পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ > ケ রবীন্দ্র-রচনাবলী বসন্ত রায় চমকিয়া কহিয়া উঠিলেন, “রাম রাম রাম ।” উদয়াদিত্য কহিলেন, “‘বলিয়া যাও ।” পাঠান । আমরা কখনো এমন কাজ করি নাই, সুতরাং আপত্তি করাতে তিনি আমাদিগকে নানাপ্রকার ভয় দেখান । সুতরাং বাধ্য হইয়া এই কাজের উদ্দেশ্যে যাত্ৰা করিতে হইল ! পথের মধ্যে আপনার সহিত সাক্ষাৎ হইল । আমার ভাই গ্রামে ডাকাত পড়িয়াছে বলিয়া কঁাদিয়া কাটিয়া আপনার অনুচরদের লইয়া গেলেন । আমার উপর এই কাজের ভার ছিল । কিন্তু মহারাজ, যদিও রাজার আদেশ, তথাপি এমন কাজে আমার কোনোমতেই প্রবৃত্তি হইল না । কারণ, আমাদের কবি বলেন। রাজার আদেশে প্রভুর আদেশে সমস্ত পৃথিবী ধ্বংস করিতে পার । কিন্তু সাবধান, স্বর্গের এক কোণও ধ্বংস করিয়ো না | এখন গরিব, মহারাজের শরণাপন্ন হইল । দেশে ফিরিয়া গেলে আমার সর্বনাশ হইবে । আপনি রক্ষা না করিলে আমার আর উপায় নাই । বলিয়া জোড়হাত করিয়া দাড়াইল । বসন্ত রায় অবাক হইয়া দাড়াইয়া রহিলেন । কিছুক্ষণ পরে পাঠানকে কহিলেন, “তোমাকে একটি পত্র দিতেছি। তুমি রায়গড়ে চলিয়া যাও । আমি সেখানে ফিরিয়া গিয়া তোমার একটা সুবিধা করিয়া দিব ।” উদয়াদিত্য কহিলেন, “দাদামহাশয়, আবার যশোহরে যাইবে নাকি ?” উদয়াদিত অবাক হইয়া কহিলেন, “ সে কী কথা !" বসন্ত রায় ৷ প্ৰতাপ আমার তো আর কেহ নয়, সহস্র অপরাধ করুক, সে আমার নিতান্তই স্নেহভাজন । আমার নিজের কোনো হানি হইবে বলিয়া ভয় করি না । আমি তো ভাই, ভাবসমুদ্রের কুলে দাড়াইয়া । একটা ঢেউ লাগিলেই আমার সমস্ত ফুরাইল । কিন্তু এই পাপকাৰ্য্য করিলে প্ৰতাপের ইহকালের ও পরকালের যে হানি হইত, তাহা ভাবিয়া আমি কি নিশ্চিন্ত থাকিতে পারি ? তাহাকে আলিঙ্গন করিয়া একবার সমস্ত বুঝাইয়া বলি । বলিতে বলিতে বসন্ত রায়ের চোখে জল আসিল । উদয়াদিত্য দুই হস্তে চক্ষু আচ্ছাদন করিলেন । এমন সময় কোলাহল করিতে করিতে বসন্ত রায়ের অনুচরগণ ফিরিয়া আসিল । “মহারাজ কোথায় ? মহারাজ কোথায় ?” “এইখানেই আছি বাপু, আর কোথায় যাইব ?” সকলে সমস্বরে বলিল, “ সে নেড়ে বেটা কোথায় ।” বসন্ত রায় বিব্রত হইয়া মাঝে পড়িয়া কহিলেন, “হা হাঁ বাপু, তোমরা খা সাহেবকে কিছু বলিয়ে না। ’ প্ৰথম । আজ মহারাজ, বড়ো কষ্ট পাইয়াছি, আজ সে — দ্বিতীয় । তুই থাম না রে ; আমি সমস্ত ভালো করিয়া গুছাইয়া বলি। সে পাঠান বেটা আমাদের বরাবর সোজা লইয়া গিয়া অবশেষে বা-হাতি একটা আমবাগানের মধ্যে—— তৃতীয় { না রে সেটা বাবলা বন । চতুর্থ । সেটা বা-হাতি নয়, সেটা ডান-হাতি । দ্বিতীয় । দূর খোপা, সেটা বা-হাতি । চতুৰ্থ । তোর কথাতেই সেটা বা-হাতি ? দ্বিতীয় । বা-হাতি যদি না হইবে তবে সে পুকুরটা— । উদয়াদিত্য | ই-বাপু, সেটা বা-হাতি বলিয়া বোধ হইতেছে, তার পরে বলিয়া যাও । দ্বিতীয় । আজ্ঞা হা । সেই বা-হাতি আমবাগানের মধ্য দিয়া একটা মাঠে লইয়া গেল । কত চযা মাঠ জমি জলা বাশঝাড় পার হইয়া গেলাম, কিন্তু গায়ের নামগন্ধও পাইলাম না । এমনি করিয়া তিন ঘণ্টা ঘুরিয়া গায়ের কাছাকাছি হইতেই সে বেটা যে কোথায় পালাইল খোজ পাইলাম না । প্ৰথম । সে বেটাকে দেখিয়াই আমার ভালো ঠেকে নাই ।