পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8à) R রবীন্দ্র-রচনাবলী নারায়ণী । বিদ্রোহই যদি থেমে গেল তো মহারাজ কার সঙ্গে যুদ্ধ করতে যাবেন ? দেবদত্ত । মহারানীর ভাই কুমারসেনের সঙ্গে । নারায়ণী । হা গা, সে কী কথা ! শ্যালার সঙ্গে যুদ্ধ ? বোধ করি রাজায় রাজায় এইরকম করেই ঠাট্টা চলে । আমরা হলে শুধু কান মলে দিতুম । কী বল ? দেবদত্ত । বড়ো ঠাট্টা নয়। মহারানী কুমারসেনের সাহায্যে জয়সেন ও যুদ্ধাজিৎকে যুদ্ধে বন্দী করে মহারাজের কাছে নিয়ে আসেন । মহারাজ তাকে শিবিরে প্রবেশ করতে দেন নি । নারায়ণী । হা গা, বল কী ! তা, তুমি এতদিন যাও নি কেন ! এ খবর শুনেও বসে আছ ? যাও, যাও, এখনি যাও । আমাদের রানীর মতো আমন সতীলক্ষ্মীকে অপমান করলে ? রাজার শরীরে কলি প্ৰবেশ করেছে । দেবদত্ত । বন্দী বিদ্রোহীরা রাজাকে বলেছে- মহারাজ, আমরা তোমারই প্ৰজা, অপরাধ করে থাকি তুমি শাস্তি দেবে। একজন বিদেশী এসে আমাদের অপমান করবে। এতে তোমাকেই অপমান করা হল— যেন তোমার নিজরাজ্য নিজে শাসন করবার ক্ষমতা নেই। একটা সামান্য যুদ্ধ, এর জনো অমনি কাশ্মীর থেকে সৈন্য এল, এর চেয়ে উপহাস আর কী হতে পারে ! এই শুনে মহারাজ আগুন হয়ে কুমারসেনকে পাচটা ভৎসনা করে এক দূত পাঠিয়ে দেন । কুমারসেন উদ্ধত যুবাপুরুষ, সহ করতে পারবে কেন ? বোধ করি সেও দূতকে দু কথা শুনিয়ে দিয়ে থাকবে । নারায়ণী । তা, বেশ তো— কুমারসেন তো রাজার পর নয়, আপনার লোক, তা কথা চলছিল, বেশ, তাই চলুক । তুমি কাছে না থাকলে রাজার ঘটে কি দুটাে কথাও জোগায় না ? কথা বন্ধ করে অস্ত্ৰ চালাবার দরকার কী বাপু ! ঐ ওতেই তো হার হল । দেবদত্ত । আসল কথা, একটা যুদ্ধ করবার ছুতো । রাজা এখন কিছুতেই যুদ্ধ ছাড়তে পারছেন না ; নানা ছল অন্বেষণ করছেন । রাজাকে সাহস করে দুটাে ভালো কথা বলে এমন বন্ধু কেউ নেই। আমি তো আর থাকতে পারছি নে- আমি চললুম। নারায়ণী । যেতে ইচ্ছে হয় যাও, আমি কিন্তু একলা তোমার ঘরকন্না করতে পারব না তা আমি বলে রাখলুম। এই রইল, তোমার সমস্ত পড়ে রইল। আমি বিবাগী হয়ে বেরিয়ে যাব । দেবদত্ত । রোসো, আগে আমি ফিরে আসি, তার পরে যেয়ো । বল তো আমি থেকে যাই । নারায়ণী । না না, তুমি যাও । আমি কি আর তোমাকে সত্যি থাকতে বলছি ? ওগো, তুমি চলে গেলে আমি একেবারে বুক ফেটে মরব না, সেজন্যে ভেবো না । আমার বেশ চলে যাবে । দেবদত্ত । তা কি আর আমি জানি নে ? মলয়সমীরণ তোমার কিছু করতে পারবে না । বিরহ তো সামান্য, বজ্ৰাঘাতেও তোমার কিছু হয় না ! [প্ৰস্থানোন্মুখ নারায়ণী । হে ঠাকুর, রাজাকে সুবুদ্ধি দাও ঠাকুর ! শীব্র শীঘ্ৰ ফিরিয়ে আনো । দেবদত্ত । এ ঘর ছেড়ে কখনো কোথাও যাই নি । হে ভগবান, এদের সকলের উপর তোমার দৃষ্টি রেখে । [প্ৰস্থান