পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

୭iff}} ዓ8ዓ কপালে যেখানে পলি পড়িল পরে পাঁচ বৎসরে সেখানে বালি পড়িতে এবং তাহার পরের পঁাচ বৎসরে ভাঙন ধরিতে কোনো বাধা নাই। এই চরের উপর যদি আমরা কনগ্রেসের ভিত্তি স্থাপন করিয়া তাহার স্থায়িত্ব প্রত্যাশা করি তবে আমরা মূঢ় | কনগ্রেস যদি নিজ শক্তিতে দেশের স্থায়ী উন্নতি সাধন করিতে পারে। তবেই সে দেশের হৃদয়ের মধ্যে স্থায়ী প্রতিষ্ঠা লাভ করিবে, কিন্তু যদি বিচিত্র মেজাজের প্রভু-পরম্পরার নিকট কনস্টিটুশনাল লাঙ্গুল-আন্দোলনকেই সে আপন কর্তব্য জ্ঞান করে, তবে অদ্য রুটির টুকরা এবং কল্য লাঠির গুতা খাইয়া পথের প্রান্তে পঞ্চােত্ব লাভই তাহার অদৃষ্ট আছে। , এইরূপ ভিক্ষাবৃত্তির মধ্যে অনেক নীচত্ব। আপনি আসিয়া পড়ে। স্বাধীনক্ষমতাদৃপ্ত প্রভুর মন জোগাইতে গেলেই কপট নম্রতা, মিথ্যা আস্ফালন, সত্যগোপন এবং আত্মপ্রবঞ্চনা- দুর্বলপক্ষ স্বতই অনেক সময় নিজের অজ্ঞাতসারেও অবলম্বন করিয়া বসে । ইহাতে ক্রমশ যে হীনতা আসে ভিক্ষালব্ধ অধিকারখণ্ডে তাহা পূরণ করিতে পারে না। এইজন্য আমরা অনেক সময়ে ভাবিয়াছি, গবর্মেন্ট অবজ্ঞাসহকারে কনগ্রেসের আবেদনে কৰ্ণপাত না করিয়া আমাদিগকে শাপে-বর দিতেছেন । আমাদিগকে যথার্থ পথে প্রেরণ করিতেছেন । সে পথ আত্মশক্তির পথ । ভিক্ষা যদি পূরণ করিতেন তবে আমাদিগকে কঠিন কর্তব্যপথ হইতে ভ্ৰষ্ট করিয়া সহজ দেশহিতৈষিতার সুকোমল হীনতাপঙ্কের মধ্যে, ভিত্তিহীন আত্মশ্লাঘা, অমূলক কৃত্রিম উন্নতি, এবং অনধিকারালব্ধ আরামনিদ্রার রসাতলে লইয়া ফেলিতেন । এ কথা আমরা অন্তরের মধ্যে বুঝিতে আরম্ভ করিয়াছি। আমরা আপনাদিগকে জিজ্ঞাসা করিতেছি, এতদিন কী করিলাম, ইহাতে ফল কী হইতেছে। এতকাল যাহা বর্ষে বর্ষে প্রার্থনা করিয়া আসিতেছি। সবই যদি ইংরাজ-রাজ আমাদের জীৰ্ণ আঁচল পূর্ণ করিয়া দান করেন। তবু কি আমরা যথার্থ বড়ো হইব, অস্তরের মধ্যে সার্থকতা অনুভব করিব । এই সমস্ত প্রশ্ন এবং এই সকল সংশয় বর্ষে বর্ষে আমাদের উৎসাহ নির্বাণ করিয়া আনিতেছে । কনগ্রেসের প্রত্যেক অধিবেশনেই আমাদিগকে দেশের হিতানুষ্ঠানে খানিকটা দূর করিয়া অগ্রসর হওয়া চাই। চাকা যে কেবলমাত্র তেল ও ঠেলার দ্বারা চলে তাহা নহে, নিজের গতিবেগও তাহাকে চালনা করে । সেইরূপ কাৰ্যচক্ৰ লোকের আকর্ষণে যেমন চলে নিজের কর্মগতিতেও তেমনি বেগ প্ৰাপ্ত হয়- কাজের দ্বারা কাজ অগ্রসর হয় । কিন্তু কাজের ভার যখন পরের উপর, কেবল প্রার্থমার অধিকার আমাদের- এবং সেই পরও যখন প্রতিকূল— তখন, কিছু-যে কাজ হইতেছে তাহা অনুভব করিব কেমন করিয়া । এই লক্ষ্মীছাড়া ভিক্ষাকার্যে আমাদের উৎসাহ কিসে সজীব রাখিবে । সমালোচ্য পত্ৰখানির এক জায়গায় আভাস আছে যে, নূতনত্বের হ্রাস হওয়াতে আমাদের উৎসাহ ক্ৰমে মান হইয়া আসিতেছে । কিন্তু যেমন বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কারের সঙ্গে জগতের রহস্য অধিকতর প্রসারিত হইয়া যায় তেমনি কাজ যত সম্পন্ন হয় উদ্যমের নূতনত্ব ততই বাড়িতে থাকে। কিন্তু যেখানে কাজ নাই, কেবলই আয়োজন, সেখানে উৎসাহের নবীনতা কৃত্রিম উপায়ে রক্ষা করা। অসাধ্য। ভিক্ষাচর্য যতই নৈপুণ্যসহকারে নব নব কৌশলে নিম্পন্ন হউক, তাহাকে কাজ বলিয়া গণ্য করিতে পারি না । প্রতি বৎসর সমস্ত ভারতবর্ষ একত্র হইয়া, অন্তত একটা-কিছু কাজ আমরা নিজেরা যদি করিতে পারি, তবে সেই কৃতকার্যতার উৎসাহে পরবৎসরের কনগ্রেস আপনি সজীব হইয়া উঠিবে। দৃষ্টান্তস্বরূপ একটা কাজের উল্লেখ করিতে পারি। বোম্বাইয়ের পার্শি মহাত্মা শ্ৰীযুক্ত টাটা ভারতবর্ষে যে বিজ্ঞানপরীক্ষাশালার জন্য প্রচুর অর্থদান করিয়াছেন তাহার সহিত সমস্ত ভারতের যোগসাধন করা কেবল কনগ্রেসের ন্যায় কোনো বিশ্বভারত-সম্মিলনী সভার দ্বারাই সাধ্য। উক্ত পরীক্ষাশালা কেবলমাত্র শ্ৰীযুক্ত টাটার অর্থসাহায্য-দ্বারা সম্পূর্ণতা লাভ করিতে পারে না। ভারতের ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশের প্রতিনিধিগণ র্তাহাদের স্ব স্ব প্রদেশ হইতে চান্দা সংগ্ৰহ করিয়া যদি টাটা-সাহেবের এই প্ৰস্তাবটিকে প্রতিষ্ঠা দান করিতে পারেন তবে কনগ্রেসের জন্ম সার্থক হয় । alist