পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজা ও রানী 8 NA জয়সেন । বেশি বোকো না ঠাকুর, যথার্থ কারণ যা জান বলে ফেলো । ত্ৰিবেদী । বাসুদেব ! সকল জিনিসেরই কি যথার্থ কারণ থাকে ? যদি-বা থাকে তো সকল লোকে কি টের পায় ? যারা গোপনে পরামর্শ করেছে তারাই জানে। মন্ত্রী জানে, দেবদত্ত জানে। তা বাপু, তুমি অধিক ভেবাে না, বােধ করি সেখানে যাবামােত্রই যথার্থ কারণ অবিলম্বে টের পাবে। জয়সেন । মন্ত্রী তোমাকে আর কিছুই বলে নি ? ত্ৰিবেদী । নারায়ণ নারায়ণ ! তোমার দিব্য, কিছু বলে নি । মন্ত্রী বললে, “ঠাকুর, যা বললুম তা ছাড়া একটি কথা বোলো না । দেখো, তোমাকে যেন একটুও সন্দেহ না করে । আমি বললুম, “হে রাম ! সন্দেহ কেন করবে ? তবে বলা যায় না । আমি তো সরলচিত্তে বলে যাব, যিনি সন্দগ্ধ হবেন তিনি হবেন ।' হরি হে, তুমিই সত্য । জয়সেন । পুজো উপলক্ষে নিমন্ত্রণ, এ তো সামান্য কথা, এতে সন্দেহ হবার কী কারণ থাকতে পারে ? ত্ৰিবেদী । তোমরা বড়োলোক, তোমাদের এইরকমই হয়। নইলে ‘ধর্মস্য সূক্ষ্মা গতি' বলবে কেন ? যদি তোমাদের কেউ এসে বলে, “আয় তো রে পাষণ্ড, তোর মুণ্ডুটা টান মেরে ছিড়ে ফেলি। আমনি তোমাদের উপলুব্ধ হয় যে, আর যাই হােক লোকটা প্ৰবঞ্চনা করছে না, মুণ্ডুটার উপরে বাস্তবিক তার নজর আছে বটে । কিন্তু যদি কেউ বলে 'এসো তো বাপাধন, আস্তে আস্তে তোমার পিঠে হাত বুলিয়ে দিই, আমনি তোমাদের সন্দেহ হয় । যেন আস্ত মুণ্ডুটা ধরে টান মারার চেয়ে পিঠে হাত বুলিয়ে দেওয়া শক্ত কাজ ! হে ভগবান, যদি রাজা স্পষ্ট করেই বলত- একবার হাতের কাছে এসো তো, তোমাদের এক-একটাকে ধরে রাজ্য থেকে নির্বাসন করে পাঠাই- তা হলে এটা কখনো সন্দেহ করতে না যে, হয়তো-বা। রাজকন্যার সঙ্গে পরিণাম-বন্ধন করবার জন্যেই রাজা ডেকে থাকবেন । কিন্তু রাজা বলেছেন নাকি, ‘হে বন্ধুসকল, রাজদ্বারে শ্মশানে চ যস্তিষ্ঠতি স বান্ধব, অতএব তোমরা পুজো উপলক্ষে এখানে এসে কিঞ্চিৎ ফলাহার করবে”- আমনি তোমাদের সন্দেহ হয়েছে, সে ফলাহারটা কী রকমের না। জানি । হে মধুসূদন ! তা এমনি হয় বটে। বড়োলোকের সামান্য কথায় সন্দেহ হয়, আবার সামান্য লোকের বড়ো কথায় সন্দেহ হয় । জয়সেন । ঠাকুর, তুমি অতি সরল প্রকৃতির লোক । আমার যেটুকু-বা সন্দেহ ছিল, তোমার কথায় সমস্ত ভেঙে গেছে । ত্ৰিবেদী । তা লেহ্য কথা বলেছ। আমি তোমাদের মতো বুদ্ধিমান নই, সকল কথা তলিয়ে বুঝতে পরি নে ; কিন্তু বাবা, সরল— পুরাণ-সংহিতায় যাকে বলে ‘অন্যে পরে কা কথা', অর্থাৎ, অন্যের কথা নিয়ে কখনো থাকি নে । জয়সেন । আর কাকে কাকে তুমি নিমন্ত্রণ করতে বেরিয়েছ ? ত্ৰিবেদী । তোমাদের পোড়া নাম আমার মনে থাকে না । তোমাদের কাশ্মীরী স্বভাব যেমন তোমাদের নামগুলোও ঠিক তেমনি শ্রুতিপৌরুষ। তা এ রাজ্যে তোমাদের গুষ্টির যেখানে যে আছে সকলকেই ডাক পড়েছে। শূলপাণি ! কেউ বাদ যাবে না । জয়সেন । যাও ঠাকুর, এখন বিশ্রাম করো গে । ত্ৰিবেদী । যা হােক, তোমার মন থেকে যে সমন্ত সন্দেহ দূর হয়েছে, মন্ত্রী এ কথা শুনলে ভারি খুশি হবে । মুকুন্দ মুরহর মুরারে ! [প্ৰস্থান জয়সেন । মিহিরগুপ্ত, সমস্ত অবস্থা বুঝলে তো ? এখন গীেরসেন যুধ্যজিৎ উদয়ভাস্কর ওদের কাছে শীঘ্ৰ লোক পাঠাও। বলো, অবিলম্বে সকলে একত্র মিলে একটা পরামর্শ করা আবশ্যক । মিহিরগুপ্ত। যে আজ্ঞা ।