পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বউ-ঠাকুরানীর হাট ماN2( لا তখন রামমোহন সেখান হইতে দূরে চলিয়া গেল । অপমান করিবার জন্য বহুদিন ধরিয়া বিস্তৃত আয়োজন করিয়াছেন। অভিমানে তিনি নিতান্ত স্ফীত হইয়া উঠিয়াছেন । স্থির করিয়াছেন, প্রতাপাদিত্যের কাছে এমন মূর্তি ধারণ করিবেন, যাহাতে প্রতাপাদিত্য বুঝিতে পারেন তাহার জামাতা কতবড়ো লোক । যখন প্রতাপাদিত্যের সহিত রামচন্দ্র রায়ের দেখা হইল, তখন প্রতাপাদিত্য রাজকক্ষে তাহার মন্ত্রীর সহিত উপবিষ্ট ছিলেন । প্রতাপাদিত্যকে দেখিবামাত্রই রামচন্দ্ৰ নতমুখে ধীরে ধীরে আসিয়া তাহাকে প্ৰণাম করিলেন । প্রতাপাদিত্য কিছুমাত্র উল্লাস বা ব্যস্তভােব প্রকাশ না করিয়া শান্তভাবে কহিলেন “এসো, ভালো আছ তো ?” রামচন্দ্ৰ মৃদুস্বরে কহিলেন, “আজ্ঞা হা ।” মন্ত্রীর দিকে চাহিয়া প্রতাপাদিত্য কহিলেন, “ভাঙামাথি পরগনার তহসিলদারের নামে যে অভিযোগ মন্ত্রী দীর্ঘ এক কাগজ বাহির করিয়া রাজার হাতে দিলেন, রাজা পড়িতে লাগিলেন । কিয়দূর পড়িয়া একবার চোখ তুলিয়া জামাতাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “গত বৎসরের মতো এবার তো তোমাদের ওখানে বন্যা হয় নাই ?” রামচন্দ্র । আজ্ঞা না । আশ্বিন মাসে একবার জলবৃদ্ধি— প্রতাপাদিত্য । মন্ত্রী, এ চিঠিখানার অবশ্য একটা নকল রাখা হইয়াছে ? বলিয়া আবার পড়িতে লাগিলেন । পড়া শেষ করিয়া জামাতাকে কহিলেন, “যাও বাপু, আন্তঃপুরে य७ |” রামচন্দ্ৰ ধীরে ধীরে উঠিলেন । তিনি বুঝিতে পারিয়াছেন, তাহার অপেক্ষা প্রতাপাদিত্য কিসে বডো । নবম পরিচ্ছেদ রামমোহন মাল যখন অন্তঃপুরে আসিয়া বিভাকে প্ৰণাম করিয়া কহিল, “মা, তোমায় একবার দেখিতে আসিলাম ।” তখন বিভার মনে বড়ো আহলাদ হইল । রামমোহনকে সে বড়ো ভালোবাসিত । কুটুম্বিতার নানাবিধ কাৰ্যভার বহন করিয়া রামমোহন প্ৰায় মাঝে মাঝে চন্দ্ৰদ্বীপ হইতে যশোহরে আসিত । কোনো আবশ্যক না থাকিলেও অবসর পাইলে সে এক-একবার বিভাকে দেখিতে আসিত । রামমোহনকে বিভা কিছুমাত্র লজ্জা করিত না । বৃদ্ধ বলিষ্ঠ দীর্ঘ রামমোহন যখন “মা” বলিয়া আসিয়া দাড়াইত তখন তাহার মধ্যে এমন একটা বিশুদ্ধ সরল অলংকারশূন্য স্নেহের ভাব থাকিত যে, বিভা তাহার কাছে আপনাকে নিতান্ত বালিকা মনে করিত । বিভা তাহাকে কহিল, “মোহন, তুই এতদিন আসিস নাই কেন ?” রামমোহন কহিল, “তা মা, “কুপুত্র যদি বা হয়, কুমাতা কখনো নয়।” তুমি কোন আমাকে মনে করিলে । আমি মনে মনে কহিলাম, “মা না ডাকিলে আমি যাব না, দেখি কতদিনে তঁর মনে পড়ে ।” তা কই, একবারও তো মনে পড়িল না !” বিভা ভারি মুশকিলে পড়িল । সে কোন ডাকে নাই, তাহা ভালো করিয়া বলিতে পারিল না । তাহা ছাড়া, ডাকে নাই বলিয়া যে মনে করে নাই, এই কথাটার মধ্যে এক জায়গায় কোথায় যুক্তির দোষ আছে বলিয়া মনে হইতেছে, অথচ ভালো করিয়া বুঝাইয়া বলিতে পারিতেছে না । বিজ্ঞার মুশকিল দেখিয়া রামমােহন হাসিয়া কহিল, “না মা, অবসর পাই নাই বলিয়া আসিতে পারি "ן