পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিশিষ্ট Գ Գֆ আমরা কোনোক্রমেই অন্যায় বলিয়া মনে করিতে পারিব না।” দুটি চোখের ঠিক একটি চোখ সাগরের এ পারে এবং একটি চোখ ও পারে রাখিলে ন্যায়দণ্ড কতকটা সিধা থাকিত । কিন্তু দেউস্কর মহাশয়েরুশািন্থখানি কি তাহাই প্রমাণ করিয়াছে। আসল কথা, স্থা আজকাল অনেকেই মনেকরি নাশলালিটির স্পর্শমণির স্পর্শে সমস্ত অনায় সােনার চল হইয়া যাহা হউক, আমাদিগকে নেশন বঁাধিতে হইবে- কিন্তু বিলাতের নকলে নহে । আমাদের জাতির মধ্যে যে নিত্যপদার্থটি, যে প্ৰাণপদার্থটি আছে, তাহাকেই সর্বতোভাবে রক্ষা করিবার জন্য আমাদিগকে । ঐক্যবদ্ধ হইতে হইবে- আমাদের চিত্তকে, আমাদের প্রতিভাকে মুক্ত করিতে হইবে ; আমাদের সমাজকে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও বলশালী করিতে হইবে। এ কার্যে স্বদেশের দিকে আমাদের সম্পূর্ণ হৃদয়, স্বদেশের প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা চাই- যাহা শিক্ষা ও অবস্থার গুণে অন্য দিকে ধাবিত হইয়াছে তাহাকে ঘরের দিকে ফিরাইতে হইবে । আশা করি, দেউস্কর মহাশয়ের বইখানি আমাদিগকে সেই পথে যাত্রার সহায়তা করিবে- আমাদিগকে পুনঃপুন নিস্ফল আন্দোলনের দিকেই উৎসাহিত করিবে না । >○> > i ব্যাধি ও প্ৰতিকার কিছুকাল হইতে বাংলাদেশের মনটা বঙ্গবিভাগ উপলক্ষে খুবই একটা নাড়া পাইয়াছে। এইবার প্রথম দেশের লোক একটা কথা খুব স্পষ্ট করিয়া বুঝিয়াছে। সেটা এই যে, আমরা যতই গভীররূপে বেদনা পাই-না কেন, সে বেদনার বেগ আমাদের গবর্মেন্টের নাড়ীর মধ্যে প্রবেশ করিয়া তাহাকে কিছুমাত্র বিচলিত করিতে পারে না । গবমেন্ট আমাদের হইতে যে কতদূর পর তাহা আমাদের দেশের সর্বসাধারণ ইতিপূর্বে এমন স্পষ্ট, করিয়া কোনোদিন বুঝিতে পারে নাই । কর্তৃপক্ষ সমস্ত দেশের লোকের চিত্তকে এমন কঠোর ঔদ্ধত্যের সহিত অবজ্ঞা করিতে পারিল কোন সাহসে, এই প্রশ্ন আমাদের মনকে কিছুকাল হইতে কেবলই পীড়িত করিয়াছে। ইহাতে আমাদের প্রতি মমত্বের একান্ত অভাব প্রকাশ পাইয়াছে- কিন্তু শুধু কি তাই। এই কি প্ৰবীণ রাষ্ট্রনীতিকের পন্থা। রাজাই যেন আমাদের পর, কিন্তু রাষ্ট্রনীতি কি দেশের সমুদয় লোককে একেবারে নগণ্য করিয়া চলিতে পারে । যখন দেখি- পারে, তখন মনের মধ্যে কেবল অপমানের ব্যথা নহে, একটা আতঙ্ক জাগিয়া উঠে । আমাদের অবস্থা যে কিরূপ নিঃসহ উপায়বিহীন, কিরূপ সম্পূর্ণ পরের অনুগ্রহের উপর নির্ভর করিয়া আছে, আমাদের নিজের শক্তি যে এতটুকুও অবশিষ্ট নাই যে রাষ্ট্রনীতির রথটা আমাদের প্রবল অনিচ্ছাকেও একটি ক্ষুদ্র বাধা জ্ঞান করিয়াও অল্পমাত্র বঁাকিয়া চলিবে, ইহা যখন বুঝি তখন নিরুপায়ের মনেও উপায়-চিন্তার জন্য একটা ক্ষোভ জন্মে । কিন্তু আমাদের প্রতি রাষ্ট্রনীতির এতদূর উপেক্ষার কারণ কী । ইহার কারণ, আমাদের দ্বারা কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নাই। কেন নাই। আমরা বিচ্ছিন্ন, বিভক্ত । আমাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ঢেউ কাহাকেও জোরে আঘাত করিতে পারে না । সুতরাং কোনো কারণে ইহার সঙ্গে আপাস করিবার কোনোই প্রয়োজন হয় না। এমন অবস্থায় আমাদের কোনো ইচ্ছা বা অনিচ্ছা আমরা যদি মনের আবেগে কিছু উচ্চকণ্ঠে প্ৰকাশ করি তবে উচ্চ-আসনের লোকেরা সেই অশক্ত আস্ফালনকে কখনোই বরদাস্ত করিতে পারেন না । ইচ্ছার পশ্চাতে যেখানে শক্তি নাই সেখানে তাহা স্পর্ধা । এমন অবস্থায় ক্ষতি করিবার শক্তি আমাদের কোথায় আছে তাহা একাগ্রামনে খুঁজিয়া দেখিবার ইচ্ছা! হয়। ইহা স্বাভাবিক। এই ইচ্ছার তাড়নাতেই ‘স্বদেশী উদযোগ হঠাৎ অল্পদিনের মধ্যেই আমাদের দেশে এমন প্রবল হইয়া উঠিয়াছে। আমরা তোমাদের জিনিস কিনি বলিয়া তোমাদের কাছে (?|60