পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বউ-ঠাকরানীর হাট VS \) গিয়া পালাইয়া যাইবার উদযোগ করিতে লাগিল । সুরমা কিছু না বলিয়া তাহার হাত ধরিয়া রহিল। পূর্বকার কথা আর কিছু উত্থাপন না করিয়া কহিল, “বিভা শুনিয়াছিস, দাদামহাশয় আসিয়াছেন ?” বিভা ৷ দাদামহাশয় আসিয়াছেন ? সুরমা । হাঁ । বিভা আগ্রহের সহিত জিজ্ঞাসা করিল, “কখন আসিয়াছেন ?” সুরমা | প্ৰায় চার প্রহর বেলার সময় । বিভা ৷ এখনো যে আমাদের দেখিতে আসিলেন না ? বিভার মনে ঈষৎ অভিমানের উদয় হইল । দাদামহাশয়ের দখল লইয়া বিভা অতিশয় সতর্ক । এমন-কি, একদিন বসন্ত রায় উদয়াদিত্যের সহিত অনেকক্ষণ কথোপকথন করিয়া বিভাকে অন্তঃপুরে তিন দণ্ড অপেক্ষা করাইয়াছিলেন, একেবারেই তাহাব সহিত দেখা করিতে যান নাই, এইজন্য বিভার এমন কষ্ট হইয়াছিল যে, যদিও সে-বিষয়ে সে কিছু বলে নাই বটে। তবু প্ৰসন্নমুখে দাদামহাশয়ের সঙ্গে কথা কহিতে পারে নাই । বসন্ত রায় ঘরে প্রবেশ করিয়াই হাসিতে হাসিতে গান ধরিলেন, “আজ তোমারে দেখতে এলেম অনেক দিনের পরে । ভয় নাইকো সুখে থাকো, অধিকক্ষণ থাকিব নাকো, আসিয়াছি। দু-দণ্ডেরি তরে । দেখব। শুধু মুখখানি । শুনব দুটি মধুর বাণী আড়াল থেকে হাসি দেখে চলে যাব দেশান্তরে ।” গান শুনিয়া বিভা মুখ নত করিয়া হাসিল । তাহার বড়ো আহ্বাদ হইয়াছে । অতটা আহ্বান্দ পাছে ধরা পড়ে বলিয়া বিব্রত হইয়া পড়িয়াছে । সুরমা বিভার মুখ তুলিয়া ধরিয়া কহিল, “দাদামহাশয়, বিভার হাসি দেখিবার জন্য তো আড়ালে शक्षेऽङ छ्छेळल ना ।।' বসন্ত রায় । না, বিভা মনে করিল, নিতান্তই না হাসিলে যদি বুড়া বিদায় না হয়, তবে না-হয় একটু হাসি ৷৷ ও ডাকিনীর মতলব আমি বেশ বুঝি, আমাকে তাড়াইবার ফন্দি । কিন্তু শীঘ্ৰ তাহা হইতেছে না । আসিলাম যদি তো ভালো করিয়া জ্বালাইয়া যাইব, আবার যতদিন না দেখা হয় মনে থাকিবে । সুরমা হাসিয়া কহিল, “দেখে দাদামহাশয়, বিভা আমার কানে কানে বলিল যে, মনে রাখনোই যদি অভিপ্ৰায় হয়, তবে যা জ্বালাইয়াছ তাঁহাই যথেষ্ট হইয়াছে, আর নূতন করিয়া জ্বালাইতে হইবে না ।” কথাটা শুনিয়া বসন্ত রায়ের বড়োই আমোদ বোধ হইল । তিনি হাসিতে লাগিলেন । বিভা অপ্ৰতিভ হইয়া বলিয়া উঠিল, “না, আমি কখনো ও-কথা বলি নাই । আমি কোনো কথাই কই নাই ।” সুরমা কহিল, “দাদামহাশয়, তোমার মনস্কামনা তো পূর্ণ হইল ! তুমি হাসি দেখিতে চাহিলে তাহা দেখিলে, কথা শুনিতে চাহিয়াছিলে তাহাও শুনাইলাম, তবে এখন দেশান্তরে যাও।” বসন্ত রায় । না ভাই, তাহা পারিলাম না । আমি গোটা-পনেরো গান ও একমাথা পাকা চুল আনিয়াছি, সেগুলি সমস্ত নিকাশ না করিয়া যাইতে পারি ୩ | বিভা আর থাকিতে পারিল না, হাসিয়া উঠিল, কহিল, “তোমার আধমাথা বৈ চুল নাই যে দাদামহাশয় ।”