পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bro8 রবীন্দ্র-রচনাবলী শেষের কবিতা শেষের কবিতা ১৩৩৫ সালে রচিত ও প্রবাসী পত্রের ভাদ্র হইতে চৈত্র সংখ্যায় প্ৰথম প্ৰকাশিত হয় । 聪 গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ১৩৩৬ বঙ্গাব্দের ভাদ্র মাসে । শেষের কবিতার “নিঝরিণী।’ (মহুয়া কাব্যে এই নামে সংকলিত) কবিতাটি (দ্রষ্টব্য পৃ ৩১৫-১৬) স্বতন্ত্রভাবে পাঠ্যগ্রন্থে গৃহীত হইলে, অনেকে অর্থজিজ্ঞাসু হইয়া রবীন্দ্রনাথকে পত্ৰ লেখেন । সুনীলচন্দ্র সরকারের পত্রের উত্তরে রবীন্দ্রনাথ লেখেন শেষের কবিতা গ্রন্থে ‘নিঝরিণী’ কবিতার বিশেষ উপলক্ষে বিশেষ অর্থ ছিল । তার থেকে বিশ্লিষ্ট করে নেওয়াতে তার একটা সাধারণ অর্থ খুঁজে বের করা দরকার হয় । আমার মনে হয় সেটা এই যে, আমাদের বাইরে বিশ্বপ্রকৃতির একটি চিরন্তনী ধারা আছে, সে আপন সূৰ্য-চন্দ্র আলো-আঁধার নিয়ে সর্বজনের সর্বকালের । জ্যোতিষ্কলোকের ছায়া দোলে তার ঝনার ছন্দে । জীবনে কোনো বিপুল প্রেমের আনন্দে এমন একটা পরম মুহুর্ত আসতে পারে যখন আমার চৈতন্যের নিবিড়তা আপনাকে অসীমের মধ্যে উপলব্ধি করে, তখন বিশ্বের নিত্য-উৎসবের সঙ্গে মানবচিত্তের উৎসব মিলিত হয়ে যায়, তখন বিশ্বের বাণী তারই বাণী হয়ে ওঠে । -রবীন্দ্রনাথের পত্র । ৫ বৈশাখ ১৩৪৩ এইরূপ অন্যান্য পত্রের উত্তরে ‘নিঝরিণী" সম্বন্ধে নিম্নমুদ্রিত মন্তব্য রবীন্দ্রনাথ আনন্দবাজার পত্রিকায়** প্ৰকাশ করেন শেষের কবিতায় নায়িকাকে সম্বোধন করে উপন্যাসের নায়ক বলছে, তুমি ঝর্নার মতো, তোমার চিত্তের প্রবাহ স্বচ্ছ, বিশ্বের আনন্দ-আলোক তার মধ্যে অবাধে প্রতিফলিত হয় । তোমার সেই নির্মল হৃদয়ে আমার ছায়া পড়ক, আমার চিন্তা তােমার হৃদয়ে দােলায়িত হতে থাক— তোমার মনে প্রতিবিম্বিত আমার ছবিটিকে বাণী দাও, তোমার প্রেমের যে বাণী নিত্যকালের । অর্থাৎ, তোমার ভালোবাসার চিরন্তনতায় তাকে সার্থক করো, সত্য করো। উপলব্ধিতে আমার অন্তরতম কবি উল্লসিত । পদে পদে তোমার আনন্দের ছটায় আমার প্রাণে করে ভাষার সঞ্চার। আমার মন জাগে তোমার ভালোবাসার প্রবাহবেগে, তার প্রেরণায় আমার যথার্থ স্বরূপকে জানি । তোমাতেই পাই আমার প্রকাশরাপিণী বাণীকে । ' এক কথায় এই কবিতার মর্মাের্থ এই যে, অন্যের আনন্দের মধ্যে নিজেকে যখন প্রতিফলিত দেখি তখন নিজের আত্মোপলব্ধি ও আত্মপ্রকাশ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। -রবীন্দ্রনাথের পত্র । ৩ ভাদ্র ১৩৪৩ ৫২৪ পৃষ্ঠার একবিংশ ছত্রে ‘বিস্মৃতিপ্রদোষে পাণ্ডুলিপিলব্ধ পাঠ । ১৭ আনন্দবাজার পত্রিকা -সম্পাদক-সমীপে । সবিনয় নিবেদন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা বাংলা পাঠ্যগ্রন্থে আমার নিবরিণী কবিতাটি সংকলিত হয়েছে। ছাত্রেরা অনেকে জানাচ্ছেন মানে বোঝা গোল না। প্রত্যেককে স্বতন্ত্র পত্রে বোঝাতে গেলে অপরাধের চেয়ে শান্তি বড়ো হয়ে ওঠে- আর্ডিন্যালের কয়েদীর মতো শেষ মেয়াদ সম্বন্ধেও অনিশ্চিত থাকতে হয়। এজন্য আনন্দবাজার পত্রিকায় বক্তব্যটি পাঠানো গেল, অনুগ্রহপূর্বক প্রকাশ করে আমার দায় লাঘব করবেন । ইতি ৩। ভাদ্র ১৩৪৩ । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ।