পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় уOO) আলোচনা করে তখন তাকে নমস্কার করি। কিন্তু কনের কুণ্ডল নিয়ে বার যখন সেই আলোচনাটাকেই প্রাধান্য দেয় তখন তাকে বলি বর্বর। রসশাস্ত্ৰে মূর্তিটা মাটির চেয়ে বেশি, গল্পটাও বিষয়ের চেয়ে বড়ো । এইজন্যে বিষয়টাকেই শিরোধাৰ্য করে নিয়ে গল্পের নাম দিতে আমার মন যায় না । বস্তুত রসসৃষ্টিতে বৈষয়িকতাকে বড়ো জায়গা দেওয়া উচিত হয় না। যারা বৈষয়িক প্রকৃতির পাঠক তাদের দাবির জোরে সাহিত্যরাজ্যে হাটের পত্তন হলে দুঃখের বিষয় ঘটে । হাটের মালিক বিষয়বুদ্ধিপ্রধান বিজ্ঞান । এদিকে সম্পাদক এসে বলেন, সংসারে নাম রূপ দুটােই অত্যাবশ্যক। আমি ভেবে দেখলুম, রূপের আমরা নাম দিই, বস্তুর দিই সংজ্ঞা । সন্দেশ যেখানে রূপ সেখানে তাকে বলি “অবাক চাকি', যেখানে বস্তু সেখানে তাকে বলি মিষ্টান্ন। সম্পাদকমশায়ের সংজ্ঞা হচ্ছে “সম্পাদক, এখানে অর্থ মিলিয়ে আদালতে হলফ করে বলতে পারি শব্দের সঙ্গে বিষয়ের ষোলো-আনা মিল আছে । কিন্তু যেখানে তিনি বিষয় নন, রূপ, অর্থাৎ স্বতন্ত্র ও একমাত্র, সেখানে কোনো একটামাত্র সংজ্ঞা দিয়ে তাকে বাধা অসম্ভব । সেখানে তঁর আছে নাম । সেই নামের সঙ্গে মিলিয়ে শত্রু মিত্র কেউ তার যাচাই করে না । পিতামাতা যদি তাকে সম্পাদক' নামই দিতেন তবে নাম সার্থক করবার জন্যে সম্পাদক হবার কোনো দরকারই তার থাকত না । গল্প জিনিসটাও রূপ ; ইংরেজিতে যাকে বলে ক্রিয়েশন । আমি তাই বলি গল্পের এমন নাম দেওয়া উচিত নয়। যেটা সংজ্ঞা, অর্থাৎ যেটাতে রূপের চেয়ে বস্তুটাই নির্দিষ্ট । "বিষবৃক্ষ’ নামটাতে আমি আপত্তি করি । ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ নামে দোষ নেই। কেননা ও নামে গল্পের কোনো ব্যাখ্যাই করা হয় নি । সম্পাদকমশায় যখন গল্পের নামের জন্যে পেয়াদা পাঠালেন তাড়াতাড়ি তখন ‘তিন পুরুষ নামটা দিয়ে তাকে বিদায় করা গেল । তার পরীক্ষণেই নামটা কাহিনীর আঁচলের সঙ্গে তার গ্ৰন্থিবন্ধন করে নিয়ে কানে কানে মুহুর্তে মুহুর্তে বলতে লাগল ; যব্দেতৎ অৰ্থং মম তদন্তু রূপং তব । আমার সঙ্গে তোমাকে সম্পূর্ণ মিলে চলতে হবে। 'ছায়েবানুগতাস্বচ্ছা’ ইত্যাদি । কাহিনী বলে, তার মানে কী হল ? নাম বলে, বাক্যে ভাবে আজ থেকে আমাকে সপ্ৰমাণ করে চলাই তোমার ধর্ম। কাহিনী বলে, রেজিস্টার বইয়ে কর্তার তাড়ায় সম্মতি সই করেছি বটে, কিন্তু আজ আমি হাজার হাজার পাঠকের সামনে দাড়িয়েই সেটা বেকবুল যেতে চাই । কর্তা বলেন, তিন পুরুষের তিন-তোরণ-ওআলা। রাস্তা দিয়ে গল্পটা চলে আসবে এই আমার একটা খেয়ালমাত্র ছিল। এই চলাটা কিছুই প্রমাণ করবার জন্যে নয়, নিছক ভ্ৰমণ করবার জন্যেই। সুতরাং এই নামটা ত্যাগ করলে আমার গল্পের কোনো স্বত্বের দলিল কাচবে না। অতএব সর্বসমক্ষে আমার গল্প আজ তার নাম খোওয়াতে বসেছে । আমরা তিন সত্যের জোর মানি ; বিচিত্রার পাতায় নাম সম্বন্ধে দুইবার সত্যপাঠ হয়ে গেছে। তিনবারের বেলায় মুখ চাপা দেওয়া গেল । আর-একটা নাম ঠাউরেছি। সেটা এতই নির্বিশেষ যে গল্পমাত্রেই নির্বিচারে খাটতে পারে । সরকারি জিনিসমাত্রেরই মতো সে নামে চমৎকারিতা নেই। নাই বা রইল। জাপানে দেখেছি, তলোয়ারের ফলকটার উপরে কারিগর যখন তার কারুকলার আনন্দ ঢেলে দেয় খাপটকে তখন নিতান্ত নিরলংকার করে রাখে। গল্প নিজেই নিজের পরিচয় দেবার সাহস রাখে যেন, নামটাকে । যেন জোর গলায় আগে আগে নকিবগিরি করতে না পাঠায় । ‘তিন পুরুষ’ নাম ঘুচিয়ে আমার গল্পের নাম দেওয়া গেল যোগাযোগ । 8 VENGIKK RA 'किला' छाशछि । शाभद्ध oथ