পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

broSR রবীন্দ্র-রচনাবলী মনে মনে আত্মসমৰ্পণ করিল । তখন কেমন করিয়া তাহার চারি দিকে আগুন লাগিল, অন্তরের রাজাকে ছাড়িতেই কেমন করিয়া তাহাকে লইয়া বাহিরের নানা মিথ্যা-রাজার দলে লড়াই বাধিয়া গেলে- “সেই অগ্নিদাহের ভিতর দিয়া কেমন করিয়া আপন রাজার সহিত তাহার পরিচয় ঘটিল, কেমন করিয়া দুঃখের আঘাতে তাহার অভিমান ক্ষয় হইল এবং অবশেষে কেমন করিয়া হার মানিয়া প্রাসাদ ছাড়িয়া পথে দাড়াইয়া। তবে সে তাহার সেই প্রভুর সঙ্গলাভ করিল, যে প্ৰভু কোনো বিশেষ রূপে বিশেষ স্থানে বিশেষ দ্রব্যে নাই, যে প্ৰভু সকল দেশে সকল কালে, আপন অন্তরের আনন্দরসে র্যাহাকে উপলব্ধি করা যায়- এ নাটকে তাহাঁই বর্ণিত হইয়াছে । وادي لا عT | هيكس যোগাযোগ যোগাযোগ ১৩৩৬ সালের আষাঢ় মাসে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় । বিচিত্রা পত্রে যোগাযোগ ধারাবাহিক ভাবে (আশ্বিন ১৩৩৪ - চৈত্র ১৩৩৫) প্রকাশিত হইয়াছিল। প্রথম দুই সংখ্যায় উপন্যাসটির নাম ‘তিন পুরুষ ছিল। তৃতীয় বারে কবি ইহার “যোগাযোগ’ নাম দেন । এই উপলক্ষে বিচিত্রায় (অগ্রহায়ণ ১৩৩৪) যে কৈফিয়ত প্ৰকাশিত হয় তাহা নিম্নে মুদ্রিত হইল न्माउँक्र ‘তিন পুরুষ’ নাম ধরে আমার যে গল্পটা বিচিত্রায় বের হচ্ছে তার নাম রক্ষা করতেই হবে এমন কোনো দায় নেই । কঁচা থাকতে থাকতেই ও নামটা বদল করব বলে স্থির করেছি। পাঠক-দরবারে তার কারণ নির্দেশ করি । নবজাত কুমারকুমারীদের নাম দেবার জন্যে আমার কাছে অনুরোধ এসে থাকে, অবকাশমত সে অনুরোধ পালন করেও এসেছি। কারণ এতে কোনো দায়িত্ব নেই। ব্যক্তিসম্বন্ধে মানুষের নাম তার বিশেষণ নয়, সম্বোধন মাত্র । লাউয়ের বেঁটা নিয়ে লাউয়ের বিচার কেউ করে না, ওটাতে ধরবার সুবিধে । যার নাম দিয়েছি সুশীল তার শীলতা নিয়ে আমার কোনো জবাবদিহি নেই। সুশীল ঠিকানায় পত্র পাঠালে শব্দের সঙ্গে প্রয়োগের অসংগতিদোষ নিয়ে ডাকপেয়াদা কাগজে লেখালেখি করে না, ঠিক জায়গায় চিঠি পৌঁছােয়। ব্যক্তিগত নাম ডাকবার জন্যে, বিষয়গত নাম স্বভাবনির্দেশের জন্যে । মানুষকেও যখন ব্যক্তি বলে দেখি নে, বিষয় বলে দেখি, তখন তার গুণ বা অবস্থা মিলিয়ে তার উপাধি দিই- কাউকে বলি বড়োবাউ, কাউকে বলি মাস্টারমশায় । । সাহিত্যে যখন নামকরণের লগ্ন আসে। দ্বিধার মধ্যে পড়ি । সাহিত্যরচনার স্বভাবটা বিষয়গত না ব্যক্তিগত এইটে হল গোড়াকার তর্ক । বিজ্ঞানশাস্ত্ৰে বিষয়টাই সর্বেসর্বা, সেখানে গুণধর্মের পরিচয়ই একমাত্র পরিচয় । মনস্তত্ত্বঘটিত বইয়ের শিরোনামায় যখনই দেখব “স্ত্রীর সম্বন্ধে স্বামীর ঈর্ষা, বুঝাব বিষয়টিকে ব্যাখ্যা-দ্বারাই নামটি সার্থক হবে । কিন্তু ‘ওথেলো” নাটকের যদি ঐ নাম হত পছন্দ করতুম না। কেননা, এখানে বিষয়টি প্রধান নয়, নাটকটিই প্রধান। অর্থাৎ আখ্যানবস্তু, রচনারীতি, চরিত্র-চিত্র, ভাষা, ছন্দ, ব্যঞ্জনা, নাট্যরস, সবটা মিলিয়ে একটি সমগ্ৰ বস্তু । একেই বলা চলে ব্যক্তিরূপ । বিষয়ের কাছ থেকে সংবাদ পাই, ব্যক্তির কাছ থেকে তার শুৱনিত লস পাই। বিষয়কে বিশেষণের দ্বারা মনে ধৰি, ব্যক্তিকে সম্বোধনের দ্বারা No 3R এমন একটা-কিছু অবলম্বন করে গল্প লিখতে বসলুম যাকে বলা যেতে পারে বিষয়। যদি মূর্তি গড়তেম একতাল মাটি নিয়ে বসতে হত । অতএব ওটাকে ‘মাটি শিরোনামায় নির্দেশ করলে বিজ্ঞানে বা তত্ত্বজ্ঞানে বাধত না । বিজ্ঞান যখন কুণ্ডলকে উপেক্ষা করে তার সোনার তত্ত্ব