পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বউ-ঠাকুরানীর হাট Wり8° মঙ্গলা মাতঙ্গিনীকে জিজ্ঞাসা করিল, “বলি রাজবাটীর খবর কী ?” মাতঙ্গিনী হাত উলটাইয়া কহিল, “সে-সব কথায় আমাদের কাজ কী ভাই ?” মঙ্গলা কহিল, “ঠিক কথা । ঠিক কথা ।” মঙ্গলার যে এ-বিষয়ে সহসা মতের এতটা ঐক্য হইয়া যাইবে, তাহা মাতঙ্গিনী আশা করে নাই । সে কিঞ্চিৎ ফাপরে পড়িয়া কহিল, “তা তোমাকে বলিতে দোষ নাই। তবে আজ আমার বড়ো সময় নাই, আর-একদিন সমস্ত বলিব ।” বলিয়া বসিয়া রহিল । মঙ্গলা কহিল, “তা বেশ, আর-একদিন শুনা যাইবে ।” মাতঙ্গিনী অধীর হইয়া পড়িল, কহিল, “তবে আমি যাই ভাই । দেরি করিলাম বলিয়া আবার কত বকুনি খাইতে হইবে । দেখো ভাই, সেদিন আমাদের ওখানে রাজার জামাই আসিয়াছিলেন, তা তিনি মঙ্গলা কহিল, “সত্যি নাকি ? বটে । কেন বলো দেখি ? তাই বলি, মাতঙ্গ না হইলে আমাকে ভিতরকার খবর কেহ দিতে পারে না ।” মাতঙ্গ প্ৰফুল্ল হইয়া কহিল, “আসল কথা কী জান ? আমাদের যে বউ-ঠাকরুনটি আছেন, তিনি দুটি চক্ষে কাহারও ভালো দেখিতে পারেন না । তিনি কি মন্তর জানেন, সোয়ামিকে একেবারে ভেড়ার মতন করিয়া রাখিয়াছেন, তিনি- না ভাই, কাজ নাই, কে কোথা দিয়া শুনিবে। আর বলিবে মাতঙ্গ রাজবাড়ির কথা বাহিরে বলিয়া বেড়ায় ।” মঙ্গলা আর কৌতুহল সামলাইতে পারিল না ; যদিও সে জানিত, আর খানিকক্ষণ চুপ করিয়া থাকিলে মাতঙ্গ আপনি সমস্ত বলিবে, তবু তাহার বিলম্ব সহিল না, কহিল, “এখানে কোনো লোক নাই নাতনী । আর আপনা-আপনির মধ্যে কথা, ইহাতে আর দোষ কী ? তা তোমাদের বউ-ঠাকরুন কী রাতারাতিই দিদি-ঠাকরুনকে ফেলিয়া চলিয়া গেছেন । দিদি-ঠাকরুন তো কাদিয়া কাটিয়া অনাত্ত করিতেছেন । মহারাজা খাপা হইয়া উঠিয়াছেন, তিনি বউ-ঠাকরুনকে শ্ৰীপুরে বাপের বাড়িতে পাঠাইতে চান । ঐ দেখো ভাই, তোমার সকল কথাতেই হাসি । ইহাতে হাসিবার কী পাইলে ? তোমার যে আর হাসি ধরে না ।” রামচন্দ্র রায়ের পলায়নবার্তার যথার্থ কারণ রাজবাটীর প্রত্যেক দাসদাসী সঠিক অবগত ছিল, কিন্তু কাহারও সহিত কাহারও কথার ঐক্য ছিল না । মঙ্গলা কহিল, “তোমাদের মা-ঠাকরুনকে বলিয়ো যে, বউ-ঠাকরুনকে শীঘ্ৰ বাপের বাড়ি পাঠাইয়া কাজ নাই। মঙ্গলা এমন ওষুধ দিতে পারে যাহাতে যুবরাজের মন তাহার উপর হইতে একেবারে চলিয়া যায় ।” বলিয়া সে খল খল করিয়া হাসিতে লাগিল । মাতঙ্গ কহিল, “তা বেশ কথা ।” “সে কথায় কাজ কী । এক দণ্ড না দেখিলে থাকিতে পারেন না । যুবরাজকে ‘তু’ বলিয়া ডাকিলেই আসেন ।” “আচ্ছা আমি ওষুধ দিব । দিনের বেলাও কি যুবরাজ র্তাহার কাছেই থাকেন ?” " | ደ* মঙ্গলা কহিল, “ও মা কী হইবে । তা সে যুবরাজকে কী বলে, কী করে, দেখিয়াছিস ?” “না ভাই, তাহা দেখি নাই ।” “আমাকে একবার রাজবাটীতে লইয়া যাইতে পারিস, আমি তাহা হইলে একবার দেখিয়া আসি ।” মাতঙ্গ কহিল, “কোন ভাই, তোমার এত মাথাব্যথা কেন ?” মঙ্গলা কহিল, “বলি তা নয়। একবার দেখিলেই বুঝিতে পারিব, কী মন্ত্রে সে বশ করিয়াছে, আমার भध थॉदि कि नां ।”