডবিধির ন্যায়সীমা উল্লঙ্ঘনপূর্বক আকস্মিক উল্কাপাতের ন্যায় অযথাস্থানে দুর্বল জীবের অন্তরিান্দ্রিয়কে অসময়ে সচকিত করিয়া তুলিতে পারে। এমন স্থলে সর্বতোভাবে মূক হইয়া থাকাই সুবুদ্ধির কাজ, এবং আমাদের এই দুৰ্ভাগ্য দেশে অনেকেই কর্তব্যক্ষেত্র হইতে যথেষ্ট দূরে প্রচ্ছন্ন থাকিয়া সেই নিরাপদ সদবুদ্ধি অবলম্বন করিবেন তাহারও দুই-একটা লক্ষণ এখন হইতে দেখা যাইতেছে। আমাদের দেশের বিক্রমশালী বায়ী, র্যাহারা বিলাতি সিংহনাদে শ্বেতদ্বৈপায়নগণের চিত্তেও সহসা বিভ্ৰম উৎপাদনা করিতে পারেন, তঁহাদের অনেকে বিবর আশ্রয় করিয়া বাগরোধ অভ্যাস করিতে বসিবেন— দেশের এমন একটা দুঃসময় আসন্ন। সে সময়ে দুৰ্ভাগ্য দেশের নির্বক বেদনা নিবেদন করিতে রাজদ্বারে অগ্রসর হইবে এমন দুঃসাহসিক দেশবন্ধু দুর্লভ হইয়া পড়িবে। যদিচ শাস্ত্ৰে আছে ‘রাজদ্বারে শ্মশানে চ যস্তিষ্ঠতি স বান্ধব', তথাপি শ্মশান যখন রাজদ্বারের এত অত্যন্ত নিকটবতী হইয়াছে তখন ভীত বন্ধুদিগকে কথঞ্চিৎ মার্জনা করিতে হইবে । অবশ্য, রাজা বিমুখ হইলে আমরা ভয় পাইব না। আমাদের এমন স্বভাবই নহে, কিন্তু রাজা যে কেন আমাদের প্রতি এতটা ভয় প্রকাশ করিতে আরম্ভ করিয়াছেন সেই প্রশ্নই আমাদিগকে অত্যন্ত উদবিগ্ন করিয়া তুলিয়াছে। যদিচ ইংরাজ আমাদের একেশ্বর রাজা এবং তঁহাদের শক্তিও অপরিমেয়, তথাপি এ দেশে তারা ভয়ে ভয়ে বাস করেন— ক্ষণে ক্ষণে তাহার পরিচয় পাইয়া আমরা বিস্ময় বোধ করি । অতিদূরে রুশিয়ার পদধ্বনি অনুমািনমাত্র করিলে তাহারা যে কিরূপ চকিত হইয়া উঠেন তাহা আমরা বেদনার সহিত অনুভব করিয়াছি। কারণ, প্রত্যেকবার তঁহাদের সেই হৃৎকম্পের চমকে আমাদের ভারতলক্ষ্মীর শূন্যপ্রায় ভাণ্ডারে ভূমিকম্প উপস্থিত হয়, আমাদের দৈন্যপীড়িত কঙ্কালসার দেশের ক্ষুধার অন্নপিণ্ডগুলি মুহুর্তের মধ্যে কামানের কঠিন লৌহপিণ্ডে পরিণত হইয়া যায়— সেটা আমাদের পক্ষে লঘুপাক খাদ্য নহে। r বাহিরে প্রবল শত্ৰু সম্বন্ধে এইরূপ সচকিত সতর্কতার সমূলক কারণ থাকিতেও পারে, তাহার নিগুঢ় সংবাদ এবং জটিল তত্ত্ব আমাদের জানা নাই । কিন্তু আমরা আমাদিগকে জানি । আমরা যে কোনো অংশেই ভয়ংকর নহি সে বিশ্বাস আমাদের Gł8