পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় bro ধনুষ্টংকারের অত্যগ্ৰ আক্ষেপ হইতে রক্ষা পাইব- আমরা সুস্থ হইব, স্বাভাবিক হইব, সংযত-আত্মসংবৃত হইব এবং নিজের চাপল্যবিহীন মর্যাদার মধ্যে সুপ্রতিষ্ঠ হইয়া পরের উপেক্ষাকে অকাতরে উপেক্ষা করিতে পারিব । -বঙ্গদর্শন । জ্যৈষ্ঠ ১৩১৩

  • দেশনায়ক’ প্ৰবন্ধ বরিশালে প্ৰাদেশিক সমিতির অধিবেশনের যজ্ঞভঙ্গ’ হইবার পর লিখিত । এই সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথ প্রবন্ধের সূচনাতেই লিখিয়াছিলেন

এবারে বরিশাল প্ৰাদেশিক সমিতিতে বাঙালি খুব একটা আঘাত পাইয়াছে, সে কথা সকলেই জানেন । ভাতে মারার চেয়ে হাতে মারাটা উপস্থিতমত গুরুতর বলিয়াই মনে হয় । আইন সাক্ষাৎ হস্তক্ষেপ বলিতে কী বুঝায়, সশরীরে তাহার অভিজ্ঞতালাভ সম্রান্ত ভদ্রলোকদের সদাসর্বদা ঘটে না । এবারে অকস্মাৎ তাহার প্রত্যক্ষ পরিচয় পাইয়া দেশের মান্যগণ্য লোকের চিত্ত উদভ্ৰান্ত হইয়া উঠিয়াছে। একটা প্ৰতিকারের পথ, একটা কাজ করিবার ক্ষেত্র না পাইলে, বেদনা নিজের প্রতি উত্তেজনার সমস্ত বেগ আকর্ষণ করিয়া অসংযত হইয়া অপরিমিতরূপে বড়ো হইয়া উঠে । আমরা জানিতাম, ব্রিটিশরাজ্যে আইন-জিনিসটা ধ্রুব- এইজন্য সকল উপদ্রবের উপর আইনের দোহাই পাড়িতাম- কিন্তু আইন স্বয়ং বিচলিত হইয়া উপদ্রবের আকার ধারণ করিলে ক্ষণকালের জন্যও মনকে শান্ত করিবার কোনো উপায় খুঁজিয়া পাওয়া যায় না । জলের মধ্যে তুফান উঠিলে লোকে ডাঙার দিকে ছোটে— কিন্তু ভূমিকম্পে ডাঙা যখন স্বয়ং দুলিতে আরম্ভ করে, যাহাকে আচল বলিয়া সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত ছিলাম সে যখন চঞ্চল হইতে থাকে, তখনই বিভীষিকা একেবারে বীভৎস হইয়া উঠে । א এইরূপ সাধারণ চঞ্চলতার সময় সৎপরামর্শের সময় নহে। আমিও এই দেশব্যাপী ক্ষোভের সময় স্থিরভাবে মন্ত্রণা দিতে অগ্রসর হইতাম না । কাল- যিনি নীরব, যিনি বিধাতার সুদৃঢ় দক্ষিণহস্ত, যিনি সকল ফলকে ধৈর্যের সহিত পাকাইতে থাকেন, আমিও নিষ্ঠার সহিত তাহারই নিগুঢ় নিয়মের প্রতি নির্ভর করিয়া প্রতীক্ষা করিব স্থির করিয়াছিলাম ; কিন্তু একটি মহান আশ্বাস এই অসময়েও আমাকে উৎসাহিত করিয়াছে । এবারে কর্তৃপুরুষদের সহিত সংঘাতে বাঙালি জয়ী হইয়াছে। এই সংকটকালে বাঙালি যে আমি আদ্য উপস্থিত হইয়াছি। সেদিনকার উপদ্রবে। র্যাহারা উপস্থিত ছিলেন তাহারা সকলেই- আমাদের ছাত্রদলের, যুবকগণের ও নায়কবর্গের অবিচলিত স্থৈর্য দেখিয়া বিস্ময়ান্বিত হইয়াছেন । যে উৎপাত কোনোমতে আশা করা যায় না। তাহা সহসা মাথার উপরে ভাঙিয়া পড়িলে তখনই মানুষের গভীরতর প্রকৃতি আপনাকে অনাবৃতভাবে প্রকাশ করিয়া ফেলে। সেদিন বাঙালি নিজেকে যে রূপে ব্যক্ত করিয়াছে তাহাতে আমাদের লজার কোনো কারণ ঘটে নাই । আপনারা সকলেই জানেন, সেদিন সভাপতিকে লইয়া যখন প্রতিনিধি ও সভাসদগণ মন্ত্রসভার পথে যাত্ৰা করিয়াছিলেন তখন নায়কবর্গের আদেশ অনুসারে যাত্ৰিগণ কেহ একটি যষ্টিও গ্রহণ করেন নাই। এবং পুলিস যখন নিরস্ত্ৰ-তঁহাদের উপর পড়িয়া আঘাতবর্ষণ করিতে আরম্ভ করিল। তখনো নায়কদের উপদেশ স্মরণ করিয়া তাহারা দৃঢ়তার সহিত সমস্ত সহ্য করিয়াছেন । f আমি জানি, এ সম্বন্ধে অবিচারের আশঙ্কা আছে । তেজস্বিন্যবলিপ্ততা মুখরতা বক্তবর্ষশক্তিঃ স্থিরে । তেজস্বিতাকে অহংকার, বাগ্নিতাকে মুখরতা এবং স্থৈৰ্যকে অশক্তি বলিয়া নিন্দুকে নিন্দা