পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিশিষ্ট Գ8v9 8 শ্ৰীযুক্ত বাবু পৃথীশচন্দ্র রায় -বিরচিত ‘দি পভার্টি-প্ৰব্লেমস ইন ইন্ডিয়া” – নামক সর্বসমােদরযোগ্য সারবান গ্রন্থে লর্ড ফ্যারারের একটি উক্তি উদধূত হইয়াছে ; এইখানে তাহার পুনরুদ্ধার করি ; The persons who carry on our trade on the outskirts of civilization are not distinguished by a special appreciation of the rights of others. ... When a difficulty arises between ourselves and one of the weaker nations, these are the persons whose voice is most loudly raised for acts of violence, of aggression, or of revenge. ... Our dealings in the Far East, and elsewhere have not always been such as would do credit to an honest merchant. অর্থাৎ যে-সকল ব্যক্তি সভ্যতার বহিরাঞ্চলে আমাদের বাণিজ্য বিস্তার করিয়া থাকে তাহারা অন্যের ন্যায্য স্বত্বের প্রতি বিশেষ শ্ৰদ্ধাবিত্তার জন্য বিখ্যাত নহে। যখনই আমাদের সহিত কোনো দুর্বলতর জাতির একটা সংকট বাধিয়া উঠে তখন ইহাদেরই কণ্ঠস্বর পীড়ন আক্রমণ ও প্রতিহিংসাসাধনের জন্য সর্বোচে ধ্বনিত হইয়া উঠে। দুরপ্রাচ্যদেশে এবং অন্যত্র অনেক সময় আমাদের আচরণ যেরূপ প্রকাশ পাইয়াছে তাহা সাধুপ্রকৃতি বণিকের যোগ্য নহে। রাজকর্মচারীগণ ব্যতীত অধিকাংশ ভারতবষীয় ইংরাজই বাণিজ্যজীবী । তুচ্ছতম উৎপাত উপলক্ষেই তাহারা গুরুতর আশঙ্কায় ত্ৰস্ত হইয়া উঠিবেন ইহা স্বাভাবিক । কারণ ভারতশাসনকাৰ্যকে নিজেদের স্বার্থসাধন-হিসাব ছাড়া আর-কোনো হিসাবে দেখিতে তাহারা বাধ্য নহেন । তঁহাদের মুখ হইতে এমন কথা প্রায়ই শুনা যায় যে, এ ভারতবর্ষটা টুপিওয়ালারই ভারতবর্ষ। পাগড়িওয়ালা ও খালিমাথাগুলো কেবলমাত্র তাঁহাদের চা-বাগানের কুলি, নীলক্ষেত্রের চাষি, পাট-জোগানের পাইকড়, এবং লাঙ্কাশিয়রের খরিদদার । 幽 রাজনীতির মঞ্চ সুপ্ৰশস্ত ; তাহা দেশে এবং কালে— ধর্মে এবং অর্থে সুদূরব্যাপী, তাহার উপরে যাহারা অধিষ্ঠিত হইয়া দূরবিন্তীর্ণ দৃষ্টির দ্বারা রাষ্ট্ৰীয় ব্যাপার পর্যালোচনা করেন। তঁহাদের পক্ষে প্রভূতপরিমাণ ধৈর্য ও বিচক্ষণতা আবশ্যক ; তাহারা তুচ্ছ ও বৃহৎ ব্যাপারের আপেক্ষিকতা, ক্ষুদ্র স্বার্থ ও মহৎ সার্থকতার প্রভেদ বুঝিতে সক্ষম। কিন্তু ইংরাজ বণিকগণ ভারতবর্ষকে যেখান হইতে নিরীক্ষণ করেন সে জায়য়াটা যতই উচ্চ হউক তাহার ভিত্তি সংকীর্ণ, তাহা ব্যক্তিগত বা সম্প্রদায়গত লাভক্ষতির উপর দাড়াইয়া ; একটু নাড়া খাইলেই তাহা দুলিয়া উঠে। গত বর্ষে ভূমিকম্পে কারখানাঘরের চিমনিগুলা হাতির শুড়ের মতো যেমন করিয়া দুলিয়াছিল, বড়োেলট-সাহেবের প্রাসাদ এমন দোলে নাই । ভারতবর্ষে সরকারি ও বেসরকারি ইংরাজের মতের এবং ভাবের প্রভেদ অনেকেই লক্ষ্য করিয়াছেন। ১৮৫৫ খৃস্টাব্দে মহাজন-কর্তৃক অত্যন্ত উৎপীড়িত হইয়া দলবদ্ধ সঁওতালগণ। গবর্মেন্টের নিকট দুঃখ নিবেদন করিতে আসিয়া যে দুৰ্যোগ ঘটাইয়াছিল। তদুপলক্ষে মনস্বী স্যার উইলিয়ম হান্টার সাহেব লিখিতেছেন : The Anglo-Indian community is naturally liable to apprehensions and hasty conclusions incident to a small body of settlers surrounded by an alien, and a greatly more numerous race. ... With the government rests the heavy responsibility of counteracting the matural tendency to panic on the part of the public হতভাগ্য সঁওতালদের দুঃখ কেহ দেখিল না, তাহাদের নালিশ কেহ বুঝিল না, যখন নিতান্ত অসহ্য হইয়া তাহারা দাবানলপীড়িত মৃগযুথের ন্যায় তাহাদের অরণ্যবাসভূমি ছাড়িয়া বাহির হইয়া পড়িল,