পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Vedbr * রবীন্দ্র-রচনাবলী করিয়া ফেলিব। সমস্ত বৈচিত্র্য ও বিরোধকে একটা বৃহৎ ব্যবস্থার মধ্যে বঁাধিয়া তোলাই আমাদের পক্ষে সকলের চেয়ে বড়ো শিক্ষা। এই শিক্ষা যদি আমাদের অসম্পূর্ণ থাকে। তবে স্বায়ত্তশাসন আমাদের পক্ষে অসম্ভব হইবে । যথার্থ স্বায়ত্তশাসনের অধীনে মতবৈচিত্র্য দলিত হয় না, সকল মতই আপনার যথাযোগ্য স্থান অধিকার করিয়া লয় এবং বিরোধের বেগেই পরস্পরের শক্তিকে পরিপূর্ণরূপে সচেতন করিয়া রাখে । যুরোপের রাষ্ট্রকার্যে সর্বত্রই বহুতর বিরোধী দলের একত্র সমাবেশ দেখা যায়। প্রত্যেক দলই প্রাধান্যলাভের জন্য প্ৰাণপণে চেষ্টা করিতেছে। লেবার পাটি, সোশ্যালিস্ট প্রভৃতি এমন-সকল দলও রাষ্ট্রসভায় স্থান পাইয়াছে যাহারা বর্তমান সমাজব্যবস্থাকে নানা দিকে বিপর্যস্ত করিয়া দিতে চায়। এত অনৈক্য কিসের বলে এক হইয়া আছে, এবং এত বিরোধ মিলনকে চূর্ণ করিয়া ফেলিতেছে না। কেন । ইহার কারণ আর কিছুই নহে, এই-সকল জাতির চরিত্রে এমন একটি শিক্ষা সুদৃঢ় হইয়াছে প্রার্থিত ফলকে ছিন্ন করিয়া লইতে চায় না, নিয়মকে পালন করিয়াই জয়লাভ করিবার জন্য ধৈর্য অবলম্বন করিতে জানে। এই সংযম তাঁহাদের বলেরই পরিচয় । এই কারণেই এত বিচিত্র ও বিরুদ্ধ মতিগতির লোককে একত্রে লইয়া, শুধু তর্ক ও আলোচনা নহে, বড়ো বড়ো রাজ্য ও সাম্রাজ্য -চালনার কাৰ্য সম্ভবপর হইয়াছে । দেশের শিক্ষিতসম্প্রদায় দেশের ইচ্ছাকে প্রকাশ করিবার জন্যই এই সভাকে বহন করিতেছেন । এই উপায়ে দেশের ইচ্ছা ক্রমশ পরিস্ফুট আকার ধারণ করিয়া বল লাভ করিবে এবং সেই ইচ্ছাশক্তি ক্ৰমে কর্মশক্তিতে পরিণত হইয়া দেশের আত্মোপলব্ধিকে সত্য করিয়া তুলিবে, এই আমাদের লক্ষ্য। সমস্ত দেশের শিক্ষিতসম্প্রদায়ের সম্মিলিত চেষ্টা যে মহাসভায় আমাদের ইচ্ছাশক্তির বোধন করিতে প্ৰবৃত্ত হইয়াছে তাহার মধ্যে এমন ঔদার্য যদি না থাকে যাহাতে শিক্ষিতসম্প্রদায়ের সকল শ্রেণী ও সকল মতের লোকই সেখানে স্থান পাইতে পারেন। তবে তাঁহাতে আমাদের ক্ষমতার অসম্পূর্ণতা প্রকাশ পায় { এই মিলনকে সম্ভবপর করিবার জন্য মতের বিরোধকে বিলুপ্ত করিতে হইবে এরূপ ইচ্ছা করিলেও তাহা সফল হইবে না, এবং সফল হইলেও তাঁহাতে কল্যাণ নাই। বিশ্বসৃষ্টি-ব্যাপারে আকর্ষণ ও বিকর্ষণ, কেন্দ্ৰানুগ ও কেন্দ্রাতিগ শক্তি পরস্পর প্রতিঘাতী অথচ এক নিয়মের শাসনাধীন বলিয়া বিচিত্র সৃষ্টি বিকশিত হইয়া উঠিতে পারিয়াছে। রাষ্ট্ৰসভাতেও নিয়মের দ্বারা সংযত হইয়াও প্রত্যেক মতকেই প্রাধান্যলাভের চেষ্টা করিতে না দিলে এরূপ সভার স্বাস্থ্য নষ্ট, শিক্ষা অসম্পূর্ণ, ও ভবিষ্যৎ পরিণতি সংকীর্ণ হইতে থাকিবে । অতএব মতবিরোধ যখন কেবলমাত্র অবশ্যম্ভাবী নহে, তাহা মঙ্গলকর, তখন মিলিতে গেলে নিয়মের শাসন অমােঘ হওয়া চাই। নতুবা বরযাত্রী ও কন্যােপক্ষে উদ্ধৃঙ্খলভাবে বিবাদ করিয়া শেষকালে বিবাহটাই পণ্ড হইতে থাকে। যেমন বাষ্পসংঘাতকে লোহার বয়লারের মধ্যে বঁাধিতে পারিলে তবেই কল চলিতে পারে, তেমনি আমাদের মতসংঘাতের আশঙ্কা যতই প্রবল হইবে। আমাদের নিয়ম-বয়লারও ততই বজের ন্যায় কঠিন হইলে তবেই কর্ম অগ্রসর হইবে- নতুবা অনৰ্থপাত ঘটিতে বিলম্ব হইবে না । আমরা এ পর্যন্ত কনগ্রেসের ও কনফারেন্সের জন্য প্রতিনিধিনির্বাচনের যথারীতি নিয়ম স্থির করি নাই। যতদিন পর্যন্ত দেশের লোক উদাসীন থাকতে রাষ্ট্ৰীয় কর্তব্য সম্বন্ধে আমাদের মধ্যে কোনো মতের দ্বৈধ ছিল না ততদিন এরূপ নিয়মের শৈথিল্যে কোনো ক্ষতি হয় নাই। কিন্তু যখন দেশের মনটা Ş? প্রতিনিধিনির্বাচনকালে NOVEGK QG । এইরূপ, শুধু নির্বাচনের নহে, র ও কনফারেন্সের নহে, কনগ্রেসের ও কন এমন না করিয়া কেবল বিবাদ বঁাচাইয়া চলিবার জন্য দেশের এক-এক দল যদি এক-একটি সাম্প্রদায়িক কনগ্রেসের সৃষ্টি করেন তবে কনগ্রেসের কোনাে অর্থই থাকিবে না। কনগ্রেস সমগ্র দেশের