পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Գ8Եր झीझ-झऽनादळेी এইরূপ শিল্প-বাণিজ্য বিদ্যাশিক্ষা প্রভৃতি সর্ব বিষয়েই আমাদের সুগভীর দৈন্য আমাদের দেশের লোকের মুখ তাকাইয়া আছে। সমস্ত ভারতবর্ষ একত্র হইয়া তিনটে দিনের একটা দিনও সে কথার কোনো উল্লেখ হয় না, এমন মহৎ সুযোগ কেবল প্রতিকূল রাজশক্তির রুদ্ধ লীেহদ্বারের উপর মাথা কুটিয়াই ফাটিয়া যায়- ইহাতে আমাদের আশা ও উৎসাহের কারণ কী আছে জানি না। ফ্রান্স জর্মানি ইটালি প্রভৃতি য়ুরোপীয় দেশ-সকল স্বরাজ্যের বাণিজ্য-উন্নতি সাধনের জন্য যে-সকল শিল্পবিদ্যালয় বাণিজ্যবিদ্যালয় প্রভৃতি স্থাপন করিতেছেন তাহা যদি সে-সকল দেশের পক্ষেও অত্যাবশ্যক হয়, তবে আমাদের দেশে তাহার যে কিরূপ প্রয়োজন বলিয়া শেষ করা যায় না । আমাদের এ অভাব কে পূরণ করবে। রাজা যদি নাই করে তবে কি আমরা বসিয়া থাকিব এবং আবেদন করিব । আমাদের রাজা বিদেশী ; তাহারা যে রাজকর সংগ্রহ করেন তাহা মাহিনাপত্র পেনশন কম্পেনসেশন যুদ্ধবিগ্ৰহ শৈলবিহার প্রভৃতিতে অনেকটা শুষিয়া যায়। সে-সমস্ত বিস্তর বাজে-খরচ খাটাে করিয়া দেশের ধন দেশের স্থায়ী হিতসাধনে ব্যয় করিবার জন্য কনগ্রেস বহুবৎসর চীৎকার করিলেও রাজার কিরূপ মার্জি হইবে তাহা কেহই বলিতে পারে না । সেই অনিশ্চিত আশ্বাসে সুদীর্ঘ কাল বক্তৃতাদি না করিয়া আমরা যদি সমস্ত ভারতের সমবেত চেষ্টায় একটা উপযুক্ত শিল্পবিদ্যালয় স্থাপন করিতে পারি। তবে তাহাতেই কনগ্রেসের গৌরব বাড়িবে। বিদেশী রাজা নানা কারণে অনেক কাজ করিতে পারে না, স্বদেশী কনগ্রেস সেই কাজগুলি সম্পন্ন করুক। আমাদের রাজা যাহা পারে না বা করে না, কনগ্রেস তাঁহাই নিজের সাধ্যমত করিবে, ইহাই তাহার ব্ৰত হউক। বিদেশী তো আমাদের অনেক করিয়াছে, এখন স্বদেশী কী করিতে পারে তাহাই দেখাইবার সময় আসিয়াছে- বৎসর বৎসর এখন আর সেই অভ্যস্ত পুরাতন ভিক্ষার বুলি হতাশ্বাস কণ্ঠে পরের ভাষায় পরের দ্বারে ঘোষণা করিয়া লেশমাত্ৰ সুখ হয় না। যেমন আত্মীয়ের মৃত্যু দর্শনে আমাদের মনে একটা সুগভীর বৈরাগ্যের উদয় হয় এবং সেই বৈরাগ্য আমাদিগকে ক্ষণকালের জন্যও মোহবন্ধন হইতে মুক্ত করিয়া দেয়, সম্প্রতি আমাদের মনে সেইরূপ একটা রাজনৈতিক বৈরাগ্য উপস্থিত হইয়াছিল। মহামারী দুর্ভিক্ষ প্রভৃতিতে আমরা যখন অত্যন্ত উৎপীড়িত হইয়াছিলাম সেই সময় হঠাৎ আমাদের গবর্মেন্টের যেরূপ চেহারা বাহির হইয়াছিল তাহাতে বুঝিয়াছিলাম, আমরা তঁহাদের আপনার নহি । এবং তৎপূর্বে আমাদের একটা ধারণা ছিল যে, রাজ্যের বিধিব্যবস্থা সমস্তই পাকা । কিন্তু হঠাৎ যখন দেখিলাম তাহাও দ্বিধাবিদীর্ণ হইল, এবং তাহার মধ্যে দুই নাটু-ভ্রাতা কোথায় তলাইয়া গেলেন, তখন রাজবিধানের প্রতি আমাদের যে-একটা অটল শ্রদ্ধা ও নির্ভর এতদিন লালিত হইয়া উঠিতেছিল তাহার অপঘাতমৃত্যু হইল। সেই সময়ে ভারতবর্ষের আদ্যোপান্তে শিক্ষিত ব্যক্তিমাত্রের মনে একটা সুগভীর রাজনৈতিক বৈরাগ্য জন্মিয়াছিল, মোহ ছুটিয়াছিল ; বুঝিয়েছিলাম নিজের চেষ্টায় যতটুকু হয় তাহারই উপর যথার্থ স্থায়ী নির্ভর । এই বৈরাগ্য, এই চৈতন্য পরম হিতকর । ইহাতে আমাদের যথার্থ অবস্থা আমরা বুঝিতে পারি এবং আমাদের সমস্ত বিক্ষিপ্ত চেষ্টা নিজের দিকে ফিরিয়া আসে। ভিক্ষাবৃত্তির অনিশ্চিত আশ্বাসের প্রতি একান্ত ধিক্কার জন্মে। কিন্তু সেদিনের কঠিন শিক্ষা আমরা এই অল্পকালের মধ্যেই যেন ভুলিতে বসিয়াছি। কিন্তু সে শিক্ষা ভুলিবার নয় ; অন্তত দেশের দুই-চার জনের মনেও তাহা মুদ্রিত থাকিবে ; এবং সেই শিক্ষা কনগ্রেস ও কনফারেন্সকে ক্ৰমে ক্ৰমে ধীরে ধীরে এই ধিক্কত ভিক্ষাবৃত্তির অনন্ত লাঞ্ছনার পথ হইতে স্বচেষ্টায় স্বীকাৰ্যসাধনের দিকে নিঃসন্দেহ ফিরাইয়া আনিবে । তাহা যদি না আনিতে পারে তবে একদা এই কনগ্রেসকে লজ্জা নৈরাশ্য ও অপমৃত্যুর হাত হইতে কেহ রক্ষা করিতে পরিবে N >○○○