পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সূচনা রাজর্ষি সম্বন্ধে কিছু বলবার জন্যে অনুরোধ পেয়েছি। বলবার বিশেষ কিছু নেই। এর প্রধান বক্তব্য এই যে, এ আমার স্বপ্নলব্ধ উপন্যাস । বালক পত্রের সম্পাদিক আমাকে ঐ মাসিকের পাতে নিয়মিত পরিবেশনের কাজে লাগিয়ে দিয়েছিলেন । তার ফল হল এই যে, প্রায় একমাত্র আমিই হলুম তার ভোজের জোগানদার । একটু সময় পেলেই মনটা কী লিখি “কী লিখি করতে থাকে । রাজনারায়ণ বাবু ছিলেন দেওঘরে । তাকে দেখতে যাব বলে বেরনো গেল। রাত্রে গাড়ির আলোটা বিশ্রামের ব্যাঘাত করবে বলে তার নিচেকার আবরণটা টেনে দিলুম। অ্যাংলোইণ্ডিয়ান সহযাত্রীর মন তাতে প্ৰসন্ন হল না, ঢাকা খুলে দিলেন । জাগা অনিবাৰ্য ভেবে একটা গল্পের প্লট মনে আনতে চেষ্টা করলুম। ঘুম এসে গেল। স্বপ্নে দেখলুম— একটা পাথরের মন্দির । ছােটাে মেয়েকে নিয়ে বাপ এসেছেন পুজো দিতে । সাদাপাথরের সিঁড়ির উপর দিয়ে বলির রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। দেখে মেয়েটির মুখে কী ভয় ! কী বেদনা ! বাপকে সে বার বার করুণস্বরে বলতে লাগল, বাবা, এত রক্ত কেন ! বাপ কোনােমতে মেয়ের মুখ চাপা দিতে চায়, মেয়ে তখন নিজের আঁচল দিয়ে রক্ত মুছতে লাগল। জেগে উঠেই বললুম, গল্প পাওয়া গেল। এই স্বপ্নের বিবরণ ‘জীবনস্মৃতি’তে পূর্বেই লিখেছি, পুনরুক্তি করতে হল। আসল গল্পটা ছিল প্রেমের অহিংস পূজার সঙ্গে হিংস্ৰ শক্তিপূজার বিরোধ। কিন্তু মাসিক পত্রের পেটুক দাবি সাহিত্যের বৈধ ক্ষুধার মাপে পরিমিত হতে চায় না | ব্যঞ্জনের পদসংখ্যা বাড়িয়ে চলতে হল । বস্তুত উপন্যাসটি সমাপ্ত হয়েছে পঞ্চদশ পরিচ্ছেদে । ফসল-খেতের যেখানে কিনারা সেদিকটাতে চাষ পড়ে নি,আগাছায় জঙ্গল হয়ে উঠেছে। সাময়িক পত্রের অবিবেচনায় প্রায়ই লেখনীর জাত নষ্ট হয় । বিশেষ যেখানে শিশু পাঠকই লক্ষ্য সেখানে বাজে বাচালতার সংকোচ থাকে না । অল্পবয়সের ছেলেদেরও সম্মান রাখার দরকার আছে, এ কথা শিশুসাহিত্য-লেখকেরা প্রায় ভোলেন । সাহিত্যরচনায় গুণী-লেখনীর সতর্কতা যদি না থাকে, যদি সে রচনা বিনা লজায় অকিঞ্চিৎকর হয়ে ওঠে, তবে সেটা অস্বাস্থ্যকর হবেই, বিশেষত ছেলেদের পাকযন্ত্রের পক্ষে । দুধের বদলে পিঠলি-গোলা যদি ব্যাবসার খাতিরে চালাতেই হয়, তবে সে ফাকি বরঞ্চ চালানো যেতে পারে বয়স্কদের পাত্রে, তাতে তাদের রুচির পরীক্ষা হবে ; কিন্তু ছেলেদের ভোগে নৈব্য নৈব চ | Ko S og a