পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዒ6 br রবীন্দ্র-রচনাবলী এ প্রশ্নের উত্তরে আমাদের আলট্র-কনসার্ভেটিভ পায়োনিয়রের বক্ষঃস্থলে হেলিয়া দুলিয়া কিসের । কিন্তু যে অধিকার দিয়াছ সে কি ফিরাইয়া লইবে ।” হায় আলট্ৰা-কনসার্ভেটিভ, তুমি মস্তলোক এবং আমাদের উকিল ইস্কুলমাস্টারগণ তোমার সহিত তুলনীয় নহেন, কিন্তু আমাদের সকলেরই অধিকার অতি সামান্য, এবং ইংরাজের কথার উপরেই তাহার একমাত্র নির্ভর । তোমারও কোনো জোর নাই, উকিল-মোক্তারদেরও কোনো জোর নাই। যদি একটা অধিকার, একটা উন্নত আশ্বাসের কারণ আমাদিগকে দান করিয়া আবার তাহা ইংরাজ কাড়িয়া লন। তবে তোমরা “নোবিলিটি'-বর্গই বা কী করিবে। আর র্যাহারা স্ববুদ্ধিজীবী তাহারাই বা কী করবেন। - হে আলট্রা-কনসার্ভেটিভ, কনগ্রেসের শূন্য বাগ্নিতার প্রতি তুমি অবজ্ঞা প্রকাশ করিয়াছ এবং একটা পাকা কথা বলিয়াছ যে, কঠিন কার্যের দ্বারাই দেশের উন্নতি । কিন্তু জিজ্ঞাসা করি, আগামী শাসনকর্তা কার্জন-সাহেব আসিয়া যদি তোমাদের দশশালা বন্দোবস্তাটি কড়িয়া অন্য দশজনের মধ্যে বাটোয়ারা করিয়া দেন। তবে তোমরাই বা কী কঠিন কাৰ্যটায় প্রবৃত্ত হও ? তোমরা কী তোমাদের লাঠিয়ালগুলিকে দাঁড় করাইয়া লড়াই কর, না, কনগ্রেসেরই মতো বাগ্নিতা অবলম্বন করা ? কনগ্রেস ইংরাজ-কর্তৃপক্ষের নিকটে যাহা চায় তাহা কেবলমাত্র বাগ্নিতার দ্বারা চায়, কঠিন কর্যের দ্বারা চায় না- আমাদের আলট্ৰা-কনসার্ভেটিভ-মহাশয়েরা কি তাহার বিপরীত কোনো দৃষ্টান্ত দেখাইতে ইচ্ছুক আছেন । আমাদের আলট্ৰা-কনসার্ভেটিভ। যদিচ মহােচ্চ জমিদার-সম্প্রদায়ভুক্ত তথাপি তাহার সংসারজ্ঞান যে একেবারেই নাই তাহা বলিতে পারি না। র্তাহার একটা কথায় অত্যন্ত চতুরতা প্রকাশ পাইয়াছে। তিনি বলিয়াছেন, কনগ্রেস যে প্রচুর রাজভক্তি প্রকাশ করে, গোড়াতেই মহারানীর জয়কীর্তন রুরিয়া কার্য আরম্ভ করে— ইহার অপেক্ষা চালাকি তাহার পক্ষে আর কিছুই হইতে পারে না। বাস্তবিক, চোরের কাছে চোর ধরা পড়ে । আমাদের দেশে একটা প্ৰবাদ আছে, অতিভক্তি চোরের লক্ষণ । সেই অতিভক্তি কনগ্রেসই প্রকাশ করুন। আর আমাদের আলট্ৰা-কনসার্ভেটিভ-সম্প্রদায়েরাই করুন, ইহার প্রধান উদ্দেশ্য চুরি। র্যাহারা ডাফরিনফন্ডে টাকা দেন, ভূতপূর্ব সাহেব-কর্মচারীদের অভূতপূর্ব পাষাণপ্ৰতিমা প্রতিষ্ঠা-দ্বারা দেশকে ভারাতুর করিয়া তোলেন, পায়োনিয়রকে গোপনে জিজ্ঞাসা করো দেখি তীহাদের অতিভক্তির মূল্য কি সাহেবেরা বোঝে না । ইহার মধ্যে ফাকি দিয়া কিছু কি আদায়ের চেষ্টা নাই। আলট্রাগণ নাহয় নিজের জন্য উপাধি সন্ধান করেন, কনগ্রেস নাহয় দেশের জন্য একটা-কিছু সুযোগের চেষ্টায় থাকেন, পরন্তু ভক্তি-জিনিসটাকে ব্যবহারে লাগানো হইয়া থাকে । এ ভক্তিকে ঠিক বলা যায় না The desire of the moth for the star Of the night for the morrow, The devotion to something afar From the sphere of our sorrow তবু অতিভক্তিতে তোমাদের কাছে কনগ্রেসকে হার মানিতে হইবে। একবার ভাবিয়া দেখো, তুমি যে রাজভক্তির প্রচুর তৈল-লেপনে পায়োনিয়র পত্রটাকে সিক্ত করিয়া তুলিয়াছ তাহার মধ্যে কত অভিসন্ধিই আছে। ঐ-যে মুগ্ধ চক্ষু সাহেবের মুখের উপর স্থাপন করিয়া অশ্রুগদগদ কণ্ঠে বলিতেছ, সাহেব, তোমারই জন্য দেশের লোকের কাছে গাল খাইলাম (অতএব কিছু আশা রাখি !)- ঘর কৈানু বাহির বাহির কৈানু ঘর, পর কৈানু আপনি আপন কৈানু পর (অতএব কিঞ্চিৎ সুবিধা চাই)- নাথ, তুমি বল কনগ্রেস মন্দ, আমিও বলি তাই (অতএব দেশের লোকের মাথার উপরে আমাকে চড়াইয়া দাও !)- বঁধু, তুমি মনিসিপ্যালিটি হইতে দিশি জঞ্জাল বিদায় করিয়া বিলাতির আমদানি করিতে চাও, সেই হচ্ছে ‘জেনারেল সেন্টিমেন্ট অফ দি ক্লাস টু হিব্বাচ আই হ্যাভ দি অনার টু বিলঙ্গ (অতএব তোমার পাদপীঠপার্থে আমাদিগকে স্থান দিয়ো !)- ভারতবর্ষের মন্ত্রসভাই বলে আর পৌরসভাই