পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

やQや রবীন্দ্র-রচনাবলী আমাদের উপরওয়ালা তাহারা ইস্পীরিয়লবায়ুগ্ৰস্ত, তখন মনের মধ্যে স্বস্তি বোধ করি না। পাঠকেরা বলিতে পারেন, তোমার অত ভয় করিবার প্রয়োজন কী । যাহার হাতে ক্ষমতা আছে সে ব্যক্তি ইস্পীরিয়লিজমের বুলি আওড়াক বা নাই আওড়াক, তোমার মন্দ করিতে ইচ্ছা করিলে সে তো অনায়াসে করিতে পারে । অনায়াসে করিতে পারে না । কেননা, হাজার হইলেও দয়াধর্ম একেবারে ছাড়া কঠিন । লজ্জাও একটা আছে। কিন্তু একটা বড়ো-গোছের বুলি যদি কাহাকেও পাইয়া বসে। তবে তাহার পক্ষে নিষ্ঠুরতা ও অন্যায় সহজ হইয়া উঠে । অনেক লোকে জন্তুকে শুধু শুধু কষ্ট দিতে পীড়া বোধ করে। কিন্তু কষ্ট দেওয়ার একটা নাম যদি দেওয়া যায় “শিকার’ তবে সে ব্যক্তি আনন্দের সহিত হত-আহত নিরীহ পাখির তালিকা বৃদ্ধি করিয়া গৌরব বোধ করে । নিশ্চয়, বিনা উপলক্ষে যে ব্যক্তি পাখির ডানা ভাঙিয়া দেয় সে ব্যক্তি শিকারির চেয়ে নিষ্ঠুর, কিন্তু পাখির তাহাতে বিশেষ সান্তুনা নাই। বরঞ্চ অসহায় পক্ষিকুলের পক্ষে স্বভাবনিষ্ঠুরের চেয়ে শিকারির দল অনেক বেশি নিদারুণ । ’ র্যাহারা ইস্পীরিয়লিজমের খেয়ালে আছেন তাহারা দুর্বলের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব ও অধিকার সম্বন্ধে অকাতরে নির্মম হইতে পারেন এ বিষয়ে সন্দেহ নাই। পৃথিবীর নানা দিকেই তাহার দৃষ্টান্ত দেখা যাইতেছে । রাশিয়া ফিনল্যান্ড-পোল্যান্ডকে নিজের বিপুল কলেবরের সহিত একেবারে বেমালুম মিশাইয়া লাইবার জন্য যে কী পর্যন্ত চাপ দিতেছে তাহা সকলেই জানেন । এতদূর পর্যন্ত কখনোই সম্ভব হইত না যদি না রাশিয়া মনে করিত, তাহার অধীন দেশের স্বাভাবিক বৈষম্যগুলি জবরদস্তির সহিত দূর করিয়া দেওয়াই ইস্পীরিয়লিজম নামক একটা সর্বাঙ্গীণ বৃহৎ স্বার্থের পক্ষে প্রয়োজনীয়। এই স্বার্থকে রাশিয়া পোল্যান্ড-ফিনল্যান্ডেরও স্বাৰ্থ বলিয়া গণ্য করে। লর্ড কার্জনও সেইভাবেই বলিতেছেন, জাতীয়তার কথা ভুলিয়া এম্পায়ারের স্বার্থকে তোমাদের নিজের স্বাৰ্থ করিয়া তোলো । কোনো শক্তিমানের কানে এ কথা বলিলে তাহার ভয় পাইবার কারণ নাই ; কেননা, শুধু কথায় সে ভুলিবে না। বস্তুতই তাহার স্বাৰ্থ কড়ায় গণ্ডায় সপ্রমাণ হওয়া চাই। অর্থাৎ, সে স্থলে তাহাকে দলে টানিতে গেলে নিজের স্বাের্থও যথেষ্ট পরিমাণে বিসর্জন না দিলে তাহার মন পাওয়া যাইবে না। অতএব, সেখানে অনেক মধু ঢালিতে হয়, অনেক তেল খরচ না করিয়া চলে না । ইংলন্ডের উপনিবেশগুলি তাহার দৃষ্টান্ত । ইংরেজ ক্রমাগতই তাঁহাদের কানে মন্ত্র আওড়াইতেছে, “যদেতৎ হৃদয়ং মম তদন্তু হৃদয়ং তব ; কিন্তু তাহারা শুধু মন্ত্রে ভুলিবার নয়— পণের টাকা গনিয়া দেখিতেছে । হতভাগ্য আমাদের বেলায় মন্ত্রেরও কোনো প্রয়োজন নাই, পণের কড়ি তো দূরে থাক । আমাদের বেলায় বিচাৰ্য এই যে, বিদেশীয়ের সহিত ভেদবুদ্ধি জাতীয়তার পক্ষে আবশ্যক, কিন্তু ইল্পীরিয়লিজমের পক্ষে প্রতিকূল— অতএব সেই ভেদবুদ্ধির যে-সকল কারণ আছে সেগুলাকে । উৎপাটন করা কর্তব্য । , কিন্তু সেটা করিতে গেলে দেশের ভিন্ন ভিন্ন অংশের মধ্যে যে-একটা ঐক্য জমিয়া উঠিতেছে সেটাকে কোনােমতে জমিতে না দেওয়াই শ্রেয়। সে যদি খণ্ড খণ্ড চুৰ্ণ চুৰ্ণ অবস্থাতেই থাকে। তবে তাহাকে আত্মসাৎ করা সহজ । ভারতবর্ষের মতো এতবড়ো দেশকে এক করিয়া তোলার মধ্যে একটা গীেরব আছে। ইহাকে চেষ্টা করিয়া বিচ্ছিন্ন রাখা ইংরেজের মতো অভিমানীজাতির পক্ষে লজার কথা । কিন্তু ইস্পীরিয়লিজম মন্ত্রে লজ্জা দূর হয়। ব্রিটিশ এম্পায়ারের মধ্যে এক হইয়া যাওয়াই