পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԵrՀ8 রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী করে । সময়বিশেষে স্থৈৰ্য অশক্তির লক্ষণরূপে প্ৰকাশ পায় বটে, কিন্তু যখন তাহা বীৰ্য হইতে প্রসূত হয় তখন তাহা বীর্যের শ্রেষ্ঠ লক্ষণ বলিয়াই গণ্য হয়। বরিশালে কর্তৃপক্ষ অসংযমের দ্বারা হাস্যকর কাপুরুষতা এবং আমরা স্থৈার্যের দ্বারা শক্তির গান্তীর্য প্ৰকাশ করিয়াছি, এ বিষয়ে সন্দেহ नारे । এই-যে সাময়িক উৎপাতের দ্বারা আত্মবিস্মৃত না হইয়া সাধারণের মঙ্গলের উদ্দেশে আমরা পূর্বেই আদ্যকার সভায় আমি দুই-একটি কথা বলিতে প্ৰবৃত্ত হইলাম । দেশের হিতসাধন একটা বৃহৎ মঙ্গলের ব্যাপার, নিজের প্রবৃত্তির উপস্থিত চরিতার্থতাসাধন তাহার কাছে নিতান্তই তুচ্ছ। যদি এই বৃহৎ লক্ষ্যটাকে আমাদের হৃদয়ের সম্মুখে যথার্থভাবে ধরিয়া রাখিতে পারি, তবে ক্ষণিক উত্তেজনা, ক্ষুদ্র অন্তৰ্দাহ আমাদিগকে পথভ্ৰষ্ট করিতে পারে rt -বঙ্গদর্শন । জ্যৈষ্ঠ ১৩১৩ বয়কট-আন্দোলন সম্বন্ধে রবীন্দ্ৰনাথ এই প্ৰবন্ধে বলেন“আপনাদের কাছে আমি স্পষ্টই স্বীকার করিতেছি, বাঙালির মুখে বয়কটা শব্দের আস্ফালনে আমি বারংবার মাথা হেঁট করিয়াছি । আমাদের পক্ষে এমন সংকোচজনক কথা। আর নাই। বয়কট দুর্বলের প্রয়াস নহে, ইহা দুর্বলের কলহ। আমরা নিজের মঙ্গলসাধনের উপলক্ষে নিজের ভালো করিলাম না, আজ পরের মন্দ করিবার উৎসাহেই নিজের ভালো করিতে বসিয়াছি, এ কথা মুখে উচ্চারণ করিবার নহে। আমি অনেক বক্তাকে উচ্চৈঃস্বরে বলিতে শুনিয়াছি“আমরা য়ুনিভার্সিটিকে বয়কট করিব।” কেন করিব ? য়ুনিভার্সিটি যদি ভালো জিনিস হয় তবে তাহার সঙ্গে গায়ে পড়িয়া আড়ি করিয়া দেশের অহিত করিবার অধিকার আমাদের কাহারও নাই। যদি য়ুনিভার্সিটি অসম্পূর্ণ হয়, যদি তাহা আমাদিগকে অভীষ্টফল দান না করে, তবে তাহাকে বর্জন করাকে বয়কট করা বলে না । যে মনিব বেতন দেয় না। তাহার কর্ম ছাড়িয়া দেওয়াকে বয়কট করা বলে না । কচ দৈত্যগুরুর আশ্রমে আসিয়া দৈত্যদের উৎপীড়ন ও গুরুর অনিচ্ছাসত্ত্বেও ধৈর্য ও কৌশল অবলম্বন-পূর্বক বিদ্যালাভ করিয়া দেবগণকে জয়ী করিয়াছেন। জাপানও য়ুরোপের আশ্রম হইতে এইরূপ কচের মতোই বিদ্যালাভ করিয়া আজ জয়যুক্ত হইয়াছেন । দেশের যাহাতে ইষ্ট তাহা যেমন করিয়াই হউক সংগ্ৰহ করিতে হইবে, সেজন্য সমস্ত সহ্য করা পৌরুষেরই লক্ষণ- তাহার পর সংগ্ৰহকাৰ্য শেষ হইলে স্বাতন্ত্র্যপ্ৰকাশ করিবার দিন আসিতে পারে । দেশের কাজে রাগারগিটা কখনোই লক্ষ্য হইতে পারে না । দেশের কাজের মাহাত্ম্য যদি আমরা মনের মধ্যে ধারণ করিয়া রাখিতে পারি। তবে তাহারই উদ্দেশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উত্তেজনা আমরা উপেক্ষা করিয়া কর্তব্যপথে স্থির থাকিতে পারিব । আমাদের সৌভাগ্যক্রমে, দেশে স্বদেশী উদযোগ আজ যে এমন ব্যাপ্ত হইয়া পড়িয়াছে, বয়কট তাহার প্রাণ নহে। একটা তুচ্ছ কলহের ভােব কখনোই দেশের অন্তঃকরণকে এমন করিয়া টানিতে পারিত না । এই-যে স্বদেশী উদযোগের আহবানমাত্রে দেশ এক মুহুর্তে সাড়া দিয়াছে, কার্জনের সঙ্গে আড়ি তাহার কারণ হইতেই পারে না ; জগতে কার্জন এতবড়ো লোক নহে ; এই আহবান দেশের শুভবুদ্ধির সিংহদ্বারে আঘাত করিয়াছিল বলিয়াই আজ ইহা এত দ্রুত এমন সমাদর পাইয়াছে। আজ আমরা দেশের কাপড় পরিতেছি। কেবল পরের উপর রাগ করিয়া, এই যদি সত্য হয় তবে দেশের কাপড়ের এতবড়ো অবমাননা আর হইতেই পারে না । আজ আমরা স্বায়ত্তভাবে দেশের শিক্ষার উন্নতিসাধনে প্ৰবৃত্ত হইয়াছি, রাগরাগিই যদি তাহার ভিত্তিভূমি হয় তবে এই বিদ্যালয়ে আমরা জাতীয় আগৌরবের স্মরণস্তম্ভ রচনা করিতেছি । আরো লজ্জার কারণ এই যে, বয়কটের মধ্যে আমরা যে স্পর্ধা প্ৰকাশ করিতেছি। সেই স্পর্ধার 8ê o Va), SY VRG og i