পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিশিষ্ট • ዓ¢ø বলো, সমস্ত আগাগোড়া নূতন নিয়মে পরিবর্তন করা আবশ্যক (অর্থাৎ, সকল সভাতেই তুমি বস সিংহাসন জুড়িয়া, আর আমি বসি তোমার কোলে !!) ইতি তোমার আদরের অতিভক্ত আলট্ৰা-কনসার্ভেটিভ । এমন শুভদিন কখনোই আসিবে না, কিন্তু যদি দৈবাৎ আসে, যদি কোনো কারণে সাহেবের প্রসাদ হইতে বঞ্চিত হইয়া কনগ্রেসের নিকট হইতেই সম্মান সৌভাগ্য ও সহায়তার প্রত্যাশা জন্মে। তবে অতিভক্তির প্রবল স্রোত কি কনগ্রেসের দিকেই ফিরিয়া আসে না। তখনো কি রাজা-রায়বাহাদুরগণ সাহেবের ডালি জোগান এবং পায়োনিয়রে পত্র লেখেন । সাংসারিক ভক্তির এই নিয়ম । তাহা নিঃস্বাৰ্থ নহে। যেখানে পাওনার সম্পর্ক নাই সেখানে আলট্ৰা-কনসার্ভেটিভেরও যদুপ মনের ভােব গবর্মেন্ট-কলেজের ভূতপূর্ব ছাত্রেরও তদুপ। মনুষ্যচরিত্রের মধ্যে বৈষম্য এতই যৎসামান্য । । উভয় পক্ষের মধ্যে কেবল একটা গুরুতর প্রভেদ আছে। ভূতপূর্ব ছাত্র দেশের হিত্যেদেশে “হার্ড ওয়ার্কে যদি-বা অপটু হন অন্তত র্তাহার “এস্পটি এলোকোয়েন্স ও আছে, কিন্তু আমাদের আলট্র-কনসার্ভেটিভটি যে সম্প্রদায়ের মুখোজ্জল করেন তাহারা বাগ্নিতার জন্যও বিখ্যাত নহেন, ‘কঠিন কর্মও তঁহাদের কর্ম নহে। তাহারা শিক্ষাকেও অবহেলা করেন এবং সামর্থ্য হইতেও বঞ্চিত । তাহাদের ধন আছে ; দেশের হিত্যেদেশে সে ধন যদি ব্যয় করিতে পারিতেন তবে বাকবীর ও কর্মবীর সকলের উপরে উঠিতে পারিতেন ; কারণ, কবি বলিয়াছেন Ᏸ শতেষু জায়তে বক্তা সহস্ৰেষু চ পণ্ডিতঃ। শুরো দশসহস্ৰেষু দাতা ভবতি বা নবা | কিন্তু সম্প্রতি দানে যিনি আমাদের দেশে আদর্শ বলিয়া বিখ্যাত হইয়াছেন তিনি অধ্যাপক ছিলেন, দেশে তঁহার কোনো ‘স্টেক' ছিল না, এবং তঁহারই উদার বদান্যতায় ‘প্রেজেন্ট সিস্টেম অফ প্র্যাকটিক্যালি ফ্রী এডুকেশন এই দীনহীন দেশে বদ্ধমূল হইতে পারিয়াছে। \906 বিরোধমূলক আদর্শ ওগুসৎ ব্রেয়াল কনটেমপোরারি রিভিয়ু পত্রে আক্ষেপ করিয়াছেন যে, ফরাসি ইংরাজকে জানে না, ইংরাজী ফরাসিকে বোঝে না । ফরাসিকে যদি জিজ্ঞাসা করা যায় ইংরাজের প্রতি তোমার এত বিদ্বেষ কেন— উত্তর পাওয়া যাইবে, ইংরাজী মানুষটাকে আমার খারাপ লাগে না, কিন্তু ইংরাজ জাতটার উপর আমার ঘূণা। য়ুরোপের বিদ্যালয়ে যে ইতিহাস শিক্ষা দেওয়া হয় তাহাতে অন্য দেশের প্রতি বিরোধ প্রকাশ করিয়া নিজেদের দেশের গৌরব ঘোষণা করা হয় । প্যাট্রিয়টিক ভাবের প্রতি লক্ষ করিয়া ছেলেদিগকে অন্য দেশের সহিত স্বদেশের সাবেক কালের ঝগড়ার কথা স্মরণ করাইয়া, ভবিষ্যৎ পর্যন্ত সেই বিরোধ টানিয়া রাখা হয়। কর্সিকাদেশের মাতৃগণ, অন্য পরিবারের সহিত স্বপরিবারের কুলক্ৰমাগত যে বিদ্বেষ চলিয়া আসিতেছে এবং তাহদের প্রতি যে প্রতিহিংসা করিবার আছে, শিশুকাল হইতে সন্তানের কানে তাহা জপ করিতে থাকে। য়ুরোপীয় বিদ্যালয়ে ইতিহাস-পড়ানোও ঠিক সেইরূপ। আজকাল ইংলন্ডে খুব-একটা লড়াইয়ের নেশা চাপিয়াছে। সৈনিক-দিলে ভিড়িবার জন্য ডাক । পড়িয়ছে। এই ডাক অন্য-সকল বাণীকে আচ্ছন্ন করিয়া ধ্বনিত হইতেছে। ফ্রান্সও যে এ বিষয়ে নিরপরাধ, তাহা নহে। এখন দুই পক্ষের পালোয়ান সাহিত্যে পরস্পরকে শাসাইতেছে। ব্রিটিশ চ্যানেলের দুই পারে এক দল খবরের কাগজ সৈনিকতার রাস্তা দিয়া বর্বরতায় পৌছবার জন্য ঝুঁকিয়া দাড়াইয়াছে। লেখক আক্ষেপ করিয়া বলিতেছেন, ব্যক্তিগত ধর্মনীতি হইতে ন্যাশনাল ধর্মনীতির