পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিশিষ্ট १७s অনুভব করা যায় । বরঞ্চ এই চিরনিপীড়িত জাতির নিকট নিঃসংকোচ স্বেচ্ছাচারই যথার্থ বলের ন্যায় প্ৰতিভাত হয় । আমরা যদি রাজপুরুষগণকে এমন কথা বুঝাইতে পারি যে, ন্যায়াপথ লঙ্ঘন করিলে সেটাকে আমরা বাহাদুরি জ্ঞান করি না, অন্যায়, যতই বলিষ্ঠ দেখিতে হউক আমাদের প্রাচ্য স্বভাবেও তােহা ঘূণ্য এবং নিন্দনীয় বলিয়া অনুভূত হয়, এবং সুদৃঢ় নিরপেক্ষ ভাবে সর্বত্র সর্বলোকের প্রতি যথোচিত ন্যায়দণ্ড বিধান করিবার সাহস না পাকা আমাদের নিকট দুর্বলতা বলিয়াই প্রতিভাত হইয়া থাকে, তবে আমাদের সেই কর্তব্যজ্ঞানের আদর্শকে ইংরাজ সম্মান না করিয়া থাকিতে পরিবেন না, কারণ সে যখন আমরা বহুকালব্যাপী পরাধীনতার বিষময় শিক্ষা ভুলিতে পারিব, যখন প্রবলের অন্যায়াচরণকে বিধির বিধানের স্বরূপ নীরবে অবশ্যসহ বলিয়া স্থির করিব না, যখন অন্যায়ের প্ৰতিবিধান-চেষ্টা নিশ্বফল হইলেও তাহাকে কর্তব্য বলিয়া জানিব এবং সেজন্য ত্যাগ স্বীকার ও কষ্ট সহ্য করিতে পরায়ুখ হইব না, তখন আমাদের যথার্থ আনন্দের দিন উপস্থিত হইবে। তখন ব্রিটিশ গবর্মেন্টের ন্যায়পরতা কদাচ স্বাৰ্থ পলিসি এবং ব্যক্তিবিশেষের খেয়ালের দ্বারা বিচলিত হইবে না, অটল পর্বতের ন্যায় প্রজাহৃদয়ের দৃঢ়ভিত্তির উপরে প্রতিষ্ঠিত হইবে। তখন ইংরাজের সদব্যবহার শুভদৈবক্রমে ক্ষণিক অনুগ্রহের ন্যায় আমাদের নত মস্তকের উপর নিক্ষিপ্ত হইবে না, সম্মানের ন্যায় মঙ্গলুঃ আহরিত হবে। আজ যাহা ভিক্ষাস্বরূপ প্রাপ্ত হইতেছে তখন তাহা অধিকারের নায় গ্রহণ করব । - প্রশ্ন উঠিতে পারে- উপদেশ সহজ, কিন্তু উপায়টা কী । তাহার উত্তরে বলিতে হয়, কোনো যথার্থ মঙ্গল কলাকৌশলের দ্বারা পাওয়া যায় না ; তাহার যা মূল্য তাহা সমস্তটাই দিতে হইবে, প্রত্যেককে প্ৰাণপণ করিতে হইবে, ঘরে ঘরে ভ্ৰাতা এবং সস্তানদিগকে শিক্ষা দিতে হইবে, পরিবার এবং সমাজের মধ্যে ন্যায়াচরণের অটল আদর্শ স্থাপন করিতে হইবে, নিজের ব্যবহারের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখিতে হইবে । সমস্ত ভালো কথার ন্যায় এ কথাটিও শুনিতে সহজ, করিতে কঠিন, এবং অত্যন্ত পুরাতন । কিন্তু এই পুরাতন সুদীর্ঘ প্রকাশ্য পথ ছাড়া স্থায়ী কল্যাণের আর কোনো নূতন সংক্ষিপ্ত গৃঢ় পথ প্ৰসঙ্গ-কথা S কলিকাতায় প্লেগ-রেগুলেশন যে উগ্ৰমূর্তি ধারণ করিয়া উঠে নাই। সেজন্য আমাদের নব বঙ্গাধিপের প্রতি বঙ্গদেশের কৃতজ্ঞতা উচ্ছসিত হইয়া উঠিয়াছে। যমদূতের উৎপীড়নের সহিত রাজদূতের বিভীষিকার যোগ হইলে প্ৰজাগণ একেবারে হতাশ হইয়া পড়িত। কিন্তু সেইটে নিবারণ হইয়াছে বলিয়াই যে একমাত্র আনন্দ তাহা নহে ; ইহা অপেক্ষা গুরুতর - সুখের কথা আছে। । vs. ইতিপূর্বে আমরা লক্ষ করিয়া দেখিয়াছি, প্রজারা যখন কোনো-একটা বিষয়ে একটু বেশি জিদ করিয়া বসে তখন গবর্মেন্ট তাঁহাদের অনুরোধ পালন করিতে বিশেষ কুষ্ঠিত হইয়া থাকেন- পাছে প্ৰজা প্রশ্রয় পায় । সেইজন্য আমাদের শিক্ষিত লোকের যে-সমস্ত কোলাহলকে পোলিটিকাল অ্যাজিটেশন নাম দিয়া। থাকেন তাহাকে উদ্দেশ্যসিদ্ধির পক্ষে আমরা সদুপায় বলিয়া মনে করি না। কারণ, গবর্মেন্ট এবং ভারতবষীয় ইংরাজগণ যখন এই সকল আজিটেশনওয়ালাকে আপনাদের বিরুদ্ধদল ‘বলিয়া গণ্য (?|84